প্রবাসের সংবাদ

মানবপাচার চক্রের দুই গডফাদার গ্রেপ্তার

গডফাদার-গ্রেপ্তার

মানবপাচার চক্রের দুই গডফাদার গ্রেপ্তার

হাসান আল জাভেদ ||| ইউরোপে উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে মানুষজনকে পাচারের পর পথিমধ্যে জিম্মি করে রেখে দেশে অবস্থানরত স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় এবং লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে ২৬ বাংলাদেশি হত্যাকা-ে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে ইন্টারপোল। পুলিশের আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির করা মোস্ট ওয়ান্টেড (রেড লিস্টেড) তালিকায় থাকা এ দুজন হলেন কিশোরগঞ্জের জাফর ইকবাল এবং শরীয়তপুরের শাহাদাত হোসেন।

মানবপাচারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এ দুই গডফাদারকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৫ জানুয়ারি ইতালির কসেঞ্জা শহরে জাফর ইকবাল গ্রেপ্তার হন। তাকে দেশে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে পুলিশ। অন্যদিকে মাদারীপুর জেলায় দায়ের হওয়া মানবপাচারের একটি মামলায় গত ৮ নভেম্বর দুবাই থেকে ফেরার পর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন শাহাদাত হোসেন।

গ্রেপ্তারের পর তাকে মাদারীপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে শাহাদতকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পারে সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম আক্তারুজ্জামান দুজনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, উচ্চ বেতনে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানির নামে পাচারের পর ভুক্তভোগীদের অপহরণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়কালে লিবিয়ার মিসদাহ মরুভূমিতে গত বছরের মে মাসে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ১১ বাংলাদেশি আহত হন। এ বিষয়ে তদন্তের পর বিদেশে পলাতক আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী ছয় গডফাদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান বলেন, লিবীয় মাফিয়াদের হাতে যে ২৬ বাংলাদেশি খুন হয়েছেন, তাদের মধ্যে আকাশ ওরফে সাদ্দাম হোসেন, মাহবুব, মোহাম্মদ আলী, মাসুদ মিয়া ও রাজনকে পাচার করে গডফাদার জাফর ইকবালের নেতৃত্বাধীন চক্র। একই ঘটনায় সজল, জানু মিয়া ও সৌরভ নামে আরও তিনজন আহত হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে।

অন্যদিকে শাহাদাত হোসেনের চক্রের মাধ্যমে পাচার হওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে লিবীয় মাফিয়াদের হাতে খুন হন মাদারীপুরের শামীম হাওলাদার।

গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সিআইডির আবেদনে ইন্টারপোলে তালিকাভুক্ত হওয়া পলাতক ছয় মানবপাচারকারী গডফাদার হলেন- জাফর ইকবাল, তানজিরুল ইসলাম, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা ও মিন্টু মিয়া। তাদের মধ্যে নজরুলের বাড়ি মাদারীপুরে, শাহাদাত হোসেনের পাসপোর্টের ঠিকানা ঢাকায় হলেও গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর। অন্য চারজনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।

সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পলাতক শাহাদাত হোসেন ও নজরুল ইসলাম মোল্লা একই গ্রুপের। মাদারীপুর-শরীয়তপুরে ইতালি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর তরুণ-মধ্যবয়সীদের উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে লিবিয়ায় পাচার করত এ চক্র।

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির অনুমতি নেই। কিন্তু মানবপাচারকারী চক্রের স্থানীয় দালালরা বিভিন্ন জেলা, বিশেষ করে মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট জেলার তরুণদের ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, সাইপ্রাস পাঠানোর প্রলোভন দেখাত। ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত এভাবে বিদেশপ্রত্যাশীদের ঢাকায় এনে জড়ো করে আকাশপথের চারটি রুট ব্যবহার করে লিবিয়া পাঠাত। এ ক্ষেত্রে দুবাইয়ের এক মাসের ট্রাভেল ভিসা সংগ্রহ বা ভারতে অবস্থিত লিবিয়ার দূতাবাস থেকে ট্রাভেল ভিসা সংগ্রহ করত চক্রের সদস্যরা।

২৮ মে লিবিয়ার মিসদাহ মরুভূমিতে স্থানীয় মাফিয়াদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির পরিবার এবং প্রাণে বেঁচে যাওয়া ১১ জনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। সিআইডি মামলার তদন্ত শুরু করে, পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে তৃণমূল পর্যায়ের দালালদের পরিচয় থেকে শুরু করে পাচারের রুট এবং পাচারকারী চক্রের গডফাদারদের তালিকা ও তথ্য-প্রমাণ পায় পুলিশ।

ডিবির উপকমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. মশিউর রহমান বলেন, ইউরোপ পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ভিসা প্রদানের আগেই দালালচক্র ১০-১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করত। লিবিয়ায় পাঠানোর নামে একই পরিমাণ টাকা নেওয়া হয়। এর পর ইউরোপ গমনপ্রত্যাশীদের বেনগাজির মালগুদামে রেখে নগদ অর্থ কেড়ে নেওয়াসহ মুক্তিপণ আদায়ের জন্য পানি-খাদ্য বন্ধ রাখা এবং ইউরোপের পাঠানোর বাকি টাকা আদায়ের অজুহাতে বর্বর শারীরিক নির্যাতন, অত্যাচার করা হতো। বাংলাদেশি ছাড়াও লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনী সরাসরি অংশ নিত; টাকা আদায়ে জিম্মি বাংলাদেশিদের ওপর চালাত বর্বরোচিত নির্যাতন। তখন বেঁচে থাকার জন্য মোবাইল ফোন বা অ্যাপসে দেশে অবস্থানরত স্বজনদের কাছে টাকা পাঠানোর মিনতি জানাতেন ভুক্তভোগীরা। এ পণ বাংলাদেশে অবস্থানরত ওই চক্রের স্থানীয় দালালরা বিকাশ, রকেটসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে দিত যথাস্থানে, চক্রের গডফাদারদের কাছে।

সূত্রঃ আমাদের সময়

 

এসএস/সিএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন