ফিচার্ড বিশ্ব

হিটলার থেকে পুটলার

হিটলার থেকে পুটলার

সাজেদুল হক।।

পেটানো শরীর। ভালোবাসেন কারাতে, কার রেসিং। চতুর গোয়েন্দা। সাবেক কেজিবি এজেন্ট। দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ। বাকি জীবনও তা থাকবেন সেটা অনেকটাই নিশ্চিত। ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত এখন পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নাম। রক্তাক্ত বৃদ্ধা।

ছবিটি ছাপা হয়েছে । বৃটিশ মিডিয়া শিরোনাম করেছে, পুতিনের হাতে রক্তের দাগ। যুদ্ধের নেশা অবশ্য তার জন্য নতুন কিছু নয়। মসনদে বসার আগেই হারিয়ে যাওয়া সোভিয়েত প্রভাব ফেরানোর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। রাশিয়াকে তিনি জড়িয়েছেন একাধিক রণাঙ্গনে। এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই তার।

মাস খানেক ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইউক্রেন আক্রমণের। সীমান্তে জড়ো করেন হাজার হাজার সেনা। বলা হয়, যুদ্ধের শুরুতে মারা যায় সত্য। কিন্তু পুতিন এবার সত্যকে মেরে ফেলেন যুদ্ধ শুরুর আগেই।  বারবার বলতে থাকেন, ইউক্রেনে হামলার কোনো অভিপ্রায় নেই তার। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা আগেই খবর পেয়ে যান। শঙ্কা প্রকাশ করেন, যেকোনো মুহূর্তে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করবে। বিশেষ করে জো বাইডেন ছিলেন নিশ্চিত। শেষ পর্যন্ত সে আশঙ্কাই সত্য হয়। বৃহস্পতিবার টিভি পর্দায় হাজির হন পুতিন। ঘোষণা দেন যুদ্ধের। এর পরপরই শুরু হয় হামলা। বৃষ্টির মতো মিসাইল নিক্ষেপ। চারদিন হলো। আগ্রাসন চলছে। লড়াইয়ের ময়দানে ইউক্রেন একা। অনেকটাই অসহায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ অবশ্য পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনের। অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে কয়েকটি দেশ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তেলের বাজার এরইমধ্যে টালমাটাল। রণাঙ্গনে প্রাণহানি বাড়ছে।

এই যখন অবস্থা তখন আলোচনায় এসেছে আরেকটি নাম। এডলফ হিটলার। জার্মানির এই নাৎসি লিডার হত্যা করেন লাখ লাখ মানুষকে। যুদ্ধবাজ হিসেবে কুখ্যাতি পান সারা দুনিয়ায়। ভ্লাদিমির পুতিনকে এখন অনেকেই তুলনা করছেন হিটলারের সঙ্গে। এটা অবশ্য অস্বীকারের জো নেই, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন পুতিন। নিজেকে প্রমাণ করেছেন এক ঝানু খেলোয়াড় হিসেবে। ২০১৮ সালে এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি, কেউ আমাদের কথা শুনতে চায়নি। কিন্তু এখন আমাদের কথা শুনছে।’ হয়তো পুতিন রাশিয়াকে একটি ভীতি সঞ্চারক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। দেশের ভেতরে এবং বাইরে। এবং সেটা তিনি পেরেছেনও বটে। কিন্তু কিসের বিনিময়ে? অনেক প্রশ্নই উত্থাপিত হচ্ছে। ব্যাটলে জয়ের পথে রয়েছেন পুতিন। কিন্তু যুদ্ধে কি জিততে পারবেন? সহজ করে বললে, ছোট যুদ্ধে তিনি হয়তো জিতবেন। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী যে সংঘাতের শুরু হলো তাতে কি তার জেতা সম্ভব? নাকি সব রাশিয়ানদেরই চড়া মূল্য দিতে হবে এর বিনিময়ে। অর্থনৈতিক অবরোধ উপেক্ষা করে তিনি কি টিকে থাকতে পারবেন? পারলে কি অন্য দেশগুলোকেও টার্গেট করবেন?

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে বিশ শতকের অন্যতম বিপর্যয় মনে করেন পুতিন। ছোট বেলাতেই স্বপ্ন দেখতেন কেজিবিতে যোগ দেয়ার। সে স্বপ্ন পূরণও হয় তার। কিন্তু ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত এই গোয়েন্দা সংস্থায় পুতিনের অভিজ্ঞতা ছিল অম্ল-মধুর। এক পর্যায়ে পদত্যাগও করেন। কিন্তু রাজনীতিতে তার উত্থান দ্রুত এবং নাটকীয়। প্রথম দিকে তাকে পশ্চিমের বন্ধুই মনে করা হতো। এমনকি প্রেসিডেন্ট বুশ তাকে গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে প্রশংসাও করেছিলেন। ইউরোপের অনেক নেতাই ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ। কিন্তু পশ্চিমের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। নিষ্ঠুরভাবে বিরোধী দল ও মত দমন এবং অর্থনীতির ওপর রাষ্ট্রের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ক্রাইমিয়া অভিযান এবং বাশার আল আসাদকে রক্ষায় রণাঙ্গনে রাশিয়াকে শামিল করা পশ্চিম থেকে তাকে পুরোই বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

সব একনায়ক ও স্বৈরশাসকদের সিলেবাসে আশ্চর্য কিছু মিল থাকে। বিরোধীদের দমন। সমালোচকদের প্রতি নিষ্ঠুরতা। মিডিয়ার কণ্ঠরোধ। এসবই সর্বোচ্চ পর্যায়ে অনুসরণ করেছেন পুতিন। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী যখন যা হওয়ার হয়েছেন। বিরোধীদের দাঁড়াতে দেননি কোথাও। আত্মপ্রচারণায় মগ্ন থেকেছেন। তার সম্পদের পাহাড় আর বান্ধবী নিয়ে কানাঘুষা হয়েছে বহুবার। পারমাণবিক বোমা ও বিশাল সেনাবাহিনী পুতিনের হাতকে আরও শক্তিশালী করেছে। আমেরিকা এবং ইউরোপকে চ্যালেঞ্জ করেছেন বারবার। স্নায়ুযুদ্ধের পর যা ছিল অনেকটাই নজিরবিহীন। ৬৯ বছর বয়সী পুতিন কুংফু কারাতেতে দক্ষ হওয়ার কারণেই কিনা আলোচনার টেবিলে সমস্যার সমাধানে আগ্রহ দেখান কম। বোমারু বিমান যেন তার বড্ড পছন্দ। পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে পশ্চিমও সরাসরি তার সঙ্গে যুদ্ধে উৎসাহী নয়। কয়েকবারই বলা হয়েছে, বিশ্ব যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে কয়েক মিনিট দূরে ছিল। বলাই বাহুল্য, এমনটা কারও জন্যই সুখকর হবে না।

হিটলারের ফরাসি শিক্ষক এডওয়ার্ড হুয়েমার বলেছিলেন, হিটলার নিঃসন্দেহে মেধাবী ছিল। তবে ভারসাম্যহীনও ছিল। এখন পুতিনের ক্ষেত্রেও এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। তাই বিশ্বব্যাপী বলাবলি হচ্ছে, পুতিন কি তাহলে পুটলার হয়ে গেলেন? তিনি যে হিটলারের পথ ধরেছেন, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ৮১ বছর আগে এডলফ হিটলার একইভাবে ইউক্রেনে প্রবেশ করেছিলেন। যেমনটা করলেন নব হিটলার পুতিন। বলে রাখা ভালো, যেকোনো আগ্রাসনই নিন্দনীয়।- মানবজমিন





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন