দেশের সংবাদ ফিচার্ড

‘এত কম টাকায় বিক্রি হয় না নুর’

‘এত কম টাকায় বিক্রি হয় না নুর’

গণঅধিকার পরিষদে অস্থিরতা। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি। এমন অবস্থার মধ্যে আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে দল থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের হাতে মূলত এখন দলের নেতৃত্ব। তরুণ নেতাকর্মীদের প্রায় সবাই নুরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রেজা কিবরিয়া অনেকটা একা। দলে এমন অস্থিরতার মধ্যে আলোচনার বড় অনুষঙ্গ অনৈতিক আর্থিক লেনদেন। ড. রেজা কিবরিয়া দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক ও অর্থ নেয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন আগেই। এ ছাড়া দলের ফান্ডে আসা অর্থের স্বচ্ছতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন। এ অভিযোগ তোলার পরই নুরের সঙ্গে বিরোধিতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

এরপর নুর পাল্টা অভিযোগ তোলেন ড. রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে। জনৈক মাসুদ করিম বা এনায়েত করিমের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে যান বলে অভিযোগ করেন নুর। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে মাসিক নির্দিষ্ট অংকের টাকা পান বলেও নুরের অভিযোগ। মূলত আর্থিক অস্বচ্ছতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থেকেই রেজা-নুরের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। দল থেকে অপসারণ করার পরের দিন গতকাল ড. রেজা কিবরিয়া সংবাদ সম্মেলন করে নুরের বিরুদ্ধে আবারো নানা অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে নুর নির্বাচনে যেতে পাঁয়তারা করছেন। সরকারের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব পেয়েছেন। নির্বাচন করতে সরকারের পক্ষ থেকে দুই কোটি দেয়া হবে এবং নুরকে এক কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে নুরের বৈঠক হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ড. রেজা কিবরিয়া। রেজা কিবরিয়ার এই অভিযোগ করার কয়েক ঘণ্টা পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নুর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ৩ কোটি টাকা সুবিধা নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়া হাস্যকর। ৩০০ কোটি টাকা নেয়ার কথা বলা হলে হয়তো যৌক্তিকতা থাকতো। তিনি বলেন, নুর এত কম টাকায় বিক্রি হয় না। সরকারের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার সব সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন নুরুল হক নুর। গতকাল দুপুরে গুলশানের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন ড. রেজা কিবরিয়া। সেখানে দলের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে তার ঘোষিত দলের সদস্য সচিব হাসান আল মামুন সেখানে ছিলেন না।

অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নুর ছাড়া ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যা বলেন রেজা কিবরিয়া: আধা ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে রেজা কিবরিয়া নুরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলার পাশাপাশি তাকে অপসারণ করার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, নুরুল হক নুর সরকারি বিভিন্ন লোকের সঙ্গে আলোচনা করছে। নির্বাচনে যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা করছে। আমার জানা মতে সে জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে দেখা করেছেন। সে মনে হয় ওদের মতো হতে চায়। মন্ত্রী হবে কিছু টাকা পয়সা বানাবে এটাতেই সে সন্তুষ্ট। বাংলাদেশের যুব সমাজের আশা আকাক্সক্ষাকে বিক্রি করে নিজে কিছু রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায় আমার ধারণা। তিনি আমাদের দলের এক সিনিয়র নেতা মির্জা আফসারির কাছে জানতে চেয়েছেন, সরকারের এই নির্বাচনে গেলে কেমন হয়? নির্বাচনে গেলে দুই কোটি টাকা দেবে নির্বাচনের জন্য আর নুরকে এক কোটি টাকা দেবে।

তিনি বলেন, নুর আর আমার অবস্থানের অনেক ব্যাপার আছে টাকা পয়সার ব্যাপারে। আমি ৪৩ বছর ধরে চাকরি করছি। বড় বেতনের চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমার চাকরির পয়সা, হালাল পয়সা। আমার মনে হয় না নুর ৪৩ দিনও চাকরি করেছে। হালালভাবে কোনো টাকা উপার্জন করেছে। ও কীভাবে চলে এটা একটা প্রশ্ন।

তিনি বলেন, সরকারের একটা সাজানো, পাতানো নির্বাচনে কিছু লোককে পয়সা দেখিয়ে আসনের লোভ দেখিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় তো আমাকে দলে রাখা যায় না। আমিতো শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে যাবো না। যারা যাবে তারা প্রতারক। নুরের জন্য এটা কোনো সমস্যা নয়।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি কারণ ডাক্তারের সঙ্গে আমার একটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট আছে। আমি আমেরিকা যাচ্ছি কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়। আমি প্রায় ৩ সপ্তাহ থাকবো। বিবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ছাদে একটা মিটিং হয়েছিল গতমাসের ১৮ তারিখ। সেই মিটিংয়ে সদস্য সচিব আমার বিরুদ্ধে কয়েকটা কথা বলেছিল এবং তখন তাকে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম। এক নম্বর হলো- বিদেশ থেকে যে টাকা আসে সেই টাকার কোনো হিসাব নেই। কোথা থেকে আসছে, কার কাছে আসছে, কতো আসছে সেই হিসাব দিতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের সঙ্গে সদস্য সচিবের একটা মিটিং হয়েছে, দুবাই আর শারজার মাঝামাঝি একটা কফি শপে। সেটা এই মিটিংয়ে সে স্বীকার করেছে। আমাদের দুবাইয়ে যে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছে সে আমাকে বলেছে। তারা ৪ জন ছিল। এ বিষয়ে তাদের দুবাই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা সেখানে স্বীকারও করেছে। সঙ্গে একটা কালো ব্যাগ ছিল। ব্যাগের ভিতরে কি ছিল সেটা সে বলে না। আমার মিটিংয়ের পর সে খুব উত্তেজিত হয়ে গেল। তার কয়েকজন লোক বিশেষ করে বিপ্লব পোদ্দার বলে একটা লোক মিটিংয়ে চিৎকার করা শুরু করলো। মিটিংটা হৈচৈ করে ভেঙে গেল। আমি এটা চাই নাই। কারণ পুরো বিল্ডিংয়ের মালিক আমি না। একটা শুধু অ্যাপার্টমেন্ট আমার।

রেজা কিবরিয়া বলেন, এরপর প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রদূত কনফার্ম করলো যে নুরুল হক নুর একাধিকবার দেখা করেছে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে। এটা বড় একটা দুঃচিন্তার কারণ। এই ইসরাইলির সঙ্গে বৈঠক খুবই রহস্যজনক। ইসরাইলিরা কেন তাদের সঙ্গে দেখা করেছে এটা আমি জানি না। তারা উইক লিংক খোঁজে। নুরের মধ্যে সেটা পেয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থা কেন তাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে না? বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর মেন্দি সাফাদির সঙ্গে দেখা হয়েছে দুবাইতে একটা কনফারেন্সে। কনফারেন্সেতো যেকোনো মানুষের সঙ্গে দেখা হতে পারে। এটাতো আপনি আটকাতে পারেন না। এই অপরাধের জন্য এখনো জেলে আছে। কিন্তু নুরকে অ্যারেস্টও করা হয়নি, জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। এটা খুব রহস্যজনক। সরকারি কিছু প্রটেকশন আছে ওর বিষয়ে এটা থেকে আন্দাজ করা যায়। যতই চেচামেচি করুক না কেন, নুর সরকারের ইন্ধনে অনেক কিছু করে।
কেন এই দলে এসেছেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ছিলেন। উনি আমাকে বললেন, এই ছেলেদের সঙ্গে থেকে ওদেরকে গাইড করতে, কীভাবে চলতে হবে এটা দেখাতে। আমি সম্মতি দিয়েছি। উনি বেঁচে থাকলে খুব কষ্ট পেতেন।

নুরুল হক নূরসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, আমাকে সরানোর জন্য সে (নুরুল হক নুর) এত অস্থির হয়ে গেল যে, ভোট ছাড়া সে সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলো। আমাদের যে সংবিধান আছে সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্রীয় কমিটির ভোটে এই কাজটা করা সম্ভব। আহ্বায়ক বা সভাপতি সরানো ৮১ জনের ভোটে হয়। এটা হয়নি। এ ছাড়া ভোটের আগেও তারা কিছু কাজ করেছে। তারা মিথ্যা স্বাক্ষর নিয়েছে। যারা সই করেননি তাদের সই ওখানে দেখবেন। এটা মারাত্মক বিষয়। সেজন্য আমরা ভুয়া স্বাক্ষর ও অনিয়মের মধ্যে ভোটগ্রহণের বিষয়ে মামলা করবো। নুরুল হক, রাশেদ খান ও শাকিল উজ জামান-এই ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
রেজা কিবরিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমাকে সরানোর জন্য যে ভোটটা হয়েছে সেটা ছিল ৪৮ জনের মধ্যে ৩৬ জন সই করেছে। বাকিরা সইও করেনি। আর আহ্বায়ক অপসারণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির ৮১ জনের ভোট দরকার। এটা হয়নি।

তিনি বলেন, আমি দেশে ফেরার পর বড় মিটিং করবো। বিভিন্ন জেলা থেকে আমাকে ফোন করছে তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে কাজ করতে চায় না। দলের নেতৃত্ব আমার কাছেই আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ। একটা লোকের জন্য আজকে দলের এই অবস্থা। আমি মনে করি এটা ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের দলে অনেক ভালো ভালো লোক আছে এবং তারা দলটাকে বাঁচাতে পারবে। আজকে একটা কথা বলতে চাই, অনেক সময় মিটিং করা হতো টাকা তোলার জন্যে। এই মিটিং কেন করছো জিজ্ঞাসা করলে কোনো কারণ নাই, কোনো উত্তর নাই। এই অজুহাতে প্রবাসীদের থেকে ৭/১০ লাখ টাকা তুলে ফেলতো এবং খরচ করতো। সরকার পতন ওই মিটিংয়ের কারণে হবে এরকম ধারণা আপনারাও করেননি, আমরাও করেনি, সরকারও করেনি। এগুলো হলো টাকা তোলার কৌশল। এইসব টাকার হিসাব দিতো না। প্রবাসী চাকরি করে হালাল পয়সা রোজগার করে তাদের টাকা নিয়ে তোমরা খামাখা নষ্ট করছো এটার কোনো মানে হতে পারে না। কিন্তু সে করেছে এবং করে যাচ্ছে।
নুরুল হক নুর বলেছেন, আপনি বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন, এরকম প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, বিএনপি একটা ঠুনকো দল না যে, আমার কথায় ভেঙ্গে যাবে। তাহলে তো আমার অনেক ক্ষমতা। আমি মনে করি বিএনপি ভাঙলে একটা দল উপকৃত হবে সেই দলটা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো সুবিধা করে দিতে চাই না। বিএনপি শক্ত থাকুক, একত্রে কাজ করুক। এই দল ভাঙার কোনো লক্ষণ আমি দেখি না। এই ধরনের বড় দল ছেড়ে কোনো গ্রুপ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সুবিধা করতে পারেনি; বরং বড় দল ভাঙার যারা উদ্যোগ নেয় তারা শেষ হয়ে যায় রাজনীতিতে।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, বেগম খালেদা জিয়া সম্মানিত মানুষ। সারা দেশে ও বিদেশে উনার মতো নেতৃত্ব দেয়ার এবং মানুষকে সাহস দেয়ার মানুষ খুব কম আছে। উনাকে ব্যক্তিগতভাবে খুব সম্মান করি এবং শহীদ জেনারেল জিয়াউর রহমানকেও খুব সম্মান করি। আমি জেনারেল জিয়ার ফ্যান, এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। তাই এই দলটার ক্ষতি করার বা ভাঙার প্রশ্নই উঠে না। সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন আহমেদ আফসারী, আবদুল মালেক ফরাজী, সহকারী সদস্য সচিব শেখ খায়রুল কবির, কেন্দ্রীয় নেতা জিসান মহসিন ও শাহাবুদ্দিন শুভ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন নুরুল হক নুর: দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক নুর বলেন, গত শনিবার একটি সিদ্ধান্ত গণঅধিকার পরিষদ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে যে, গণঅধিকার পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে এবং গণঅধিকার পরিষদের কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু অস্বস্তি এবং অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছিল। সেটি নিয়ে দফায় দফায় মিটিং শেষে গতকাল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে, গঠনতন্ত্রের ৩৮ ধারা এবং গঠনতন্ত্রের আরও ধারার ক্ষমতাবলে আমরা ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। আমরা বলেছি, এই ধারার আলোকে আজকে এই কার্যকরী সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

সেই সিদ্ধান্ত ছিল, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিববিয়ার বিরুদ্ধে ৮৪ জন সদস্যের অনাস্থা প্রস্তাব আগেই তাকে পাঠানো হয়েছিল। যেখানে দরকার ছিল ৪১ জনের মতামত। আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি অভিযুক্ত হলেও ৭ দিনের মধ্যে তার জবাব দেয়ার সুযোগ ছিল। আর তিনি যদি শনিবার আসতেন তাহলে পরিস্থিতিটা ভিন্ন হতে পারতো। কিন্তু তিনি আসেন নাই; বরং মিডিয়ায় আলোচনায় থাকার জন্য এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটা ছবি দিলেন এবং লাইভ করে বলেছেন যে, তিনি কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। তাই আহ্বায়ক অনুপস্থিত থাকায় ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে উপস্থিত সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সভাপতি নির্বাচিত করে মিটিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
নুর জানান, মিটিংয়ে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে ৫ জন সদস্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। আর এই ৫ জনসহ ৭ জন ভোট দেয়ায় বিরত থাকেন। বাকি সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আহ্বায়ক অপসারণ কার্যকর করা হয়। আর এই পরিস্থিতিতে সংকট থেকে উত্তরণে এবং দলকে গতিশীল করা জন্য আগামী ১০ই জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত করা। আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা আছে,  জাতীয় কাউন্সিলের আগে দলের একটি উচ্চতর পরিষদ থাকবে। সেই পরিষদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, একইদিনে প্রথম দফায় উচ্চতর পরিষদ নির্বাচন হবে এবং দ্বিতীয় দফায় গণঅধিকার পরিষদের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে যদি কেউ অপব্যাখ্যা করে থাকেন তাহলে সেটা তার একান্ত নিজস্ব মতামত।
তিনি বলেন, আমাদের আহ্বায়ক কি বলেছেন, সেই বিষয়ে আসলে আমরা কাদা ছোড়াছুড়ি করতে চাই না। আমাদের বক্তব্যে পরিষ্কার যে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের আহ্বায়কের কার্যক্রমে আমাদের অনাস্থা ছিল। আমরা সেটা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অপসারণ করেছি।

সরকারের ইন্ধনে এসব করেছেন এবং ৩ কোটি টাকা চুক্তি হয়েছে আপনি নির্বাচনে যাবেন- রেজা কিবরিয়ার এই বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, এটা একটা হাস্যকর অভিযোগ। কারণ একটা জাতীয় নির্বাচন করতে বাংলাদেশে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা খরচ হয়। আর মাত্র ৩ কোটি টাকার জন্য সরকারের সঙ্গে আপস করা! অন্তত ৩শ’ কোটি টাকা বললে যৌক্তিকতা থাকতো। মাত্র ৩ কোটি টাকা, এটা হাস্যকর মনে হচ্ছে; বরং কম্প্রোমাইজ করলে রেজা কিবরিয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আর তিনি যে বলেছেন, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন এবং জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে মিটিং করা। দেখেন, একটা অভিযোগ কীভাবে হাস্যকর হতে পারে। একটা মানুষ কীভাবে নিজেকে হালকাভাবে উপস্থাপন করতে পারে! হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন তো আওয়ামী লীগের কেউ না? তারা তো অন্য দল। যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিটিং হয় তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে হবে। সুতরাং তাদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মিটিং কখনো হয় নাই। আর ১০ই ডিসেম্বর আগে জাহাঙ্গীর কবির নানক আমার নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, তাদেরকে গণধোলাই দেয়া হবে। এই রকম ব্যক্তির সঙ্গে আমি মিটিং করবো, এটা খুব হাস্যকর।

তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল- তিনি এই মাসুদ করিম, এনায়েত করিম ও শওকত মাহমুদদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবং বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদেরকে নিয়ে আগামীতে নির্বাচনে যাবেন এবং  রেজা কিবরিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। এই স্বপ্ন দেখিয়ে আসলে একজন শিক্ষিত লোককে গোয়েন্দা সংস্থা বিভ্রান্ত করছে। আমরা ২০২১ সালে জানতে পারলাম উনি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তখন আমরা অনেক চেষ্টা করলাম, একাধিক বৈঠকে বলেছি- আপনি এখান থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু উনি সেখানে ব্ল্যাকমেইল হয়ে আছেন। তাই ওখান থেকে উনি বের হয়ে আসতে পারছেন না। আর গত ২০ মাসে তিনি ২০টি অনুষ্ঠানেও সেভাবে ছিলেন না। কিন্তু ইনসাফ কায়েম কমিটির এবং শওকত মাহমুদের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ ছিল।

স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে আপনাদের ৩ জনের নামে রেজা কিবরিয়া মামলা করবেন- এই প্রশ্নের জবাবে নুর বলেন, উনি তো বলেন, এই সরকারের অধীনে আইনের শাসন নাই, শেখ হাসিনা সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে তছনছ করে দিয়েছেন, এই সরকার ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার সরকার- তাদের কাছে কি উনি ন্যায়বিচার পাবেন? আমরা তো জানি উনার বাবার হত্যার বিচার গত ১৪-১৫ বছরে নিশ্চিত হয়নি। সেই সরকারের কাছে উনি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন- এটা খুব সন্দেহজনক। আসলে তাকে এই কাজগুলো কারা করাচ্ছে। সুতরাং এখন বোঝা যাচ্ছে, উনি সরকারের সঙ্গে আপস করে গণঅধিকার পরিষদকে জিএম কাদের সাহেবের মতো আদালতে বন্দি করতে চাচ্ছেন। আর আমরা যদি কারও স্বাক্ষর জাল করে থাকি তাহলে অবশ্যই তারা মামলা করতে পারেন। আমরা সেটা মোকাবিলা করবো। কিন্তু আমরা কোনো মামলা করবো না। আমাদের প্রয়োজন ছিল ৮১ জন সেখানে ৯১ জনের মতো স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু আইন ও আদালতের কোনো অন্যায় আদেশ কিংবা কোনো বিধি-নিষেধে আমাদের কার্যক্রম থামানো যাবে না। আমরা বিদ্যুৎগতিতে এগিয়ে যাবো।

মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তদন্ত করলে পাবেন যে আমাদের কতো টাকা লেনদেন হয়েছে। আর আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য তিনি (রেজা কিবরিয়া) এ কথা বলেছেন। আর বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিটিংয়ের কথা বলেছেন, গত ৬ মাস আগে যখন আওয়ামী লীগের সাইবার সেল থেকে অভিযোগ করেছিল, সেই সময় আমি গণমাধ্যমে জবাব ও ব্যাখ্যা দিয়েছি। তাদের কাছে যদি ন্যূনতম তথ্য-প্রমাণ থাকতো তারা কিন্তু হাজির করতো। এই ৬ মাসেও কিন্তু তারা পারেনি। আর এ ধরনের কোনো মিটিং হয়নি। কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও এই মিটিং হয় নাই। একাবারে তিনি অসত্য কথা বলছেন। -মানবজমিন

সংবাদটি শেয়ার করুন