সোশ্যাল মিডিয়া

সুজেয় শ্যাম : এক ব্যতিক্রমী চরিত্রের আদর্শিক এবং অসাম্প্রদায়িক মানুষ


সুজেয় শ্যাম : এক ব্যতিক্রমী চরিত্রের আদর্শিক এবং অসাম্প্রদায়িক মানুষ | অজয় পাল

অর্থ- বিত্ত, খ্যাতি- যশ, প্রভাব – প্রতিপত্তি, ক্ষমতার বিলাস, এমনকি দম্ভ -অহংবোধেরও কমতি নেই , এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের সমাজে অগণন । প্রকৃত মানুষের নিদারুণ আকাল । অথচ মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন , সৎ ও ন্যায়-নিষ্ঠ , আদর্শিক ও নির্লোভ, সর্বোপরি নিখাদ অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের মানুষের এখন চরম দুষ্প্রাপ্যতা । দূরবীন দিয়েও এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে সৌভাগ্যই বলতে হবে আমার , এই ঘরাণার দু’ চারজন মানুষের সান্নিধ্য লাভের দুর্লভ সুযোগ আমার জীবনে অবলীলায় এসে যায় , যারা প্রকৃত অর্থেই সাধু – সজ্জন মানুষ এবং আলোকিত জীবনের অধিকারী । এদেরই একজন , আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন এবং আদর্শিক মানুষ — সুজেয় শ্যাম । বাংলাদেশের বিশিষ্ট সঙ্গীতজন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীত- যোদ্ধা । এই মানুষটির সংস্পর্শ আমার জীবনের বাঁকে বাঁকে পরিবর্তনের উজ্জ্বল দিক নির্দেশনা দিয়েছে । আলোর পথে হাঁটার ইঙ্গিত করেছে। তাঁর কাছে আমার অন্তহীন ঋণ এবং কৃতজ্ঞতা ।
সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চলচ্চিত্র জগতের এক দুর্নিবার আকর্ষণে সিলেট ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমাতে বাধ্য হই । এর আগে পর্যন্ত সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম । ‘৭৫-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বাকশাল বাস্তবতায় দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেলে অমিও বেকার হয়ে পড়ি । ঠিক এই সময়েই চলচ্চিত্র জগতে ঠাঁই করে নেয়ার ভূত চেপে বসে ঘাড়ে । সেই ভূত কি আসলেই ভূত ছিলো ? আমি বলবো , না , এই ভূতটাই আমাকে সঠিক এক গন্তব্যে নিয়ে যায় । পেয়ে যাই সুজেয় শ্যামের দুর্লভ সান্নিধ্য ।
চিত্র পরিচালক মহিউদ্দিন রূপসনাতনের হাত ধরে
আমি , বিদ্যুৎ কর , সুপ্রিয় সিনহা আর অমিতাভ শ্যাম বাপুজী— এই চারজন গিয়ে উঠি সুজেয় শ্যামের ঢাকার ৫৭৮ নম্বর মগবাজার পেয়ারাবাগের বাসায় । নন্দিত কন্ঠশিল্পী শুভ্র দেবের মা আরতী মাসির ছোট ভাই এই সুজেয় শ্যাম । সঙ্গত কারণেই তিনি বাপুজী ছাড়া আমাদের সবার মামা । বাপুজী সুজেয় শ্যামদের সব ছোট ভাই । এই বাসায় ওঠার প্রথম দিনের স্মৃতি এখনো আমি ভুলতে পারিনা।
সুজেয় মামা আমাদের খুবই আন্তরিকতার সাথে বরণ করে নিয়ে নিমিষেই সবার সাথে একাত্ম হয়ে গেলেন । মামা একা থাকতেন ঢাকায় । মামী ডা: রুমা শ্যাম চাকরির সুবাদে সিলেটে । ঢাকার বাসায় মানুষ জনের ঠাসাঠাসি অবস্থা । বেতারের চাকরি ছাড়াও রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বেশিরভাগ সময় । রুজি- রোজগার বেশ ভালোই । অবসরে বাসায় সবার সাথে হাসি – ঠাট্টা ও রঙ্গ- রস ছাড়াও প্রার্থনা করে সময় কাটাতেন । প্রথমে পেয়ারাবাগ ও পরে পল্লবীর বাসায় আমি বহুদিন ছিলাম । দুটি বাসারই পরতে পরতে ছিলো সাংস্কৃতিক আবহ । এই দুই বাসায় আমি সুজেয় মামার সাথে একই ছাদের নিচে যাদের রাত্রি বাস করতে দেখেছি , তাদের তালিকাটি কিন্তু খুব একটা ছোটো নয় । তাঁর নিজের আত্মীয়- স্বজন ছাড়াও পেয়েছি নারায়ণ দে , আকিল ভাই , মঞ্জুদা , ইয়ামিন চৌধুরী , সুনামগঞ্জের এনাম ভাই , শিবু ভট্টাচার্য , হরিদাস দা ,কাজল দাস , সুবীর নন্দী , সঞ্জু নন্দী ,শেখর দেব , তপু চৌধুরী , অমিত শ্যাম পল ও সুজিত শ্যাম জন , আমার ছোট ভাই স্বপন পাল ,অমিয় বিকাশ শ্যাম বাদল , শ্রীমঙ্গলের কল্যাণ , বড়লেখার ফারুক ,রাজশাহীর আলতাফ হোসেন , হিমাংশু গোস্বামী , মাধব ভট্টাচার্য , মানস ভট্টাচার্য , ঝিলাম চৌধুরী , ডি কে সুবীর , প্রলয় ধর ,আজিজুর রহমান , দীজ লাল দাস ও গোপালদা সহ অনেককেই । আরো অনেকের নামই এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। আমি , বিদ্যুৎ কর আর সুপ্রিয় সিনহাতো ছিলামই । আর নিয়মিত আসা- যাওয়া ছিলো অগণন মানুষের । এদের মধ্যে পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা হারুণ মামা , ইসমত আহমদ চৌধুরী , বিদিত লাল দাস , ইনামুল হক চৌধুরী , এনামুল হক , সদর উদ্দিন চৌধুরী , দুলাল ভৌমিক , হিমাংশু বিশ্বাস , দিবাকর ধর রাম , এ কে আনাম , বিভাস কান্তি দে , বিশ্বজিৎ দাস গুপ্ত , অরিন্দম দত্ত চন্দন , দিজেন সিংহ , মোয়াজ্জেম হোসেন ,গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু , কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল , সুবল দত্ত ও রথীন্দ্রনাথ রায় ছাড়াও আরো অনেককেই আমি দেখেছি । সুজেয় মামার কারণেই তাঁর বাসায় ওস্তাদ আখতার সাদমানীর সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো । দুঃখের বিষয় ,এই তালিকার অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই । কেবল বেঁচে আছে প্রতিটি মানুষের ঝলমলে স্মৃতি।
সত্যিকার অর্থেই এক ব্যতিক্রমী চরিত্রের মানুষ এই সুজেয় শ্যাম । উদার মানবিকতার পাশাপাশি তাঁর সর্বাঙ্গ জুড়ে যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ , খুব কম মানুষের মধ্যেই সেটা আমি দেখেছি । বহুদিন আগের একটি ঘটনার কথা না বললেই নয় । পবিত্র ঈদুল আজহার পরদিনের ঘটনা । বেশ রাত করে আমি আর মামা একটি হোটেলে খেয়ে -দেয়ে পল্লবীর বাসায় ফিরছি । সাথে চার বাক্স বিরিয়ানি । বাসার অনতিদূরেই পল্লবী থানা । একজন মাত্র সশস্ত্র কনষ্টেবল প্রহরারত । সেটা মামার চোখ এড়ালো না । গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেলেন তার কাছে । খোঁজ নিয়ে জানলেন , ঈদে তিনি পরিবারের সাথে মিলিত হতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ছুটি চেয়েও পাননি । সুজেয় শ্যাম একথা শোনামাত্র পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে তার পকেটে কেবল গুজেই দিলেন না , তাকে শান্তণা দিয়ে ফেরার আগে দুই বাক্স বিরিয়ানিও তার হাতে তুলে দিলেন । এই হচ্ছেন আমাদের সুজেয় মামা।
তিনি খুব একটা ধর্ম পরায়ন ছিলেন , এমনটা কখনো আমার মনে হয়নি । মানবতাকে বরাবর স্থান দিয়েছেন ধর্মের উর্ধ্বে । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ,কাবা শরীফ আর যীশু খ্রিস্টের ছবি তাঁর বাসার তিনটি কক্ষে ফ্রেমে বাঁধানো । প্রতিদিন একাধিকবার স্নান শেষে এক গোছা ধূপকাঠি জ্বালিয়ে ছবি তিনটির পাশে দাঁড়িয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য প্রার্থনা করতেন । প্রার্থনা করতেন বিশ্বশান্তির জন্য । নিজের জন্য কখনো প্রার্থনা করতে শুনিনি ।
এই সুজেয় মামার বাসায়ই আমি একই চূলোয় হিন্দু- মুসলিমকে একই সাথে রান্না করতে দেখেছি । কাজের মানুষেরা সবাই ছিলো মুসলিম । তাদের সন্তানেরা এই বাসায় নিজের মতো করে চলাফেরা করতো । মামা এদের নিজের সন্তানের মতো দেখতেন । প্রয়াত ইয়ামিন চৌধুরী বীরবিক্রম ছিলেন মামার অন্যতম প্রাণের মানুষ । এই ইয়ামিন চৌধুরীর অনুরোধে পবিত্র রমজান মাসে একবার সেই যে তিনি রোজা রাখতে শুরু করলেন , এখনো তার ব্যত্যয় ঘটেনি । ইফতারে তাঁর সঙ্গে আমিও সামিল হয়েছি বহুদিন । বড়ই মধুর এসব স্মৃতি।
বরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক সহ বহু গুণীজনদের সান্নিধ্য লাভকারী সুজেয় শ্যাম আমার বেশ কিছু গানেরও সুরকার । কোলকাতায়ও আমার গান করেছেন । তাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই । টানা প্রবাস জীবনের পনেরো বছরে বহুদিন ফোনে কথা বললেও দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া একবারও । মনটা তাঁর জন্যে প্রায়ই মোচড় দিয়ে ওঠে । ইদানিং শুনেছি রোগে- শোকে তিনি অনেকটাই জর্জরিত । দু’ বার ঈশ্বর তাকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে এনেছেন । এই দু: সময়ে তার পাশে থাকতে না পারার আক্ষেপে এখনো নিরন্তর পুড়ছি । জীবনে এই মানুষটির ঋণ পরিশোধের কোনো সুযোগই পেলাম না । লেখাটা শেষ করার সামান্য আগে মামাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলাম , কেমন আছেন ? জবাবে শুধু বললেন , ভালো আর ছিলাম কখন , ভালো ছিলাম মুক্তিযুদ্ধের কেবল সেই নয়টি মাস।
তুমি ভালো থেকো মামা , শিগগিরই দেশে ফিরে এসে তোমার সাথে কিছুটা দিন একান্তে কাটাতে চাই । সুখ- দুঃখের অনেক অনেক কথা জমা হয়ে আছে ।
জীবনের স্রোতধারা—–

বৃহত্তর সিলেটের বিখ্যাত শ্যাম পরিবারের সন্তান সুজেয় শ্যাম ১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম গ্রহণ করেন । পিতা সিলেট নগরীর কাষ্টঘর নিবাসী প্রয়াত অমরেন্দ্র শ্যাম এইডেড হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। প্রয়াত পিতার গর্বিত সন্তান সুজেয় শ্যামের স্ত্রী , সদা হাসি -খুশি ডা: রুমা শ্যাম ১৯৯৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর পৃথিবীর সাথে সকল বন্ধন ছিন্ন করেন । তিনিও একজন গুণী সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন।

১৯৬৪ সালে সুজেয় শ্যাম গিটারবাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা বেতারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন । ১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং এ পর্যন্ত তিনবার শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতার গীতশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় , হৈমন্তী শুক্লা ও শ্যামল মিত্র সহ বহু নন্দিত কন্ঠ শিল্পীকে দিয়ে নিজের সুরে গান করান ঢাকার চলচ্চিত্রের জন্য । ১৯৮৪সালে আজকের বিখ্যাত শিল্পী কুমার শানু ও হৈমন্তী শুক্লাকে দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য একটি দ্বৈতকণ্ঠের গান করেন । কুমার শানুর নাম ছিল তখন সান্তনু কুমার ভট্টাচার্য । ডাক নাম ছিল কেদার । এরপর থেকেই কুমার শানুর জীবনের উত্থান পর্ব শুরু।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গীত-যোদ্ধা হিসেবে অবিস্মরণীয় ভূমিকা অপালন করেন সুজেয় শ্যাম । ১৯৭১সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর সুরারোপিত নয়টি গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় । গানগুলো হলো: ‘ বিজয় নিশান উড়ছে ঐ ‘, ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি ‘ , ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম ‘ , ‘ওরে শোন রে তোরা শোন’ , ‘ আহা ধন্য আমার ‘ ,’রক্ত চাই রক্ত চাই ‘ , ‘ আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ ‘ এবং ‘আয়রে চাষী মজুর কুলি মেথর কুমার কামার ‘ । আরো একটি গানের কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না । প্রথমোক্ত গান দুটি আমাদের যেকোন জাতীয় দিবসের আজ অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত ।
২০০১ সালে সুজেয় শ্যাম সংগীত পরিচালক হিসেবে ঢাকা বেতার থেকে অবসর গ্রহণ করেন । বাংলাদেশের প্রায় সকল বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী তাঁর সুরারোপিত গানে কন্ঠ দিয়েছেন ।
২০০৬ সালে ”স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ” শীর্ষক একটি গানের অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন তিনি । ২০১৩ সালে অ্যালবাম-২ এরও সঙ্গীত পরিচালনা করেন সুজেয় শ্যাম । এই অ্যালবামে রয়েছে ৫০টি গান । তিনি ২০১৫সালে শিল্পকলা একাডেমী পদক ও ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন । একমাত্র কন্যা রূপমঞ্জরী শ্যাম লিজা’র জনক সুজেয় শ্যামের অনুজ অমিতাভ শ্যামও একজন নন্দিত সুরকার । তাঁর ভাগ্নে শুভ্রদেব দেশের একজন তারকা কণ্ঠশিল্পী । ছয় বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে সুজেয় শ্যাম ষষ্ঠ । সূদুর অতীত থেকেই এই পরিবারে ছিলো শিল্প- সংস্কৃতির ধারা প্রবহমান ।

সুজেয় শ্যাম । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিচ্ছেন । একটি টিভি চ্যানেল প্রদত্ত পুরষ্কার গ্রহণ করছেন । স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের সাথে । স্ত্রী -সন্তানের সাথে সুজেয় শ্যাম এবং তাঁর পরিবারের সাথে আমি ও দীপা ।

অজয় পালঃ সাংবাদিক, কবি ও লেখক

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন