প্রবাসের সংবাদ

কাগজপত্রহীনদের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত ১০০ দিন


কাগজপত্রহীনদের বহিষ্কারাদেশ স্থগিত ১০০ দিন

১০০ দিনের মধ্যে কোন কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে না। ২১ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে ২০ জানুয়ারি এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। 

এরফলে বাইডেন কর্তৃক কংগ্রেসে প্রেরিত ১১ মিলিয়ন কাগজপত্রহীন অভিবাসীকে ওয়ার্ক পারমিটের পথ ধরে ৫ বছর পর গ্রীণকার্ড প্রদান এবং তারও তিন বছর পর সিটিজেনশিপ প্রদানের যে বিল (U.S. Citizenship Act of 2021) পাশের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তার আগ পর্যন্ত আর কাউকে বহিষ্কারের আতংকে দিনাতিপাত করতে হবে না।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অপেক্ষায় যারা দক্ষিণের সীমান্তে অপেক্ষা করছে, তাদের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এমনকি, যাদের এসাইলামসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গ্রীণকার্ডের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে তাদের কথাও নেই। শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বহিষ্কারের আদেশ জারি হয়েছে অথবা সীমান্ত অতিক্রম করার পর কোন প্রোগ্রামে আবেদনই করেনি, তেমন কাগজপত্রহীনরা এ সুবিধা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অভিবাসন ইস্যুতে জো বাইডেনের এসব পদক্ষেপকে অভিনন্দিত করে খ্যাতনামা এটর্নি ও ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার মঈন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সর্বশেষ সার্কুলারের সুবিধা সবচেয়ে বেশী পাবে মেক্সিকোসহ সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশের লোকজন। বাংলাদেশির সংখ্যাও হাজার পঞ্চাশেক হতে পারে। তাই এই নির্দেশের পর কমিউনিটিতে স্বস্তি এসেছে। বিশেষ করে দায়িত্ব গ্রহণের পরই ২০ জানুয়ারি অপরাহ্নের কংগ্রেসের প্রতি অভিবাসন-ব্যবস্থার সংস্কারের জন্যে যে আহ্বান জানানো হয়েছে, সেটি অবশ্যই যুগান্তকারি একটি ঘটনা। সেখানেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের কাগজপত্রহীনরা খুব বেশি ফায়দা পাবে বলে মনে করছি না।

এটর্নি মঈন বলেন, এজন্যে ২১ জানুয়ারি ইউএস সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নিউইয়র্কের ডেমক্র্যাট সিনেটর চাক শ্যুমারের অফিসে টেলিফোন করে অনুরোধ জানিয়েছে, শুধু কাগজপত্রহীনদের গ্রীণকার্ডের ব্যবস্থা হলে একইভাবে মেক্সিকোসহ সেন্ট্রাল আমেরিকানরাই পুরো সুবিধা পাবে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের খুব অল্পসংখ্যক মানুষ মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করেছে যুক্তরাষ্ট্রে আসার সময়। কাগজপত্র যাদের এখনও হয়নি তার সিংহভাগ এসেছেন বৈধ ভিসায় এয়ারপোর্ট হয়ে। তাই তারা কোন না কোন প্রোগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করেছেন। অনেকের আবেদন এখনও পেন্ডিং রয়েছে। যাদের আবেদন নাকচ হয়েছে তার বড় একটি অংশ ইতিমধ্যেই স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছে অথবা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। যারা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন তারা বহিষ্কার স্থগিতের সুবিধাসহ বৈধতা প্রদানের সুযোগ পাবেন। আর যাদের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে তারা কোন সুবিধাই পাবেন না যে বিল কংগ্রেসে (U.S. Citizenship Act of 2021) উত্থাপনের কথা হচ্ছে।

এটর্নি মঈন বলেন, আমি সিনেটরের অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাকে অনুরোধ জানিয়েছি বিলটি উত্থাপনের আগেই যেন ‘পেন্ডিং থাকা আবেদনকারিরা নতুন সুবিধার অন্তর্ভূক্ত হতে পারে-তেমন সুযোগ তৈরী করতে। এ নিয়ে কমিউনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকেও নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানের সাথে দেন-দরবারের বিকল্প নেই।’ এছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ভিসায় যারা রয়েছেন তারাও কোন সুবিধা পাবেন না।
অভিবাসন বিষয়ক প্রখ্যাত এটর্নী অশোক কর্মকার বলেন, সিএসএস-লুলাক কর্মসূচিতে যারা গ্রীণকার্ড পাননি, তারাও কাগজপত্রহীন হিসেবে ঘোষিত সুবিধা পাবেন। এছাড়া, যারা এসাইলামের পর শুধু ওয়ার্কপারমিট পেয়েছেন তারা বহিষ্কারের বাইরে থাকলেও (U.S. Citizenship Act of 2021)এই বিলের সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করতে সক্ষম হবেন কিনা তা জানা যাবে বিলটি পাশের পর। উভয় এটর্নী সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দিয়েছেন নিজ নিজ  আইনজীবীর পরামর্শক্রমে সবকিছু করতে। বহিষ্কারাদেশ স্থগিত করা হলো বলে গুরুতর অপরাধী কিংবা সমাজের জন্যে মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিতরা আইনের দৃষ্টির মধ্যেই থাকবেন। এমনকি কংগ্রেসে ‘ইউএস সিটিজেনশিপ এ্যাক্ট অব ২০২১’ পাশ হলেও গুরুতর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিতরা সে সুযোগ কখনোই পাবে না।
কাগজপত্রহীন কত মানুষ আছে তার সঠিক কোন তথ্য কারো কাছেই নেই। তবে ২০১৭ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ অনুযায়ী ১১ মিলিয়ন কাগজপত্রহীন অভিবাসীর অর্ধেকই কমপক্ষে ১৫ বছর যাবত স্থায়ীভাবে বসবাসের অপেক্ষায় বহিষ্কারের ঝুঁকি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। এমন একজন বাংলাদেশী সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি নিউইয়র্কে এসেছিলেন ৩০ বছর আগে। মারা যাবার পর লাশ গেছে নিজ পরিবারের কাছে। এমন আরো হাজার হাজার বাংলাদেশীর সাক্ষাৎ মেলে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ওয়াশিংটন মেট্র এলাকা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, টেক্সাস আর ক্যালিফোর্নিয়ায়। বারাক ওবামার আমলে অর্থাৎ ২০১৩ সালে সিনেটে একটি বিল পাশ হয়েছিল ডেমক্র্যাটদের নিরঙ্কুশ সমর্থনে। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃত্বে রিপাবলিকানরা থাকায় সেটি কার্যকর হতে পারেনি। এবার অবশ্যই কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই ডেমক্র্যাটরা নেতৃত্ব পেয়েছে।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, ট্রাম্পের আমলে ইমিগ্রেশন কোর্টে ঝুলে থাকা আবেদনের সংখ্যা ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। এগুলো পেন্ডিংয়ের গড় সীমা আড়াই বছরের বেশি। বাইডেনের প্রত্যাশা অনুযায়ী সকলকে লিগ্যাল স্ট্যাটাস দেয়ার কার্যক্রম শুরু হলে পেন্ডিং আবেদনের সংখ্যা রাতারাতি কমে আসবে বলে এটর্নীরা মনে করছেন।

এদিকে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ডেভিড পিকস্কি আইসসহ বিভিন্ন এজেন্সীকে জানিয়েছেন কাগজপত্রহীনদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। ট্রাম্পের নির্দেশে তৃতীয় কোন দেশে এসাইলাম প্রার্থনার পর তা নাকচ হলেই কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলামের আবেদন করা যাবে, এ কারণে প্রায় ৬০ হাজার বিদেশী এখন মেস্কিকোকে অবস্থান করছেন। তাদের অবস্থা কী হবে সেটিও বিস্তারিতভাবে বাইডেন প্রশাসনকে জানাতে চায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন