কানাডার সংবাদ ফিচার্ড

৭১’এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি

৭১’এ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা।

কানাডার কালগেরির বাংলাদেশ সেন্টারে ব্যতিক্রমী এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরল সম্মান জানানোর মধ্য দিয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা বাতাসে লাশের গন্ধ, আগুনে পুড়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন গ্রামের পর গ্রাম, বাবার সামনে মা আর মেয়ের শ্রীলতাহানি, ঘরে অশীতিপর বৃদ্ধের ঘাড়ে বেয়নেটের আঘাত, প্রতিবেশীদের চিৎকার আর আর্তনাতে ভারী হয়ে যাওয়া সেই লোমহর্ষক মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই অশ্রুসিক্ত আর আবেগে বিমর্ষ হয়ে পড়েন কানাডার ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধারা।

বিদেশের মাটিতে প্রবাসীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিলেন একাত্তরের সেই রণাঙ্গনে। অনাড়ম্বর এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে চরমপত্র, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় কিভাবে শক্তি সঞ্চার করে যুদ্ধ করেছিলেন তার বর্ণনা করেন।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও বাঙালি সত্তাকে তুলে ধরাই ছিল অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা, সম্মাননা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন ক্যলগেরির এবিএম কলেজ এবং আলবার্টার প্রথম বাংলা অনলাইন পোর্টাল প্রবাস বাংলা ভয়েস। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং বঙ্গবন্ধু সহ সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে ৭১এর রণাঙ্গনের যুদ্ধকালীন কমান্ডার এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরি’র সভাপতি কয়েস চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন প্রবাস বাংলা ভয়েস এর প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দাস শুভ্র। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইফাত জাহান চৈতি, তাসফিন হোসেন তপু এবং শুভ মজুমদার।

অনুষ্ঠানে যোদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেল হোসেন পিন্টু, মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাহফুজুল হক মিনু, এবং সুফল চন্দ্র বৈরাগী কে সম্মাননা ও সনদপত্র প্রদান করেন যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগেরির প্রফেসর কাজী হাসান, কলামিস্ট,উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান এবং বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি কয়েস চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা সহ আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যালগেরির সভাপতি কয়েস চৌধুরী,কেলগেরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কাজী হাসান,আলবার্টা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী মো. কাদির, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল্লা রফিক, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও সিলেট এসোসিয়েশনের সভাপতি রুপক দত্ত, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কিরন বনিক শংকর, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও আলবার্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যনথনি জ্যাকব, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ইফাত জাহান চৈতি, তাসফিন হোসেন তপু এবং শুভ মজুমদার।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন গুরুপসাদ হোম চৌধুরী, প্রকৃতি দত্ত, প্রার্থনা দত্ত এবং চন্দ্রিমা পোদ্দার। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি অধ্যাপক, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডঃ জেবুন্নেছা চপলা।

বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় ডিসেম্বর মাসেই বাঙালি পেয়েছিল তার বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা, পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়ে নয় মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার পর পৃথিবীর বুকে এ মাসেই রচিত হয়েছিল এক অমর গাথা– বাঙালির স্বাধীনতা, একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। সেদিন এই পতাকা কে সমুন্নত রাখতে যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন, তাদের অনেকেই আমাদের মাঝে নেই, যারা বেঁচে আছেন তাদের কে বিরল সম্মান দেখানোর মধ্যে দিয়ে প্রবাসীরা যেন সমগ্র বাংলাদেশ কে সম্মান দেখালেন।



সংবাদটি শেয়ার করুন