কানাডার সংবাদ

কানাডায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা !

কানাডার প্রতিটি শহরে এখন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। কি হতে যাচ্ছে কানাডায় তা কেউ বলতে পারছে না। বিশেষ করে পুরো কানাডার অভিভাবক বলে খ্যাত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ঘরেই, মানে নিজ স্ত্রী  সোফি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত! ফলে বুঝতেই পারছেন! এই মুহুর্তে, কানাডার জনস্বাস্থ্য এজেন্সি কভিড -১৯ এর সাথে যুক্ত জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিকে কানাডার সাধারণ জনগণের চেয়ে কম হিসাবে মূল্যায়ন করেছে তবে এটি দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। নিয়ম কানুন না মানলে  কানাডায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা  রয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন!  কানাডিয়ানদের জন্য আরও মারাত্মক পরিণতির ঝুঁকি রয়েছে: ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের,  প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে, অন্তর্নিহিত চিকিত্সা শর্তসহ বিভিন্ন ধরনের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক  করা হচ্ছে।  কভিড -১৯ এর প্রাদুর্ভাব কানাডায় অপ্রত্যাশিত নয়, আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা সাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কানাডার জনস্বাস্থ্য সংস্থা প্রদেশীয়, আঞ্চলিক এবং সম্প্রদায়ের অংশীদারদের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিকশিত হওয়ার সাথে সাথে সর্বোত্তম উপলব্ধ প্রমাণের ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির পুনর্বিবেচনা অব্যাহত রেখেছে। এ রিপোর্ট  লেখা পর্যন্ত কানাডায় ১৫৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। সারা কানাডায় করোনা ভাইরাসের কারণে ছন্দপতন ঘটেছে। ভয়, শংকা, আতঙ্ক এবং দুঃশ্চিন্তায় পুরো কানাডার মানুষ। যদিও যুক্তরাস্ট্রের মতো এখনো সারা দেশে জরুরি ঘোষণা করা হয়নি তবুও সরকার থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের শেষ নেই। একমাত্র গ্রোসারী স্টোর আর সুপার মার্কেট ছাড়া ব্যবসা-বানিজ্যে মারাত্মক আঘাত হেনেছে। শুধু গ্রোসারী আর সুপার মার্কেটে  ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সবাই খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করছেন। যদিও সুপার মার্কেটে অনেক কিছুেই পাওয়া যাচ্ছেনা। সিবিএনএ-এর সহযোগি সম্পাদক দীপক ধর অপু মন্ট্রিয়লের বিভিন্ন ষ্টোর ঘুরে ছবিসহ বিভিন্ন স্টোরে বর্তমান অবস্থা জানিয়েছেন। তিনি  সরজমিনে দেখে বলেছেন ‘প্রতিটি নাগরিক করোনা ভাইরাসের ভয়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেব কয়েকদিনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে মজুত রাখছেন ফলে স্টোরগুলোতে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের আকাল দেখা দিয়েছে। স্টোরের রেকগুলো খালি হয়ে গেছে।  মানুষের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্ক তা বিদ্যমান।’

কানাডার  শেয়ার বাজার সবচেয়ে বেশী পতন ঘটেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসা বাণিজ্যকে সহায়তা দিয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে প্রস্তুত রয়েছে কানাডা সরকার। কানাডার উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিষ্টিয়া ফ্রিল্যান্ড সরকারের এই প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।

করোনা ভাইরাসের প্রতিক্রিয়ায় কানাডার শেয়ার বাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে । একদিনের পতনের ইতিহাস পর্যালোচনায় ১৯৪০ সালের পর এই ধরনের পরিস্থিতি এই প্রথম বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। বিক্রির চাপে বৃহস্পতিবার ‘দ্যা এস অ্যান্ড পি/টিএসএক্স কম্পোজিট ইনডেক্স’ ১২ শতাংশ কমে যায়। লেনদেনের শুরুতেই বিনিয়োগকারীরা হাতের শেয়ার ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পরে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ করে দেয়।পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগিয়ে আসে। বন্ড বাই ব্যাকের মাধ্যমে বাজারে তারল্য বাড়ানোর ঘোষনা দেয় ব্যাংক অব কানাডা। পরে  আবার লেনদেন চললেও বাজার আর গতি পায়নি।কানাডার অর্থনীতি মন্দায় আক্রান্ত হতে যাচ্ছে এমন আশংকা থেকে এই পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

কানাডা থেকে ভ্রমণের ওপর নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।  কানাডিয়ান ভ্রমণকারীদের ঝুঁকি গন্তব্য, সেইসাথে ব্যক্তির বয়স এবং স্বাস্থ্যের স্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু গন্তব্য রয়েছে যেখানে কানাডা সরকার সমস্ত ভ্রমণ বা সমস্ত অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলা পরামর্শ দেয়। ভ্রমণের আগে সর্বশেষ ভ্রমণ স্বাস্থ্য বিজ্ঞপ্তিগুলি পরীক্ষা করুন । যতসম্ভব ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহবান করা হয়েছে। কেউ কানাডায় প্রবেশ করলে ১৪ দিনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় খাকতে হবে জনস্বার্থে।

শুক্রবার রেডিও-কানাডার মন্ট্রিয়ল মর্নিং শোতে একটি সাক্ষাত্কারের সময় ট্রুডো বলেছিলেন যে সরকার কোনও ধারণার দ্বার বন্ধ করে দিচ্ছে না এবং পরিস্থিতিটি প্রতিদিনের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করছে।

সরকার কানাডার সীমান্ত বন্ধ করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেছিলেন, “আমরা এটি দেখার মধ্যে রয়েছি। আমরা কী করতে হবে তা দিনের পর দিন মূল্যায়ন করার মাঝেই রয়েছি।

“যেমনটি আপনি দেখেছেন, কানাডার বাইরে ভ্রমণ না করার জন্য সুপারিশ রয়েছে। আমরা আমেরিকানদের সাথে সুস্পষ্টভাবে, আমাদের সীমান্তে, আমাদের ক্রিয়াকলাপের সাথে সমন্বয় সাধনের মাঝে আছি। আমরা যা যা পারব তা মূল্যায়ন অব্যাহত রাখব কীভাবে আমরা কানাডিয়ানদের সুরক্ষায় রাখতে পারি এবং আমরা কোনও ধারণার দ্বার বন্ধ করব না “”

ট্রুডু বলেছিলেন যে সরকার তাদের নিজস্ব স্বাস্থ্য এবং প্রিয়জনের স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হলে অর্থের বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য সরকার আয়-সহায়তা ব্যবস্থাও বিবেচনা করছে।

 

কানাডায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ! -স্বাস্থ্য মন্ত্রী

কানাডার পার্লামেন্ট ৫ সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

কানাডার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

করোনা মোকাবেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সকল মসজিদে জমাতবদ্ধ হয়ে জুম্মা কিংবা নিয়মিত নামাজ পড়া স্তগিত করা হয়েছে।

সব ধরনের সভা-সমাবেশ এবং একইস্থানে দুই শতাধীক মানুষের সমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কানাডা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত সভা চলছে।

আন্তর্জাতিক বিমানগুলি কেবলমাত্র কয়েকটি সংখ্যক বিমানবন্দরে অবতরণের অনুমতি পাবে। এই অবস্থানগুলি এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

৫০০ জনেরও বেশি লোক বহনকারী নৌকা ও ক্রুজ জাহাজগুলিকে জুলাই পর্যন্ত কানাডার বন্দরে ডকিং নিষিদ্ধ করা হবে।

আন্তর্জাতিক পয়েন্ট থেকে কানাডায় আগত সমস্ত ভ্রমণকারীকে সতর্কতা হিসাবে ১৪ দিনের জন্য স্ব-বিচ্ছিন্নতা বিবেচনা করতে বলা হচ্ছে। হুবেই, চীন, ইরান এবং ইতালি থেকে আগত লোকদের ইতিমধ্যে স্ব-বিচ্ছিন্ন হতে বলা হয়েছে।

বিমানবন্দরগুলির পাশাপাশি সমুদ্র, স্থল এবং প্রবেশের রেল পয়েন্টগুলিতে বর্ধিত স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফেডারাল সরকার সমস্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিচ্ছে এবং সিওভিড -১৯ এর বিস্তারকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থার অংশ হিসাবে অভ্যন্তরীণ বিমানগুলি সীমাবদ্ধ করছে।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই নতুন পদক্ষেপের বিস্তারিত জানিয়েছেন। ট্রুডো তার স্ত্রী সোফির জন্য নিশ্চিত COVID-19 নির্ণয়ের কারণে স্ব-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

ট্রুডো বলেছিলেন যে, সুস্পষ্ট ভ্রমণ পরামর্শদাতাকে বাদ দিয়ে সরকারও সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

“আমরা কানাডিয়ান এবং কানাডা সুরক্ষিত রাখার জন্য আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি তা নিশ্চিত করার জন্য সকল আগতদের যথাযথ সংস্থান দিতে সক্ষম হয়ে বিদেশের যাত্রীদের গ্রহণযোগ্য বিমানবন্দরগুলির সংখ্যা হ্রাসের দিকে আমরা লক্ষ্য করছি।”

আমরা স্পষ্টতই, উত্সের দেশগুলি এবং আমরা গ্রহণ করতে পারি এমন আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমরা সেরা বিজ্ঞান, আমাদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সেরা প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তগুলি নেব। ”

ফেডারেল সরকার সমস্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিচ্ছে এবং সিওভিড -১৯ এর বিস্তারকে সীমাবদ্ধ করার জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থার অংশ হিসাবে অভ্যন্তরীণ বিমানগুলি সীমাবদ্ধ করছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পট্টি হাজদু এটিকে একটি “সংবেদনশীল সময়” বলে উল্লেখ করেছেন এবং সমস্ত আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করার পদক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কানাডার ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।হাসপাতালগুলোতে ভিজিটর নিষিদ্ধ এবং কোন কোনো ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। টরন্টোর মেয়র করোনা আক্রান্ত বলে জানা গেছে। শেয়ার বাজারে পতন ঘটেছে।

টরন্টোতে কারোর অসুস্থতা করোনাভাইরাস কি না সেটা পরীক্ষা করতে যেতে হবে Michael Garron Hospital (MGH)-তে। এমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টের পশ্চিম দিকে Mortimer Avenue দিয়ে ঢুকতে হবে এই বিশেষ পরীক্ষা কেন্দ্রে। যাবার আগে ফোন করে এপয়েন্টমেন্ট করতে হবে 416-469-6858 নম্বরে। মন্ট্রিয়ল 1-877-644-4545

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × 2 =