প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

একাত্তরে গণহত্যার স্বীকৃতি : কংগ্রেসে উত্থাপিত রেজ্যুলেশন সংশোধনের দাবি

একাত্তরে গণহত্যার স্বীকৃতি : কংগ্রেসে উত্থাপিত রেজ্যুলেশন সংশোধনের দাবি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাক হায়েনা ও তাদের দোসরেরা বাংলাদেশে যে গণহত্যা চালিয়েছে তার স্বীকৃতি প্রদানের জন্য কংগ্রেসে উত্থাপিত রেজ্যুলেশনে (এইচআর ১৪৩০, ১৪ অক্টোবর-২২) বাঙালি থেকে হিন্দুদের আলাদা করার প্রচেষ্টা রয়েছে।

অর্থাৎ পাকিস্তানি হায়েনারা হিন্দুস্থানের হিন্দুদেরও টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে মনে করার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে ওই রেজ্যুলেশনে। এর ফলে রেজ্যুলেশনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকে বাঙালিদের মধ্যে বিভক্তির কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকতে পারে, যা নিকট ভবিষ্যতে একাত্তরের গণহত্যার প্রসঙ্গটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া দূরের কথা, তা পাক-ভারত যুদ্ধের ডামাডোলে মিলিয়ে যাবার শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠতে পারে।

এহেন পরিস্থিতির আশঙ্কায় এবং রেজ্যুলেশনের ভাষা সংশোধনের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বেশ কটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ওই রেজ্যুলেশনের কো-স্পন্সর কংগ্রেসম্যান রো খান্নার ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট অফিসের সঙ্গে এক টেলি-কনফারেন্সে মিলিত হন। সমন্বয় করেন ‘বাংলাদেশি আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রগ্রেস’ (বাপ) এর নওরীন আকতার।

উল্লেখ্য, মার্কিন কংগ্রেসে প্রগতিশীল গ্রুপের অন্যতম ও খেটে খাওয়া আমেরিকানদের অধিকার-মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন হিসেবে পরিচিত কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-করটেজের ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট ডাইরেক্টর হচ্ছেন নওরীন আকতার। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র চ্যাপ্টারের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটসের রিয়া চক্রবর্তী,বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রকৌশলী কামাল আহমেদ, মুসলিম ভয়েসেস কোয়ালিশনের তাসনুভা খান এবং ইলহান ক্যাগরিল, নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক কোয়ালিশনের কাওসার জামাল, বাংলাদেশি আমেরিকান ফর পলিটিক্যাল প্রগ্রেস’র (বাপ) মৌমিতা আহমেদ, মুসলিম ফর প্রগ্রেসের সায়মা খন্দকার, ফারহানা ইসলাম এবং হ্যালা ওবায়েদ, কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন্স’র রবার্ট ম্যাককো।

সকলেই উল্লেখ করেছেন যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালিদের স্বাধিকারের এবং সেখানে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান সকলেই ছিলেন বাঙালি। বাঙালি হিসেবেই তারা পাক হায়েনাদের আক্রমণে ছিলেন। হত্যাযজ্ঞের অসহায় শিকার হয়েছেন। সম্ভ্রমহানির টার্গেট ছিলেন বাঙালি নারীরা। বাড়ি-ঘর লুণ্ঠনের পর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বাঙালি হিসেবে। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী ইত্যাদির বালাই ছিল না। কারও গায়ে চিহ্নও ছিল না কে হিন্দু আর কে মুসলমান। ৩০ লাখ শহীদের মধ্যেও হিন্দু-মুসলমান একাকার ছিলেন। এমনকি পাক হায়েনাদের রুখে দেওয়ার যুদ্ধেও সকলে ছিলেন পরস্পরের সহযোগী। বিষয়টি স্পর্শকাতরই শুধু নয়, এটি রেজ্যুলেশনের মৌলিক ইস্যুকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই সকলে অনুরোধ জানিয়েছেন রেজ্যুলেশন ফ্লোরে যাবার আগে যেন সংশোধন করা হয়।

কংগ্রেসম্যানের প্রতিনিধিত্ব করেন চিফ অব স্টাফ জিয়ো সাবা, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ক্যাটে গোওল্ড এবং ডিস্ট্রিক্ট ডিরেক্টর টম পাউক। তারা সকলের বক্তব্য/মন্তব্য-অভিমত গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনেছেন।

উল্লেখ্য, রেজ্যুলেশনটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরী মিক্স’র অফিসে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর যদি অধিবেশন বসে তাহলে হয়তো এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অন্যথায় জানুয়ারিতে নতুন কংগ্রেসের আওতায় রেজ্যুলেশনটি পুনরায় উত্থাপিত না হলে তা আপনা-আপনি বাদ পড়ে যাবে। অর্থাৎ তা সংশোধনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এবং এজন্য উভয় কংগ্রেসম্যানের অফিসে দেন-দরবার করা জরুরি।

প্রসঙ্গত, উল্লিখিত টেলি-কনফারেন্সের আগে ওহাইয়োর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিভ স্যাবোটের অফিসেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। কাউকে পাওয়া যায়নি এ কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমক্র্যাট ভারতীয় আমেরিকান রো খান্নার অফিসের কর্মকর্তারা ইস্যুটিকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।

 



সংবাদটি শেয়ার করুন