পত্রিকার পাতা থেকে

হিন্দুদের ত্রাণ দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান (ভিডিওসহ)

হিন্দুদের ত্রাণ দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান (ভিডিওসহ) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানানোর অভিযোগ উঠেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বিরুদ্ধে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে সঙ্কটে পড়া শ্রীমঙ্গলের সদর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ১০০ পরিবারের মধ্যে গত ২২ এপ্রিল ত্রাণ বিতরণ করে ‘বাংলা এইড’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেদিন এলাকার ৮০টি মুসলিম ও ২০টি হিন্দু পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কথা জানান বাংলা এইডের সদস্যরা।

বাংলা এইডের ফেসবুক পেজে দেওয়া ত্রাণ বিতরণের একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, ত্রাণ বিতরণ করে বাংলা এইডের এক স্বেচ্ছাসেবী বলছেন, ভারতে হিন্দুরা মুসলমানদের নির্যাতন করলেও এখানে আমরা হিন্দুদেরও ত্রাণ দিয়েছি। এখন কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

এরপর ওই স্বেচ্ছাসেবী যুবক কথা বলেন ত্রাণ গ্রহীতা এক হিন্দু নারীর সাথে। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তিনি ওই নারীকে বলেন, ‘যদি আপনার কাছে ইসলাম ধর্ম রাইট লাগে তবে আপনারা ইসলাম ধর্মে আসেন। আমরা না করবো না।’

বাংলা এইডের ফেসবুক পেইজের এই লাইভ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ দিয়ে এমন ধর্ম প্রচারের সমালোচনা করেন।

এই ভিডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এই দুর্যোগ মুহূর্তে ত্রাণ বিতরণের নামে কেউ যদি ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসতে চায় এবং এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্ম গ্রহণের সুযোগ নিতে চায় সেটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। আমরা দেখবো তারা এটা কেন করলো। ভবিষ্যতে এটা যেন না হয় সে ব্যাপারে তাদের সতর্ক করবো যাতে এধরনের ঘটনা আর না ঘটে। প্রয়োজনে আমি মাননীয় জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে চিঠি দেব।

ফেসবুকে ওই ভিডিও শেয়ার দিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত লিখেন, জানতে পারলাম যে গত ২২ এপ্রিল শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়ে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করার কথা বলা হয়েছে। আমি তার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা একটি শান্তিপ্রিয় এলাকা। এখানে হিন্দু, মুসলমানের বন্ধন বড় অটুট। যারা এরকম উক্তি করেছে, ধর্মান্তরিত শব্দটির ব্যবহার করেছে। তারা ধর্মের মর্ম জানে না আমার ব্যক্তিগত ধারনা উক্ত লোকগুলির আমাদের এলাকার নয়।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. হরিপদ রায় বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি এখনও দেখি নি। তবে যতটুকু শুনেছি তাতে মনে হয়েছে এটা একটা অনুচিত কাজ হয়েছে। ত্রাণ সবার জন্য। বিশ্বের এই ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে যেখানে সর্বধর্মের সম্প্রীতি বজায় করে আমরা চলছি সেখানে এরকম ঘটনা নিন্দনীয়।

 

 

শ্রীমঙ্গলের কবি ও নাট্যকার জহিরুল মিঠু বলেন, ত্রাণ হচ্ছে অসহায় মানুষদের জন্য এখানে হিন্দু মুসলিম দেখে সাহায্য করার তো কথা না। এরকম বিষয়টা আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা উচিত। ধর্মান্তরিত করার আহ্বান নিয়ে ত্রাণ বিতরণটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এতে ত্রাণ বিতরণের আসল উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হয়। এটা গর্হিত অপরাধ। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনের এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলা এইডের সংগঠক সুমন মিয়া রোববার সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, আমার উদ্দেশ্য ছিলো গরীব অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করা। এখানে আমি ধর্মীয় কোন বিষয় নিয়ে কোন কথা বলিনি। আমার উদ্দেশ্য ছিলো নোয়াগাঁও এলাকায় ১০০ মুসলিম ফ্যামিলিকে সাহায্য করা কিন্তু পরে আমার মনে হলো, যারা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের সবারই ত্রাণ পাওয়া দরকার। তাই হিন্দুদেরও ত্রাণ দেই। এসময় আমি তাদেরকে (হিন্দুদের) বুঝাতে চেয়েছি যে ভারতে মুসলিমদের উপর কত নির্যাতন হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে আমরা হিন্দুদের কত রেসপেক্ট, ভালোবাসা রাখি আমি শুধু এই জিনিসটা বুঝাতে চেয়েছি। তাছাড়া আমি সরাসরি তাদেরকে ইসলাম ধর্মে আসতে বলিনি। আমি বলেছি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে আপনারা আমাদের ধর্মে আসতে পারেন।

হিন্দুদের ত্রাণ দিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান (ভিডিওসহ) । ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন:

-সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন