দেশের সংবাদ ফিচার্ড

কমলগঞ্জের দলই চা বাগানে মৌসুমের নতুন পাতা চয়ন শুরু

কমলগঞ্জের দলই চা বাগানে মৌসুমের নতুন পাতা চয়ন শুরু
উৎসবে মাতলেন চা শ্রমিকরা
চা পাতার দাম নিয়ে শঙ্কায় বাগান কর্তৃপক্ষ

উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার দলই চা বাগানে চা পাতা চয়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন দলই বাগানে চা পাতা চয়নের উদ্বোধন করেন সিলেট টি কোম্পানী লিমিটেড এর দলই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো: আসগর আলী। শুক্রবার (১০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টায় শ্রমিকদের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চা বাগানের ০৫ নম্বর সেকশনে পাতা চয়নের উদ্বোধন করা হয়।

শুক্রবার সকালে সিলেট টি কোম্পানি লিমিটেড এর অধীনস্থ দলই চা বাগানের ০৫ নম্বর সেকশনে বাগান কর্তৃপক্ষ, চা বাগান শ্রমিক ও পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা পুজোর্চনা, গীতাপাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিলসহ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাগানের চা শ্রমিকদের নিয়ে নতুন পাতা চয়ন করা হয়। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- দলই চা বাগানের সিনিয়র সহকারি ব্যবস্থাপক বদরুল হুদা চৌধুরী, সহকারি ব্যবস্থাপক মো: আলী আহাদ, সহকারি ব্যবস্থাপক সাদনান চৌধুরী, সাংবাদিক সজীব দেবরায়, সাদিকুর রহমান সামু প্রমুখ। এরপর নাচেগানে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন চা শ্রমিকরা। পরে মৌসুমের প্রথম পাতা উত্তোলন শুরু করেন নারী শ্রমিকরা।

দলই চা বাগানের সেকশনে সেকশনে চা গাছে নতুন কুঁড়ি সবুজের শোভা বর্ধন করেছে। সতেজতায় হাসছে চা বাগান। বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা শ্রমিকরাও চা পাতা উত্তোলনে অধীর আগ্রহে। সাধারণত ডিসেম্বরে মৌসুমের শেষে চা গাছ ছাটাই বা কলম এর পর নিয়মানুযায়ী দু’তিন মাস চা বাগানে চা পাতা উৎপাদন বন্ধ থাকে। ফলে চা কারখানাও অলস থাকতে হয়। এরপর নতুন কুঁড়ি গজানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে চা পাতা চয়নের মাধ্যমে শুরু হয় চায়ের উৎপাদন। এবছরও এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি।

নারী চা শ্রমিক সারতী সাওতাল, আশা বাউরী, বাসন্তী পাশী বলেন, সকাল সাড়ে ১০ টায় পুজা ও প্রার্থনার মাধ্যমে চা চয়ন শুরু হয়। চা চয়নের পূর্বে নারী চা শ্রমিকরা একটি চা গাছকে উপলক্ষ করে ফুল ও প্রসাদ দিয়ে পুজা করেন। এটাকে তারা বন দেবীর পুজা বলছেন। তারা বলেন, এই পুজা করা হয় চা বাগানের সেকশনের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে। নেচে গেয়ে আনন্দঘন পরিবেশে তারা চা চয়নে লেগে পড়েন। এরপর চা বাগান ম্যানেজারসহ সবাই আমাদের সাথে নাচে অংশগ্রহন করেন।

বাগানের টিলা ক্লার্ক সুনীল তাতী ও পঞ্চায়েত কমিটির সাধারন সম্পাদক বিশাল পাশীসহ চা শ্রমিকরা বলেন, তাদের মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু চায়ের দাম না বাড়ায় মালিকরা আছেন সমস্যায়। তারাও চায়ের দাম বৃদ্ধির আবেদন জানান। তারা বলেন, চা বাগান না থাকলে তাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে। তারা চা বাগানের মালিক, ম্যানেজারসহ সকলের সাথে মিলে মিশে কাজ করতে চান যাতে করে চা শিল্পটা এগিয়ে যায়।

দলই চা বাগানের চা শ্রমিক সরদার রাম কুমার বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে কিন্তু চা পাতার দাম বাড়েনা কেন? চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি যখন ১৭০টাকা তখন ভালো মানের চা পাতার দাম ১২০টাকা। একজন চা শ্রমিক সে ৫০০ গ্রাম কিংবা ২৫০গ্রাম যাই পাতা তুলুক দিনশেষে তাকে তাঁর প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ করতে হয় বাগান কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু চা পাতার দাম আগেও যা ছিল এখনও তাই রয়ে গেছে।

দলই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো: আসগর আলী বলেন, আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে আমরা মৌসুমের প্রথম চা পাতা উত্তোলনের চেষ্টা করি। আনন্দ উৎসবের মধ্যেও আমাদের মন তেমন ভাল নেই। আমরা বৃষ্টির অভাবে ভুগছি। বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে চা গাছ মারা যাচ্ছে, বাগানের চারিদিকে পানি দিয়ে আমরা কূলকিনারা পাচ্ছিনা। বৃষ্টি দিলে হয়ত সব ঠিক হয়ে আসবে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দেশে চায়ের মূল্য নেই, আমরা অনেক চেষ্টা করেও আমাদের কাঙ্কিত মূল্য পাচ্ছি না। গত কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে ৪০তম চা অকশনে অনেক বাগানের চাপাতা ৯০টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে, যদিও আমাদের পাতা ১২০টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বাজারে চায়ের মূল্য ঠিক থাকলেও আমরা কাঙ্কিত মূল্য পাচ্ছি না। চা বাগানগুলো ও শ্রমিকদের ঠিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি দেওয়ার দাবী জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন