দেশের সংবাদ ফিচার্ড

গণঅধিকার পরিষদে অস্থিরতা : এটা নূরদের দল, রেজা কিবরিয়ার নয়

গণঅধিকার-পরিষদে-অস্থিরতা

গণঅধিকার পরিষদে অস্থিরতা! নেতৃত্ব নিয়ে টানাপড়েন চলছে দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূরের মধ্যে। ইতিমধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে বিবৃতি দিয়েছেন তারা। এর জেরে রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে রাশেদ খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়েছে। এ নিয়ে তুলকালাম চলছে দলটিতে।

সোমবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের প্যাডে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, রোববার (১৮ই জুন) তার সভাপতিত্বে জরুরি সভায় দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে সদস্য সচিবের কাছে প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, এরই মধ্যে সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক, ইসরায়েলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতাদের নিয়ে অসত্য সংবাদ প্রচারের জন্য ভিপি নুরকে দায়ী করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তিনি (রেজা) সভাস্থল ত্যাগ করেন।

রেজা কিবরিয়ার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর নিজের ফেসবুক পেজে পাল্টা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেন ভিপি নুর।

তিনি লেখেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠাপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কথিত সরকার বিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়ার ব্যাংকক, কাঠমুন্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেয়া এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের প্রোগ্রামে অংশ নেয়ার বিষয়ে গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে জবাবদিহিতা চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে নেতৃবৃন্দের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করেন। পরে বাসায় ঢুকে আর মিটিংয়ে আসেনি। যে কারণে আমরা তার উপস্থিতিতে আর মিটিং করতে পারিনি।

তাই উপস্থিত সদস্যদের মতামতে আমরা বাকি আলোচনা সম্পন্ন করে আজকে পূর্ব নির্ধারিত মিটিংয়ে অসমাপ্ত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সকলে একমত হই যে মিটিং এখনো কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলমান।

তাই নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাকে নিয়ে রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ। রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য সেটা তার কাজকর্মে ইতিমধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন।

গণঅধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ওইভাবে দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। বরং টাকার লোভে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে তিনি বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর। আমরা সেটাতে সমর্থন না দেয়ায় আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গণঅধিকার পরিষদে ভাঙন ও সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

এদিকে একটি গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নূরের সঙ্গে টানাপড়েনের সূত্রপাত সম্পর্কে রেজা কিবরিয়া বলেন, প্রথমত, দলের মধ্যে টাকা-পয়সার হিসাব চাওয়া নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। নুর প্রবাসে কমিটি গঠনের ব্যাপারে নিজেকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। অথচ দলের প্রধান হিসেবে আমাকে ওই পদ দেওয়ার কথা। দলীয় ফান্ডের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। কাউকে হিসাবনিকাশ দিতে চান না তিনি। আমি দলের প্রধান, কিন্তু আমাকে হিসাবনিকাশ দেন না। এখন আমি হিসাব চাওয়াতে তিনি আজেবাজে কথা বলছেন। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তিনি যে বৈঠক করেছেন; এটি কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই।

কী কারণে, কেন ওই বৈঠক করলেন এবং বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন কেন? ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? তারা কি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে? নাকি ভিপি নুর টাকা পেয়েছেন? অবশ্য যাঁরা তাঁকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন তাঁরা জানিয়েছেন, বৈঠকের পর ‘কালো একটি ব্যাগ’ নিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেছেন। টাকা-পয়সা নিয়ে তিনি কী করেছেন? নিজের স্বাক্ষরে কেন করেছেন জানি না। আবার ভারতসহ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকের সঙ্গেও গোপন বৈঠক করেন। অথচ দলের আহ্বায়ক হিসেবে আমি তা জানি না। এসব কারণে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ভিপি নুর এখন বড় নেতা হয়ে গেছেন! রাজনীতি বেশি বোঝেন! আমি তাঁর কথায় চলি না। এসব কারণে সংকটের সমাধান হবে না। আমি আইএমএফের বড় চাকরি ছেড়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। সারাজীবন হালাল টাকা-পয়সা রোজগার করেছি। এখন আমার দলের মধ্যে কেন আর্থিক অস্বচ্ছতা থাকবে- এটা তো মেনে নিতে পারি না। দলের ভেতর পদ-পদবি কেনাবেচা করছেন ভিপি নুর। নুরকে গাড়ি দেবেন বলে কাতারে একজন প্রবাসীকে দলের সভাপতিও করেছেন। এ গুলো তো ঠিক না। শুনেছি, কয়েক দিন আগে ভিপি নুর আর্থিক সহায়তার জন্য একটি বড় শিল্প গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যদি ঐ গ্রুপটি বড় অঙ্কের টাকা দেয়, তাহলে তিনি বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করবেন। সমাবেশটি আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন।

নূরের সঙ্গে সরকারের আঁতাত চলছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া: তিনি কীভাবে কাজ করবেন, জানি না। আমার মনে হয়, তিনি সরকারের পক্ষে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেই এসব খবর পেয়ে যাব, কারা কার পক্ষে কাজ করেছে।

গণঅধিকার পরিষদ ভাঙনের বিষয়ে রেজা কিবরিয়া: ভাঙতেও পারে। হলেও এটি সরকারি দলের চেষ্টায় হবে। তবে আপাতত আমি দলে আছি, দলে থাকব। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। গণঅধিকার পরিষদ নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। আশা করি, আমরা নিবন্ধন পাব।

উল্লেখ্য, গত রোববার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৫৫ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক বসে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বৈঠকে আসেন সাড়ে ৮টার দিকে। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজা কিবরিয়া।

তিনি বলেন, ৭টার বৈঠকে কেন সদস্য সচিব সাড়ে ৮টায় উপস্থিত হবেন? এরপর থেকেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলতে থাকে। যার রেশ থাকে শেষ পর্যন্ত। রাত ৯টা নাগাদ এক পর্যায়ে রাগ করে উঠে বাসায় চলে যান রেজা কিবরিয়া।

 

এটা নূরদের দল, রেজা কিবরিয়ার নয় : আসিফ নজরুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল স্যারের ফেসবুক পোস্টঃ

গণঅধিকার পরিষদ নুরুল হক নূর, রাশেদ খান, ফারুক হাসান, হাসান মামুনদের ত্যাগ, সংগ্রাম আর সাহসে গড়ে ওঠা সংগঠন। এর উত্থান ও বিকাশে ড. রেজা কিবরিয়ার তেমন কোনো ভূমিকা নেই।

তিনি কামাল হোসেনের দল থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়ে অনেকটা নিঃসঙ্গ ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন । এ অবস্থায় যে প্রত্যাশা থেকে, যে সম্মান দিয়ে দেশের তরুণ-যুবকদের নতুন প্রত্যাশার দল গণঅধিকার পরিষদে তাকে সর্বোচ্চ পদে আসীন করা হয়েছিল, তিনি তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন।

আমি নিজে রেজা কিবরিয়াকে দলটির প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীর অনুষ্ঠানে অনেকক্ষণ অতিথিদের অপেক্ষমান রেখে দেরি করে আসতে দেখেছি, দলের সাধারণ কর্মী এমনকি নেতাদের সাথে তার দূরত্ব দেখেছি, কিছু টক-শো ও অনুষ্ঠানে তার অরাজনৈতিক ও ইমম্যাচিউরড কথাবার্তা শুনে হতাশ হয়েছি।

গণঅধিকার পরিষদে তিনি আনফিট ছিলেন। গতকাল নূরের পরিবারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি যে অহমিকা প্রকাশ করেছেন তা নিচু মনেরও পরিচায়ক। তার জায়গায় রাশেদ খানকে পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা সঠিক সিদ্ধান্ত।

রেজা কিবরিয়া, আপনি আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে নিজে নিজে একটা দল গড়ে তুলুন, প্রয়োজনে আপনার মতো বড় বড় পরিবারের সদস্যদের সাথে নিন। নূর-রাশেদদের রক্তে ঘামে প্রতিষ্ঠিত দল, আখতার আর সিফাতের মতো আমার বহু ছাত্রের আত্মত্যাগে গড়ে ওঠা দল, গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না আশা করি। আমি জানি কী নির্যাতন, কী নিপীড়ন সহ্য করে তারা আজকে এই জায়গাটায় এসেছে।

নূর-রা তাই বলে সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। তাদের ভুল-ভ্রান্তি থাকতেই পারে । আশা করবো তারা সেগুলো নিজেরা আলোচনা করে দূর করতে পারবেন। দেশের হাজারো তরুণের স্বপ্নের দল গণঅধিকার পরিষদ।

আশা করি, এটি পূরণে যে দায়িত্ববোধ, দক্ষতা আর দেশপ্রেম প্রয়োজন তা তারা দেখাতে পারবেন। গণঅধিকার পরিষদের জন্য শুভ কামনা।

সূত্রঃ মানবজমিন

CBNA24 অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)

আমাদের ফেসবুক পেজে যেতে ক্লিক করুন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে যেতে ক্লিক করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন