বিশ্ব

হোয়াইট হাউসের দুয়ারে বাইডেন! তারপরেও…

হোয়াইট হাউসের দুয়ারে

হোয়াইট হাউসের দুয়ারে বাইডেন! তারপরেও…

চূড়ান্ত ফলের জন্য এখনো অপেক্ষার পালা। তবে ইলেকটোরাল কলেজের হিসাব অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসের দরজায় কড়া নাড়ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। খাতা-কলমের হিসাবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ১২টা) বেশ পিছিয়ে ছিলেন পুনর্নির্বাচন প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও আত্মপ্রেমী এ বান্দা হাল ছাড়তে নারাজ। টুইট-হামলা-মামলা সব দিক দিয়েই এগিয়ে তিনি। ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন শুধু ভোটে। সেটা মোট ভোটগণনা বা রাজ্য বিবেচনা—যে বিচারেই নেওয়া হোক না কেন। আচার-আচরণ-চরিত্রে ট্রাম্পের ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে অবস্থান করা বাইডেন গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত মোট ২৫৩ ইলেকটরের ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন। ছুঁতে হবে ম্যাজিক ফিগার ২৭০। বাকি ১৭ ভোটের অপেক্ষাও খুব দীর্ঘায়িত হবে না বলেই আভাস মিলছে।

এত উত্তেজনার ভোট বিশ্ব বহুকাল দেখেনি। ভোটগ্রহণের তিন দিন পার হয়ে যাওয়ার পরও ফলাফল নয়, ফলের গতিপ্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে মাত্র। ছয় রাজ্য—আলাস্কা (৩), আরিজোনা (১১), নেভাডা (৬), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৫), জর্জিয়া (১৬) ও পেনসিলভানিয়া (২০) থেকে এখনো ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এগুলো সম্পর্কে দলকানা মার্কিন গণমাধ্যম যে যার মতো করে পূর্বানুমান প্রকাশ করছে। ফলে চূড়ান্ত বিচারে কোন রাজ্য কে পাচ্ছেন তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রাপ্ত ফল অনুসারে দুটি রাজ্যে (নেভাডা ও আরিজোনা) এগিয়ে আছেন বাইডেন। বাকি চারটিতে ট্রাম্প। বাইডেন যদি শুধু নেভাডায় জয় পান তাহলেই তিনি পৌঁছে যাবেন ২৭০-এ। তাঁর নামের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সিলমোহর পড়ে যাবে। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস ধরে রাখতে গেলে ফলাফল ঘোষণা হয়নি এমন ছয়টি রাজ্যে অবশ্যই জয় পেতে হবে ট্রাম্পকে। বাস্তবতা বিবেচনায় যা প্রায় অসম্ভব। এ পর্যন্ত বাইডেন পপুলার ভোট পেয়েছেন রেকর্ড পরিমাণ সাত কোটির বেশি। ট্রাম্পও ছাড়িয়েছেন ছয় কোটি। ২০১৬ সালের নির্বাচনের চেয়েও ট্রাম্পের ভোট ৪০ লাখ বেড়েছে।

এমন এক হিসাব-নিকাশের মধ্যে দাঁড়িয়ে গত বুধবার স্থানীয় সময় দুপুরে আবারও সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এটা শুধু আমার জয় নয়, এটা আমেরিকার মানুষের জয়, আমেরিকার গণতন্ত্রের জয়।’ সব ভোটগণনা সম্পন্নের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমি এখানে বিজয় ঘোষণা করতে আসিনি। জানাতে এসেছি, গণনা শেষ হওয়ার পর আমরাই জয়ী হব।’ তিনি আরো বলেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন। বাকি দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ফল প্রকাশ করা হলেই তার জয় নিশ্চিত হবে। নিজ রাজ্য ডেলাওয়ারের উইলমিটনে তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখানে বিজয় ঘোষণা করতে আসিনি। জানাতে এসেছি, গণনা শেষ হওয়ার পর আমরাই জয়ী হব।’ উইসকনসিন ও মিশিগানকে পকেটে পোরার পর রানিংমেট কমলা হ্যারিসকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন বাইডেন। ৭৭ বছর বয়সী এই প্রাজ্ঞ রাজনীতিক আরো বলেন, ‘বিরোধীদের শত্রু বিবেচনা করা বন্ধ করতে হবে। আমেরিকান হিসেবে যা আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে তা বিভাজন সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোর চেয়ে অনেক মহান।’

ট্রাম্পের টুইট

ওদিকে থেমে নেই ট্রাম্পও। এক টুইটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, জর্জিয়া, পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনায় তিনি জয় পেয়েছেন। যদিও এই রাজ্যগুলোতে এখনো ভোটগণনা চলছে। গতকাল দিনভর প্রায় চুপচাপই ছিলেন ট্রাম্প। বিকেলের দিকে দেওয়া এক টুইটে বলেন, ‘ইলেকটোরাল ভোটের স্বার্থে আমরা দাবি করছি, কমনওয়েলথ অব পেনসিলভানিয়া, অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া ও অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়াতে আমরা জয় পেয়েছি। এই রাজ্যগুলোতে আমরাই এগিয়ে আছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘মিশিগানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ব্যালট মূল গণনায় শামিল হয়েছে। এ রাজ্যেও আমরাই জয়ী হয়েছি।’ গত বুধবার দেওয়া আরেক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং এই পুরো প্রক্রিয়ার যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। আমাদের আইনজীবীরা কাজ করছেন। আর এটা নিয়েই এখন আলোচনা করা উচিত।’

ট্রাম্প শিবিরের মামলা

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু টুইট করেই বসে আছেন—এমন নয়। তার প্রচার শিবির থেকে এরই মধ্যে মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়ায় ভোটের স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ করে রাজ্যগুলোর আদালতে মামলা করেছে। যদিও অস্বচ্ছতার কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। উইসকনসিনে ভোট পুনর্গণনার দাবিও করেছে ট্রাম্প শিবির। যদিও পেনসিলভানিয়ার মামলা পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি গিলিয়ানিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি ভোটে জালিয়াতি করার সমন্বিত চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

দেরি হচ্ছে কেন?

ইতিহাসে এমন ভোটগণনা নজিরবিহীন। নির্বাচনের তিন দিন পার করেও কোটি কোটি ভোট গোনার কাজ চলছে। এর মূল কারণ আগাম ভোট। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ভোটারসংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে ভোট পড়েছে এবার, ৬৭%। সংখ্যায় অনুবাদ করলে যা দাঁড়ায় ১৬ কোটির বেশি। এর একটা বড় অংশ এসেছে আগাম ভোট থেকে। গত মার্চ মাস থেকে বিশ্বজুড়ে যে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তার বড় আঁচড় পড়ে যুক্তরাষ্ট্রেও। দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাস সংক্রমণে মারা যায়। আক্রান্তের সংখ্যাও কোটি পেরিয়ে যায়। শুধু গতকালই এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রের এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসের কল্যাণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়েই এবার রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়ে। ১৬ কোটি ভোটের ১১ কোটি ব্যালটই এসেছে আগাম ভোট হিসাবে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় কোটি মেইল ইন ব্যালট বা ডাকযোগে আসা ভোট। বাকিগুলো কেন্দ্রে গিয়ে দেওয়া।

মূলত এই ডাকের ব্যালটগুলো গুনতেই সময় লেগে যাচ্ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় মাত্র তিন হাজার ডাকের ব্যালট খোলে, বৈধতা পরীক্ষা করে গোনাগুনতির কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এ কাজও আবার সব রাজ্যে একভাবে করা হয় না। যেমন নর্থ ক্যারোলাইনায় আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ডাকের ব্যালট গ্রহণ করা হবে। পেনসিলভানিয়ার ক্ষেত্রে এ মেয়াদ আজ ৬ নভেম্বর পর্যন্ত। আবার ব্যালটের বৈধতার ক্ষেত্রেও একেক রাজ্যের বিধান একেক রকম। কোনো কোনো রাজ্যে ব্যালটের সঙ্গে ভোটদাতাকে শনাক্তকারীর পরিচয়ও জুড়ে দিতে হয়।

আরিজোনা সংকট

১১ ইলেকটরের এ রাজ্যের আগাম ফল ঘোষণা করে রিপাবলিকান ঘেঁষা গণমাধ্যম ফক্স নিউজ। তারা এ রাজ্যে বাইডেনকে জয়ী ঘোষণার পর আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যম একই ফল প্রচার করে। পরে দেখা যায়, ঢাকঢোল পিটিয়ে ফল প্রকাশ করা হলেও রাজ্যের বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে ভোট গোনা চলছে। আবার সব হিসাব পিছিয়ে যায়। ভোটগণনা কেন্দ্রগুলোর সামনে অস্ত্র হাতে বিক্ষোভ শুরু করে ট্রাম্প সমর্থকরা। তারা ‘ফক্স আরিজোনা খেয়েছে’ বলেও স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি উত্তেজক হয়ে উঠলে গণনাকেন্দ্রে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকে ভোটের ফল প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। কখন ফলাফল জানা যাবে তাও জানা যায়নি।

মিশিগানের বেসরকারি ফল ঘোষণা হয়ে গেছে। বাইডেন পেয়েছেন ডেমোক্রেটিক এ রাজ্যটি। তবে রাজ্যের মূল শহর ট্রাম্পের শ্বেতাঙ্গ সমর্থকরা অস্ত্র হাতে গত বুধবার রাত থেকে রাস্তায়। এরা ভোটগণনা কেন্দ্রের সামনে জড়ো হয়ে ‘ভোট গোনা বন্ধ করো’ বলে স্লোগান দেয়। আবার আরিজোনায় ট্রাম্পের সমর্থকরাই ভোটগণনার দাবিতে বিক্ষোভ করে। আবার জর্জিয়াতেও ট্রাম্পের সমর্থকদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এখানেও তারা ভোটগণনা বন্ধের দাবি করে। বিষয়টি অনেকটা মামাবাড়ির আবদারের মতো, যে রাজ্যে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন, সেখানে ভোটগণনা বন্ধ করতে হবে। আর ট্রাম্প পিছিয়ে আছেন যেখানে, সেখানে ভোটগণনা চলবে। ধারণা করা হচ্ছে, আজ মোটামুটি পূর্ণাঙ্গ ফল পাওয়া যাবে।

এদিকে ট্রাম্প কারচুপির দাবি করলেও ইউরোপের একটি পর্যবেক্ষক দল জানিয়েছে, নির্বাচনে তারা কোনো অনিয়ম দেখেনি। সূত্র : এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান।

 

এসএস/সিএ

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন