জাতিসংঘ প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন

নিউইয়র্ক, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩: আজ যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্ক-এ মহান বিজয় দিবস-২০২৩ উদযাপন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসী বাংলাদেশী।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিকেল সাড়ে ছয়টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। আলোচনা পর্ব শুরুর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গকারী বীর শহীদগণের স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন ও তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এর পর  উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা তাঁদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আগত অতিথিদের আলোচনা শেষে সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতাসহ ১৫ আগস্টের শাহাদৎবরণকারী জাতির পিতার পরিবারের সকল সদস্য, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুইলাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর। বিগত কয়েক বছরে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, মেট্রো রেল ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণসহ নানাবিধ মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়ন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম নির্দেশক। বাংলাদেশ আজ ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।”

দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রসংগ টেনে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দারিদ্যের হার ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৫ শতাংশ যা ২০১০ সালে ছিল ১১.২ শতাংশ। রাষ্ট্র হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে  সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকলের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরনে দিয়েছেন বিশেষ অগ্রাধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত উদ্যোগ আজ জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া অতিমারি কোভিড-১৯ এর ধাক্কা এবং তদ্‌পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে যখন পৃথিবীর সকল দেশ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন, অর্থনীতির এমন প্রতিকূল সময়েও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে।”

প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনবহুল বাংলাদেশের প্রধান শক্তি তাঁর জনগণ আর প্রবাসীরা দেশের মায়া পেছনে ফেলে রাত দিন কষ্ট করে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি। এ প্রসঙ্গে তিনি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানান। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি আপনাদের দেশের সংস্কৃতি ও দেশের ইতিহাসকে লালন করতে হবে যাতে বিদেশে জন্মানো এবং বড় হওয়া আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে আর প্রকৃত ইতিহাস জেনে বড় হয়। আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, যে দেশেরই নাগরিক হই না কেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে বাঙ্গালী সংস্কৃতির লালন করে যাব, মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে আজ এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা করেন নিউইয়র্কস্থ বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের একদল শিল্পীবৃন্দ। অবশেষে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কেক কেটে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।



এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন