সাহিত্য ও কবিতা

এ সপ্তাহের গল্প ||||  ইন্ডিপিন্ডি || দিলরুবা আহমেদ


এ সপ্তাহের গল্প ||||  ইন্ডিপিন্ডি || দিলরুবা আহমেদ

এই আমেরিকায় সম্ভবত আমার দেখা সবচেয়ে অবাক করা অদ্ভুত ধরনের, আবার সেই সঙ্গে বেশ সুন্দরী মেয়েটির নাম মিন্ডি। ওর নামটা আসলে মিঠাই, তবে সে সবাইকে বলে তার নাম মিন্ডি। আমার মা ডাকবে মিঠাইমন্ড ইন্ডিপিন্ডি। ইনডিপেনডেন্ট তাই ইন্ডিপিন্ডি। বাংলাদেশ থেকে ফোনে আমার মা জানতে চাইবেন মিঠাইমন্ড আর নতুন করে কী কী লণ্ডভণ্ড করেছে রে। আমি মেয়েটির পক্ষে সাফাইতে বলি, ও ভণ্ড না, লন্ঠনের আলোয় যা যতটুকু দেখছে তাই করছে। আমার মা শুনে হাসে, বলে ওকে কে বলেছে এমন আউল-ফাউল হারিকেন হাতে নিতে। আমার বর হেসে উঠে বলবে, মানুষের জন্য তোমার মাইন্ড ব্লোইং দরদ স্ট্যান্ডবাই রাখো, তাতে দরকার মতন আমরা সবাই নেয়ে নিতে পারব, এবং তাতে তুমিও খণ্ডাতে পারবে সবার সব কাণ্ডফাণ্ডর পুরা কারখানা।

কিন্তু দরদ না করে করিই-বা কি আমি!

মেয়েটি একা থাকে, আমার সামনের অ্যাপার্টমেন্টের ওপরের তলাতে থাকে। বেশ সুন্দর সাজে। সুন্দর সুন্দর কাপড় পরে। বয়সই তো এখন এমন, সাজবার, গাইবার, ছুটবার। বয়স হবে এই ২৭-২৮, হয়তোবা একটু বেশিও হতে পারে। দেখতে এমনই মনে হয়। আসলে কতটা হয়েছে বয়স, জানতে চাওয়া হয়নি কখনোই। বিয়ে করেনি। বাসাতে সে ছাড়া একটি বিড়াল আছে। সাদা পশমওয়ালা বিড়াল। এই শহরের সব খাবারের দোকানই মনে হয় সে চেনে। প্রায়ই দেখি বিভিন্ন খাবারের দোকানের টেইক হোম প্যাকেট বা ডেলিভারি বক্স তার ঘরে।। ফোন করে বা অ্যাপসের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করে। সম্ভবত প্রতিদিনই করে। চুলা আদৌ জীবনে জ্বালিয়েছে কি না, সন্দেহ আছে। আমার একটু অবাকই লাগে জীবনেও রাঁধে না এ কেমন করে সম্ভব হয়! কিন্তু সে সম্ভব করেছে। আমি রাঁধলে এটা-ওটা পাঠাই। বলে তো মজা করে খেয়েছি। কে জানে খায় না ফেলে। আমার থেকে সে বেশ বেশ বেশ অনেকটা ছোট, সেহেতু তাই তাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে আদর করে যাওয়াই আমার কর্তব্য বলে ধরে নিয়ে এই পরদেশে মমতা দিয়ে জড়িয়ে থাকাতেই আনন্দ আমার। ভুল ধরি না। অভিযোগ করি না। অভাববোধ করি না তাকে ভালোবাসার যথেষ্ট কারণেও। যদিও বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, বেশি জড়াজড়ি তার পছন্দ না, না পছন্দ, সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। সে স্পেস চায়। আর ওই স্পেস চাইতে গিয়েই তার পরিবার থেকে দূরে। ওই যে বিদেশি আমেরিকান বাচ্চারা ১৮ বছর হতেই ঘর ছাড়ে, তাই দেখে দেখে এই দেশে এসে আমাদের দেশীয় কিছু বাচ্চারও শখ হয়েছে ১৮ হতেই উড়তে। এই মেয়ে অবশ্য বলেছে ২১ বছরে বাসা ছেড়েছে। মা অনেক কেঁদেছে। বাঙালি সমাজের দোহাই দিয়েছে। বাঙালি সমাজে ঢি ঢি পড়ে যাবে, কত কি বলেছে, কিন্তু সে অনড় অনূঢ়া। কঠোর। বেরিয়েছে। আমাকে বলেছে থাকা যায় নাকি এতজন একসঙ্গে। বাবা মা, দুই ভাই, নানি-নানা। আরো কতজন আসে যায়, যেমন দাদি আসেন মাঝেমধ্যে, চাচারাও আসেন, সবাই ইমিগ্রান্ট হয়ে উঠে এসেছেন এই দেশে। মিঠাই বলে সে এখন আরামে সানন্দে শান্তিতে আছে, পয়সাও নিজের মতন করে খরচ করছে, বাপের ঘাড়ে থাকছে না, খাচ্ছে না। মাকে বুঝিয়েছে সে অনেকবার করে যে তার ছোট চাচার দুই মেয়ে, মায়ের ভাষায় যারা ওই ধিংগি ধিংগি মেয়ে, তারা যে একসঙ্গে থাকছে বাপ-মায়ের সঙ্গে কোনো ছেলে ওদের বিয়ে তো দূরের কথা, কাছেও নাকি আসবে না বন্ধু হতে। নিজেকে যে মানুষ একা চালাতে পারে না, সে সংসার চালাবে কীভাবে। ইন্ডিপেন্ড লাইফ লিড করতে দিতে হয়। করতে হয়। এটা ইনডিভিচুয়ালিস্টক সোসাইটি। যার যার তার তার। ওই সবই মিঠায়ের কথা, লাগাতার একটানে বলে শেষ করা তার কথা।  আমি সব শুনি আর কখনো ডানে কখনো বায়ে কখনো সামনে ঝুঁকাই আমার মাথাটা। বলি, না এত করেও তো কই বর পেলে না এখনো! ওই ধিংগি ধিংগি দুটোকেই বরং দেশি ছেলেরা সাহস বেশি করবে বিয়ে করতে। ফিরিংগি ওদের কাছে তুমি বা অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া বিপথগামী একজন। বলি না মুখে। কেবল ঘাড় কাতে ব্যস্ত থাকি, ডানে বা বাঁয়ে।  মিঠাইয়ের মায়ের বাসাতেও আমার যাওয়া হয়েছে। আন্টি দুদিন ছিলেন মেয়ের বাসায়। তখন আমার সঙ্গে বেশ ভালোই ভাব হয়েছে। গল্প করেছি প্রচুর। আমি দেশে বড় হয়ে এসেছি বলে যতটা ওনার কাছে যেতে পেরেছি, মনে হয়েছে ওনার নিজের মেয়েও ততটা না। ওরা মা-মেয়ে যেন কাছাকাছি নেই। দুজন দুই সংস্কৃতির বাসিন্দা। মা-টি বলেছে আমাকে, দেখেছ কখনো খুব ঠাণ্ডা পানিতে চুপচাপ কাউকে বসে থাকতে হাসিমুখে। আমি তাই। মরে যাচ্ছি মরমে, তারপরও সয়ে যাচ্ছি, বলো তো কেমনে সয় আমার মেয়ে বাসা ছেড়ে অবিবাহিত অবস্থায় আলাদা বাসা নিয়ে উঠে এসেছে, তাও আবার একই শহরে। বিয়ে করে চলে গেলেই তো ঠিক ছিল। কিন্তু ওর কাছে এটাই ঠিক মনে হচ্ছে।  উনি শোকে জরজর ঝরঝর। কাঁদেনও হাউমাউ করে। আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকি। কিছু বলি না।

উনি ওনার কথা বলে যান, বলেন বাবার ভিটে ফেলে বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে এক বাসায় থাকবে, সেটাতেই ওরা মজা পায়। ভালো কথা। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি তো তা নয়। এই কথা বললে মেয়ে বলে, এই আমেরিকান সংস্কৃতিই এখন ওর সংস্কৃতি। হয়তোবা এইটাই ওদের কাছে সত্যি, কিন্তু তাইবা কি করে গ্রহণীয় হয় আমাদের কাছে । এ তো বড় নিমম নিষ্ঠুর সত্যি।  সবই  উনি বোঝেন, আমি তাই চুপ। তারপরেও একসময় বলি, সময়ের সন্ধিক্ষণে বন্দী পাখি ওরাও, আমাদেরই মতন আমরা যেমন ওদেরটা মানতে পারছি না ওরাও আমাদেরটা মানতে অপারগ। ওরা ওদিকেরও না এদিকেরও না। যেতে মানা আসতেও চায় না। যাবে কোথায় তাও যেন জানে না। উনি মাথা চাপড়ান।   দুদিন আগের এক সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝে মিঠাই ছুটে ছুটে চলে গেল অফিসে। একবার বলতে চাইলাম জ্বর বাধবে, ঢেকে যাও বা পরে যাও। বললাম না। ওদের একার চলার জগতে নাক না গলানোই ভালো, এটাই প্রেফারড। আমি তো দূর ছাই এক প্রতিবেশী, পড়শি মাত্র। ওদের মা বলতে এলেও ভ্রূ কুঁচকাবে। তবে আজ জানলাম জ্বর বেধেছে। আমি দোয়া বা বদদোয়া কিছুই দিইনি। তারপরও বেধেছে। আমার কি দরকার এর-ওর ব্যাপারে মাথা গলানোর। তারপরও বাংলাদেশি বলেই স্যুপ বানিয়ে নিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি রীতিমতো কাতরাচ্ছে। হঠাৎ বলেও ফেললাম, মায়ের কাছে থাকলে কত ভালো হতো তোমার এখন। কমফোরটারের ভেতর থেকে বলল, ৯১১ আছে কী করতে। ফোন করলে ওরা এসে নিয়ে যাবে, আমি কাউকে বদার করতে চাই না। রাদার একাই সামলাব।  উঠে স্যুপ খাবার অবস্থায় নেই। তারপরও তেজ অনেক। গায়ে যেমন, গলায়ও তেমন। গা-ও গরম, গলাও  গরম। আমি স্যুপ রেখে চলে যাব কি যাব না ভাবছি। সেই সময় সে গলা নরম কবে বলল, আমি ঠিক আছি, ভাববে না আমাকে নিয়ে। তুমি  যেতে পার এখন। থ্যাংকস। কিছুক্ষণ পরে আমার জানালা থেকে দেখলাম অ্যাম্বুলেন্স এসেছে তাকে নিয়ে যেতে হাসপাতালে। বুঝলাম মিঠাই-ই নিজেই ওদের ফোন করেছে। এদিকে করব না করব না ভাবতে ভাবতেই আমি এত রাতে ওর মাকে ফোন করলাম। বাঙালিপনা আর কী। উনি এক চিৎকার দিয়ে হাউমাউ করে পাড়া মাথায় তুলে জানতে চাইলেন, কোথায় কোন হাসপাতালে গেছে তার মেয়ে। আমি তার কিছুই জানি না। রাতভর বহুবার আমাকে ফোন করলেন। পরের দিনও। মেয়ের ফোন বন্ধ। পাচ্ছে না তাকে। আমি কী আর করতে পারি। ভদ্রমহিলা সকাল হতেই এসে বসে থাকলেন আমার বাসায়। দুপুর যায়। বিকেল হতে যখন চলে যাবেন, তখন কেঁদে ভাসলেন আকুল হয়ে। আমার কিছু বলার নেই। আন্টি বললেন, বুড়া বয়সে কেন যেতে হয় আর হবে ওল্ড হোমে বুঝতে পারছ। এই মেয়ে কি রাখবে আমাকে ওর কাছে। অথচ দেখ আমি এখনো আমার শাশুড়িকে রাখছি, মাকে রাখছি। এই দেশে কাজের মানুষ নেই। তারপরও সব এক হাতে সামলাচ্ছি। ওর ছোট চাচা থাকেন ছোট্ট একটা অ্যাপার্টমেন্টে অথচ দুই মেয়ে নিয়ে কী সুন্দর থাকছে। আর আমার এত বড় বাড়ি অথচ মেয়েটা থাকবে না। ওর সাদা বন্ধুরা কী করছে তাই করবে। একা থাকবে। তুই কি সাদা, তুই তো কালো। তুই কেন হবি ওদের মতন। আমি শুধরে দিতে বললাম, কালো না বাদামি, ব্রাউন। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মন লাফঝাঁপ মেরে উঠে বলল, না না আমার মেয়ে বুঝি শ্যামলা, সে তো ফর্সা। বলাই বাহুল্য, আমার এবার খুবই রাগ হলো।  আমিও আগের কথার রেশ ধরে  বললাম, কষে দুটো চড় দিলেন না কেন আগেই। সাদাদের দেশে এসেছ বলে কি সাদাগিরি দেখাতে হবে নাকি!

সারাক্ষণ

ফোঁস করে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তা দেব কী করে, সঙ্গে সঙ্গে ৯১১-এ কল দেবে। স্বাধীন ওরা। আজকাল মনে হয় দেশে আমরা যেমন ছিলাম, পরাধীন, বাপের কঠোর শাসনে, তাই যেন ছিল ভালো। আমরা ছয় বোন তিনজন তিনজন করে দুটো খাটে ঘুমাতাম। একেকজনের চুলের ঘ্রাণ আরেকজন পেতাম। সেই ছিল ভালো। পুরা একটা রুম পেয়েও এরা এত কেন অপূর্ণ বলতে পারো?

আমি জানি না। পরিবর্তিত সময়ে ভিন্ন দেশে অন্য সমাজে ওদের এ কেমন মানসিকতা আমি জানি না। আন্টি বললেন, আমার বাঙালি বন্ধু মহলে সবাই দুষছে এই বলে যে আমার মেয়ে একটা বাজে উদাহরণ তৈরি করেছে।

যেহেতু আমারও মেয়ে আছে, তাই আমিও বললাম, করেছেই তো।

আন্টিও সঙ্গে সঙ্গে বললেন, কী বললে! কী বললে!  আমি বললাম, না না, কিছু বলিনি। উনি বললেন, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া অনুচিত। আমিও বললাম, জি, ঠিক কথা। উনি বললেন, দেখি অন্যদের মেয়েরাও তো বড় হচ্ছে ওরা কী করে, থাকে কদিন তাদের সঙ্গে আর কাছে। আমার এবার বিরক্ত লাগল, সেই সঙ্গে ভয়ও। তাই আমিও বললাম, সামনেই যে উদাহরণ রয়েছে দেখে দেখে শিখতে পারে কত কিছু। উনি চুপ করে গেলেন। এবং একটু পরেই চলে গেলেন। মনে হয় কান্না লুকাতে লুকাতে গেলেন।

উনি চলে যাওয়ার পর আমি বিষণ্ন হয়ে চেয়ে থাকলাম। কিছুটা সময় গালে হাত দিয়েও বসে থাকলাম। কী হচ্ছে রে বাবা চারদিকে, ভেবে অবাক হলাম। ২০২০-এ সব অনেক বদলে গেছে। বিশ বছর আগে যখন এই আমেরিকায় এসেছিলাম, তখন বাঙালি সমাজের চেহারা অন্য রকম ছিল। কিন্তু একটু পরেই আন্টি ফোন করলেন। ভাবলাম, আরো ঝাড়ি আছে কপালে। দেখি উনি হাসছেন, বলছেন, জানো এই মাত্র ফুলের বুকে পেলাম, ডেলিভারি সার্ভিসের লোক এসে দিয়ে গেল। এত কিছুর মাঝেও আমার মেয়ে ভোলেনি যে আজ মাদারস ডে।  আমি এত ব্যস্ত যে এ বছর মাদারস ডে যে চলে এল, তা খেয়ালই করতে পারিনি। বলছেন আর উনি হাসছেন। লে হালুয়া।

আমিও বুঝলাম মাদারস ডে এলে আমেরিকান মায়েদের এত আনন্দ কেন হয়। মেয়ের একটা সূত্র পাওয়া যায়। বুঝতে পারে কেউ তাকে মনে রেখেছে। আমাদের বাঙালি মায়েরাও কি ওই পথের পথিক হচ্ছে। হওয়ার আগেই কি এই থাবা থামাতে পারা যাবে না! ভুল একটা-দুইটা উদাহরণ কখনোই গ্রহণীয় হতে পারে না।  পরের দিন দুপুর নাগাদ দেখলাম উবারে করে মিঠাই ফিরছে। সকাল বিকাল হৈ হৈ করতে যেসব বন্ধু আসে, তাদেরকেও আনেনি ওকে। একাই ফিরছে হাসপাতাল থেকে। আমাকে সিঁড়ির নিচে ছুটে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, আজও অফিস মিস করলাম। কত কত খরচ। কাজ তো করতেই হবে। আমিও বললাম, তা ঠিক, তবে কদিন রেস্ট নিয়ে নাও। উত্তর না দিয়ে যেতে যেতেই বলল, সরি, কাল সারা দিন মা তোমার বাসায় বসে থেকে তোমাকে ডিস্ট্রার্ব করেছে বলে। ফোন অন করতেই মায়ের এক শটা  মেসেজ পেয়েছি । বলে হাসল। বললাম, তুমি তো শুধু মেসেজ পেয়েছ, আমি হলে তো ঘাড়ে ধরে নিয়ে যেতাম মেয়েকে বাসায়। বাংলাদেশে থাকলে দেশি বাবারা দুটো লাঠি নিয়ে এসে পিটিয়ে নিয়ে যেত। না বলে যেন থাকতে পারলাম না।  মিঠাই বলে উঠল, হোয়াট রাবিশ, রিয়েলি! ওকে যেহেতু অনেক আদর করি অনেক কথা বলার যেন অধিকারও আছে ভেবে নিয়ে বললাম, তুমি কি এ দেশের মিনিস্টার হতে পারবে যে হোয়াট রাবিশ বলছ। বলেই বুঝলাম, এ তো জানেই না বাংলাদেশের কোন মিনিস্টার এ কথা বলে খ্যাত। নিজেরই মনে হলো আমাদের পটভূমি এক না, তাই আমাদের বোঝাবুঝিগুলিও একই রকম না, আমরা একে অপরের কাছে অনেক চেনার পরও অনেকটাই অচেনা। প্রত্যক্ষণ ভিন্ন। মিঠাই চেয়েই রয়েছে। অন্য কথায় গেলাম, জানতে চাইলাম মায়ের কাছে কখন যাবে? বলল, দেখি উইক এন্ড-এ যাব। মা আসতে চাইছিল। আমি না করেছি। আমার এখন রেস্ট নিতে হবে। কাল সকালেই অফিস। মিঠাই উঠে যাচ্ছে একা, ওপরে। সুস্থ নয় এখনো। তারপরও শিরদাঁড়া এক্কেবারে খাড়া। মনটাও বজ্র কঠোর ইস্পাত। এমন স্বাবলম্বী সন্তান কি আমরা আসলেই চাই। চেয়েছিলাম! একলা হয়ে যেতে যেতে কোথায় কত দূর যাবে সে জানি না, নাকি হারিয়ে যাবে আমাদের চেনা সময় জগৎ আর সংস্কৃতির সীমানা ছেড়ে! কেউ কি তা জানে! আমার তো জানা নেই। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে দেয়ার মতন করে ইন্ডিপিন্ডির মা আজও বললেন তার মেয়ের দোষ নেই, সব দোষ ওই আমেরিকার, পিন্ডি চটকালেন তাই আমেরিকার। বলিনি একবারও কোনো সাধকের মতন করে, ওরে পাগল যেমন চাই তেমন সন্তান গড়ে তোলা বিশাল এক সাধনা রে, সে যেকোনো ভূমিতেই হোক, যেকোনো আবহাওয়াতেই হোক। তবে বলতে খুব মন চাইছিল। আমি কেবল ডানে-বাঁয়ে ঘাড় বাঁকালাম, দুলালাম, ওনার সব কথার জবাব দিলাম না, প্রতিবাদও না।

লেখক পরিচিতি: দিলরুবা আহমেদ-এর কর্মজীবনের সূচনা হয়েছিল প্রভাষক হিসেবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস-এ আই-টি ফিল্ডে কর্মরত। ইতিমধ্যে তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলির মধ্যে টেক্সাস টক , আমার ঘরে এসো , আঠার , ঝুমকোলতার সারাটা দিন, মাছের মায়ের পুত্র শোক, এসো হাত ধরো,হেঁটে চলেছি বন জোসনায়, ব্রাউন গার্লস, গ্রিনকার্ড, টেক্সান রানী ও ব্লু বনেট’, বলেছিল, প্রবাসী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন