ধর্ম-কর্ম ফিচার্ড

ক্রিসমাস ট্রি : বড়দিনের বিশেষ আকর্ষণ ক্রিসমাস ট্রির ইতিহাস

ক্রিসমাস-ট্রি

খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড় দিন, আর বড় দিনের বিশেষ আকর্ষণ ক্রিসমাস ট্রি । যিশু খ্রীস্টের জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর এই বড়দিনের উৎসব পালিত হয়। সারাবিশ্বের খ্রিস্টান সম্প্রদায় নানা আয়োজন আর আনুষ্ঠানিকতায় দিনটি পালন করে।

বড়দিন কে সবচেয়ে আর্কষণীয় করে তোলে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। বড়দিনে গীর্জায়, দোকানে বা বাসাবাড়িতে সর্বত্রই ক্রিসমাস ট্রি রাখা হয়। আর একে বর্ণিল করে সাজানো হয়, আপেল, পাখি, মোমবাতি, ঘুঘু, মাছ, ফুল, ফল, স্বর্গদূত আর রঙ বেরঙের কাগজ ও বাতি দিয়ে।

কিন্তু আমরা হয়তো অনেকেই জানি না এই ক্রিসমাস ট্রির রহস্য কি?

‘ক্রিসমাস ট্রি’র জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এছাড়া ঝাউ জাতীয় গাছও ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্রিসমাস ট্রি একটি জীবন্ত গাছও হতে পারে আবার কৃত্রিমও হতে পারে। ‘ক্রিসমাস ট্রি’তে রঙ্গিন বাতির ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অর্নামেন্ট দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রিস্টের প্রতীক।

বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেয়ার শুরু কীভাবে হয় তার লিখিত কোনো দলিল পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন গল্প। এমন একটি গল্প হল, রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হয়। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’। তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

আরেকটি প্রচলিত গল্প হলো, একদিন এক গরিব শিশু এক গির্জার মালিকে কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেয়ার অনুরোধ করল। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল। ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ‘ক্রিসমাস ট্রি’।

খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, ‘ক্রিসমাস ট্রি’র ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে জার্মানির গেইসমার শহরের এক সাধু বনিফেসের সঙ্গে। সেইন্ট বনিফেস (৬৭২-৭৫৪ সালে) একটি প্রাচীন ওক গাছের মূলে একটি দেবদারু জাতীয় ফার গাছ বেড়ে উঠতে দেখেন। তিনি এটাকে যিশুখ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

ক্রিসমাস ট্রি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে পুরো কৃতিত্ব যুক্তরাজ্যের রানি ভিক্টোরিয়ার। ১৮৪৮ সালের বড়দিনের আগে রানি তার জার্মান স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টকে আবদার ধরে বলেন, ছেলেবেলায় বড়দিনে যেভাবে গাছ সাজানো হতো সেভাবে যেন তিনি এবার একটা গাছকে সাজান। প্রিন্স অ্যালবার্ট জার্মান স্টাইলে সবুজ একটা গাছকে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি, মোমবাতি ও অলংকার দিয়ে সাজালেন। সেই গাছের ছবি লন্ডনের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হলে যুক্তরাজ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চবিত্তদের মধ্যে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। নিরাপদ আলোকসজ্জার জন্য ১৮৮২ সালে টমাস আলফা এডিসনের সহযোগী এডওয়ার্ড জনসন ক্রিসমাস ট্রি তে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করেন।

এরপর থেকে মোমবাতির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহার শুরু হয়। ১৮৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ২৩তম প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের আমলে প্রথমবারের মতো হোয়াইট হাউসে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়। এরপর থেকে যতই দিন গেছে ততই ক্রিসমাস ট্রি বড় দিনের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

ঐতিহ্য অনুসারে, ২৪ ডিসেম্বর ক্রিসমাস সন্ধ্যার আগে ট্রি সাজানো যায় না। আর এটি সরিয়ে ফেলা হয় ১২তম রাতে অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি। আর অনেকেই মনে করেন এই নিয়ম না মানা হলে অমঙ্গল হতে পারে। তবে প্রথাগতভাবে না হলেও এখন ক্রিসমাস ট্রি আরও আগে সাজানো হয়। জার্মানিতে এটা ঐতিহ্য অনুসারে ২৪ ডিসেম্বরে সাজানো হয় এবং ৭ জানুয়ারি খুলে ফেলা হয়। ক্যাথলিকদের রীতিতে এটি জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হয়।

অস্ট্রেলিয়ায় এটি ডিসেম্বরের শুরুতে সাজিয়ে গ্রীষ্মের ছুটি পর্যন্ত রাখা হয়।

তথ্য সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)

 

সংবাদটি শেয়ার করুন