ফিচার্ড মত-মতান্তর

‘ডলারের কোন ধর্ম নেই’

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

‘ডলারের কোন ধর্ম নেই’

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্কনিউইয়র্কে রিয়েল-এষ্টেট ব্যবসায়ীরা নিজেদের ‘কালার-ব্লাইন্ড’ দাবি করে থাকেন, তাঁদের প্রশিক্ষণও ঐরকম। এঁরা সব ‘রং’ সবুজ দেখেন। কারণ, ডলারের রং সবুজ। ডলার সবাই ভালবাসে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান-মুসলমান-ইহুদি সবাই। ডলারের কোন ধর্ম নেই। এর মানে কি এই যে, কোন বস্তুর ধর্ম না থাকলে সবাই এঁকে ভালবাসেন? লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যেসব রাষ্ট্রের ধর্ম নেই, মানুষ সে-সব রাষ্ট্র পছন্দ করেন, এবং সেখানে বসতি গড়তে চান। এমনকি নিজ দেশকে যাঁরা ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসাবে দেখতে চান, তারাও ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে থাকতে পছন্দ করেন!

আমাদের এক সিনিয়র বন্ধু ড: জিতেন রায়, যাকে কিছু হিন্দু না-বুঝে ‘এন্টি-হিন্দু’ ভাবেন তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখলেন (মার্চ ২০২৪’র প্রথম সপ্তাহে), ‘ধর্ম না মেনেও আপনি আস্তিক হতে পারেন’। ধর্ম আমার এ লেখার বিষয় নয়, আস্তিক-নাস্তিকও নয়, আমি শুধু বলছি, ডলারের কোন ধর্ম নেই। ঠিক একই ভাবে বলা যায়, ‘ছোলার কোন ধর্ম নেই’? উঠতি বয়সে আমরা রাতে ছোলা ভিজিয়ে পরের দিন সকালে ব্যায়াম করে কাঁচা ছোলা খেয়ে মাসল বাড়ানোর প্রানান্ত চেষ্টা করেছি! ছোলার ধর্ম থাকলে একদল তা খেতো, অন্যরা খেতোনা।

খ্যাদ্যাভ্যাসের কথা বলছি না, বলছি ধর্ম না থাকলে কি হয়? পেয়াঁজেরও ধর্ম নেই! ধর্ম থাকলে রমজান মাসে বাংলাদেশের মানুষ ভারতীয় পেঁয়াজ খেতো না। রমজান উপলক্ষ্যে ভারত থেকে ৪০০ মেট্রিক টন ছোলা বাংলাদেশে এসেছে। বিপুল পরিমান পেঁয়াজ আগেই এসেছে। রমজানে ছোলা ও পেঁয়াজ প্রচুর চলে। মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজো ইফতারের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কেউ হয়তো বলতে পারেন, খেজুরের বদলে বড়ই দিয়ে ইফতার করতে, সেটি তাঁর বাক-স্বাধীনতা। ভাগ্য ভাল যে, ছোলা-মুড়ি  ও পেঁয়াজো বাদ দিতে বলেননি।

খেজুর বড়লোকের ইফতার আইটেম, গরিবের নয়, দাম বেশি। ছোলা, পেঁয়াজো গরিবের ইফতার আইটেম, তা সেই ছোলা বা পেঁয়াজ ভারত থেকে এলেও সমস্যা নেই। আসলে কিছুটা সমস্যা আছে, কারা যেন ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে? কে শোনে কার কথা! অর্থনীতির মূল হচ্ছে, চাহিদা থাকলে সরবরাহ হবেই, সেটা যেভাবেই হোক। ঠেকায় সাধ্য কার! স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে ব্যাপক শাড়ির অভাব ঘটে, চাহিদা পূরণ হয় চোরাই পথে। গরুর মত হেঁটে হেঁটে সীমান্ত পার হতে পারেনা বলে ছোলা ও পিয়াজ বৈধ পথে আসছে।

গরুকে বলা হয় ‘অবোধ’ প্রাণী, নিজের ভালোটাও বুঝেনা। ভারতীয়রা গরু খায়না; থাক না ব্যাটা ভারতে, অন্তত: প্রাণটা তো বাঁচবে! না, গরু হেঁটে হেঁটে ঘাস চিবাতে চিবাতে বাংলাদেশে ঢুকছেন ‘কোরবানি’ হবার জন্যে। একদল ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে আর এক দল বলছে, ‘ভারতীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’। ঈদে ঢাকার বাজারে ভারতীয় ‘লেহেঙ্গা’ নাকি বিক্রী শেষ! প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, ওদের বউরা শাড়ীগুলো ফেলে দেয়না কেন? যারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে তাদের দাবি, ভারতকে এর বাংলাদেশ নীতি পাল্টাতে হবে? তাদের গোস্বা ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ভারত এর স্বার্থ দেখবে সেটিই স্বাভাবিক, আপনি গোস্বা না করে পলিসি পাল্টান![email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন