ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

পেপার মেয়ে ||| শীতল চট্টোপাধ্যায়

পেপার মেয়ে ||| শীতল চট্টোপাধ্যায়


সকাল বেলা পাখি ডাকতে ভুলে গেলেও পেপার বলে ডাক দিতে ভুল হয়নি মেয়েটির। ওর নাম ‘পেপার মেয়ে’ , ও কলেজে ফাস্ট ইয়ারের মেয়ে ও একা মেয়ে।
সদ্যজাত অবস্থায় ওকে ব্যারাকপুর কোর্টের ধার থেকে কুড়িয়ে এনেছিল এক মানবিক মানুষ ।
তখন থেকে আত্মজার মতই নিজের সংসারে একটু-একটু করে বড় করে
লেখা পড়া শেখাচ্ছিলেন ওকে। তারপর দিন রাত্রির মতই সত্যি হয়ে একদিন মাটি পার থেকে আকাশ পারে চলে গেলেন পালক পিতা এবং আর একদিন মা ও।
ওকে রেখে অন্যত্র চলে গেল রক্তের সম্পর্ক হীন অন্য ভাই-বোনেরা।
পালক পিতার কোর্ট মারফত লিখে দেওয়া কোয়ার্টারটায়-এক সংগে থাকতে থাকতেই মেয়েটি- একেবারেই একা হয়ে পরাধীন হয়ে গেল। নিজের জীবনটাকে ইতিহাস        পড়া-পরাধীন ভারতবর্ষের সংগে মিলিয়ে নিল সেই মুহূর্তে। সে হয়ে উঠল পরাধীন এক জীবন ভারতবর্ষ। অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে সে চাইল স্বাধীনতা বিপ্লব, চাইল মুক্তির স্বাদ, চলল আর এক জীবন স্বাধীনতা আন্দোলন, একা এক মেয়েতে চলল বিপ্লব, সংগ্রাম,জীবন মুক্তির লড়াই। নামল বাস্তব যুদ্ধে ৷ শুরু করল বাড়িতে-বাড়িতে পেপার দেওয়ার কাজ। পেপার ফেরি থেকে ফিরে যা হোক দু’টো ভাতে ভাত ফুটিয়ে তা খেয়েই রোজ ক্লাস করতে চলে যায় কলেজে ৷
আজ পনেরোই আগস্ট সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে,মেয়েটি ঠিক এসে ডাক দিল-পেপার…..,
আমি ছাতা মাথায় দিয়ে ওর কাছাকাছি হলাম, অতি যত্ন ক’রে পেপার গুলো সাইকেলের হ্যান্ডেলে পলিথিন মুড়ে ঢেকে নিয়েছে, দেখলাম ওর পরনে গেরুয়া-সাদার টি সার্ট আর সবুজ প্যান্ট, ঠিক যেন জাতীয় পতাকা জড়ানো –ও।
আমি পেপার হাতে নিতে নিতেই তড়-তড় করে বড় ফোঁটায় বৃষ্টি এল,
তাড়াতাড়ি সামনের বাড়ির সানসেডের নিচে
নিজের গায়ে সাইকেলটা হেলিয়ে নিয়ে
দাঁড়িয়ে পড়ল  ‘পেপার মেয়ে ‘ ৷
আমি বললুম কিরে-ছাতা নেই?
চেনা মুখের সৌজন্য হাসি হেসে বলল-
না,কাকু ছাতা নেই,স্বাধীনতা তো আছে । রাস্তার এপারে ছাতা মাথায় আমি,ওপারে খালি মাথায় পেপার মেয়েতে সত্যিই আজ প্রথম দেখছি স্বাধীনতার জীবন্ত রূপ। দেখছি- ভারতবর্ষের রক্ত সম্পর্কিত এক আত্মজাকে, ভাবছি বিরাট ভারতবর্ষকে নিয়ে ওর থাকার ছোট ঘরটাকে।

——————————————————————
আগুন


আগুন ফুরিয়ে আসে
প্রাণ ঝরার দীর্ঘ বৃষ্টি পতনে ৷
ঈশ্বর আরাধনায় বুকের দীপ্ত আগুন
জ্বলে ওঠেনা আর ৷
আগুনে পৃথিবী নিশ্চিন্ত হওয়ার আগুন নেই,
নেই জ্বালানিতে জ্বলতে অরণ্য,
নেই পাথর ঘর্ষণে আগুন জ্বালানোর
দেহয় আগ্নেয় তেজ ৷
কাঠি – কুটোয় অগ্নি সংযোগের
একটুও আগুন নেই কোথাও ,
যে আগুন জ্বলে প্রাণ শক্তি বাঁচানোর খাদ্য ফুটবে,
গরম ভাতের মতোই ছড়াবে জীবন উষ্ণতা ৷
আগুনের অভাবে প্রজ্জ্বোলিত হয়না সেই প্রাণ শিখা,
আগুন অভাবে নিভে যায় জাগার আগুন,

ফুরিয়ে যায় পৃথিবী শুদ্ধের সব আগুনই ৷



সংবাদটি শেয়ার করুন