দেশের সংবাদ ফিচার্ড

‘এত ক্ষুধা একজন রাজনৈতিক নেতার, আমরা তো তিন দিনও খাই নাই’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আপ্যায়ন

‘এত ক্ষুধা একজন রাজনৈতিক নেতার, আমরা তো তিন দিনও খাই নাই’

পুলিশের মারধরের শিকার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আপ্যায়নের পর ছবি প্রকাশে দোষের কিছু দেখছেন না আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি উল্টো গয়েশ্বরকে প্রশ্ন রেখে বলেন, গয়েশ্বর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে ‘কেন খেলেন’।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সোমবার তিনি বলেন, ‘উনি কেন খাইলেন এটা জিজ্ঞেস করেন। এত ক্ষুধা রাজনীতিক নেতার? কিসের রাজনীতিক? তিন দিনও খাইনি আমরা একসাথে।’
কিছুটা হাস্যরস করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তো হয়েছে কি? যা সত্য সেটা আসছে, অসুবিধা কি? যেটা সত্য এটা আসছে, সেটা তো আর কিছু বলার নাই। কেউ সাজিয়ে দিয়েছে কিনা সেটা ভিন্ন খবর। উনি (গয়েশ্বর) তো রুই মাছ দিয়ে ভালো করেই খাইছেন।”

গোয়েন্দা প্রধানের দপ্তরে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কিনা, এ প্রশ্নে কাদের বলেন, আন্দোলনে হয়ত উনার ক্ষুধা লাগছে। ক্ষুধা লাগছে উনি খেয়েছেন। আমানরে (আমান উল্লাহ আমান) সৌজন্য, একজন রাজনৈতিক কর্মী তার কাছে নেত্রী কিছু ফল পাঠিয়েছেন, এটি পাঠাতেই পারে। সে একটু অসুস্থ হইছেন ফল পাঠানো নিয়ম, রাজনীতিতে সৌজন্যতা তো বিদায় নেবে না।

সাংবাদিক আবারও জানতে চান, একজনকে খাওয়ানোর পর তার ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পরে কিনা। জবাবে কাদের বলেন, এটা কি রাজনৈতিক লোকেরা করছে? আরে গোয়েন্দাদের কাজই তো এসব। গোয়েন্দা গোয়েন্দাই। সে তো তথ্য নিয়ে বের করার জন্য বসে আছে। মতবিনিময় সভায় নিজের দুই পাশে বসা দুই নেতাকে দেখিয়ে বলেন, বিপ্লব বড়ুয়া আর আরাফাত গিয়ে তো করে নাই।

‘এটা গোয়েন্দাদের বিষয়… এটা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা করেননি। বিপ্লব বা আরাফাত এটা করেননি।’

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে এক দফার আন্দোলনে নামা বিএনপি গত শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থানের কর্মসূচি দিয়েছিল।

নয়া বাজারে সেই কর্মসূচি পালনে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল গয়েশ্বর রায়ের। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধায় নয়া বাজারে দাঁড়াতে না পারার পর ধোলাইখালে তারা সড়কে নামলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে।

সংঘর্ষে আহত অবস্থায় গয়েশ্বরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। চার ঘণ্টা পর তাকে নয়াপল্টনে দিয়ে আসে পুলিশ।

এর মধ্যেই ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর রশীদের সঙ্গে গয়েশ্বরের মধ্যাহ্ন ভোজের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘ডিবি প্রধানের (অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ) অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সৌজন্যতা রক্ষায় হারুনের জন্য বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার থেকে ভাতসহ হালকা সবজি ও রুই মাছের একটি টুকরা গ্রহণ করি।’বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, ‘ডিবি প্রধান আমাকে অনুরোধ করেছেন, রুই মাছটি তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। আর যেহেতু ডিবি প্রধান নিজেই খাবারটি খাচ্ছেন, তখন আমার মনে হলো, এটা যদি গ্রহণ করি, তাহলে সমস্যা হবে না।’ তখনকার পরিস্থিতিতে খাবার না খেয়ে উপায় ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ডিবি অফিস বিষ দিলে বিষও খেতে হয়।

ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যারা এ কাজটি করেছে, এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচায়ক। এক ধরনের তামাশাপূর্ণ নাটক। এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে, আমরা হা-ভাতে? ভিক্ষা করে খাই? গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোঁটা দেওয়া।’ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো তা ওই রকমই। আমার বাড়িতে তো বিভিন্ন সময় অনেক লোক খায়। এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু এই খাবারের ছবি উঠিয়ে কি আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেব? এটা কি আমার জন্য ভালো হবে।’ -যুগান্তর

 

সংবাদটি শেয়ার করুন