জীবন ও স্বাস্থ্য

করোনা : বিদেশে ৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু, আক্রান্ত কয়েক ‘শ’

করোনা, বিদেশে ৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু, আক্রান্ত কয়েক ‘শ

করোনা , বিদেশে ৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু, আক্রান্ত কয়েক ‘শ ।। মৃত্যু উপত্যকা ইতালিতে ১২ হাজার ছাড়াল ।। বৃটেনে করোনাভাইরাসে মারা গেছে সরকারি হিসাবের চেয়েও বেশি মানুষ ।।  পৃথিবীতে চলমান মৃত্যু উপত্যকায় জনপদের পর জনপদ অঘোষিত বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। জীবনীশক্তি আজ শূন্যের কোঠায়। কোভিড-১৯ খ্যাত নভেলকরোনা প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার যেনো ঝড়ের বেগে হু হু করে বেড়ে চলেছে।বিশেষ করে মৃতের দিক দিয়ে নাজুক অব্স্থা ইউরোপের। ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২,৪২৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১,০৫,৭৯২।

এ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪০,৬৪৩ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮,২৩,৫৬৬ জন। এছাড়াও ১,৭৪২,৩৫৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সূত্র:ওয়ার্ল্ডোমিটার।

করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে লকডাউনের মেয়াদ ইস্টার সানডে পর্যন্ত বাড়িয়েছে ইতালি। আগামী ১২ এপ্রিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের এই উৎসব পালনের কথা রয়েছে। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও দেশটিতে সংক্রমণের হার কমে আসতে শুরু করেছে। এতে ইতালি আশার আলো দেখছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।গেল বছরের চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। ইতোমধ্যে এ ভাইরাস বিশ্বের অন্তত ১৯৯ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃটেনে করোনাভাইরাসে মারা গেছে সরকারি হিসাবের চেয়েও বেশি মানুষ

করোনাভাইরাসে বৃটেনে মৃতের সংখ্যা সরকার ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে শতকরা ২৪ ভাগ বেশি। বৃটেনের অফিস অব ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) এ সংক্রান্ত এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

একই সঙ্গে এ খবরকে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে পরিবেশন করেছে অনলাইন ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়েছে, ওএনএস প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে ২০ শে মার্চ পর্যন্ত ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সনদ ইস্যু করা হয়েছে ২১০টি। কিন্তু একই সময়ে ইংল্যান্ডের সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এনএইচএস এই মৃত্যু রেকর্ড করেছিল ১৭৭টি। ফলে ওএনএস যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা এই সংখ্যার চেয়ে শতকরা ২৪ ভাগ বেশি।

করোনাভাইরাসে মারা গেছেন অথবা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যেসব মানুষ মারা গেছেন তাদের বিষয়ে নতুন ডাটা সিরিজ প্রকাশ শুরু করেছে ওএনএস। বলা হচ্ছে, যারা কেয়ার হোম বা বাড়িতে মারা গিয়েছেন তাদেরকেও এর আওতায় ধরা হচ্ছে।

বৃটেনে কমপক্ষে ২২ হাজার ১৪১ জনের দেহে করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া গেছে। তাদের কেউ মারা গেলে তাদের ডেথ সার্টিফিকেটকেও এই পরিসংখ্যানের অধীনে ধরা হচ্ছে। ফলে এনএইচএস’র অধীনস্ত সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে মৃত্যুর যে তথ্য আসছে তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে এসব সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বৃটেনের হাসপাতালগুলোতে মোট ১৪০৮ জন মারা যাওয়ার তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন এই সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে সামনের দু’এক সপ্তাহে।

করোনা, বিদেশে ৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু, আক্রান্ত কয়েক ‘শ

মিজানুর রহমান।। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৩ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। লোকাল কমিউনিটি, সাংবাদিক, বাংলাদেশ মিশন এবং ঢাকায় সরকারী অনানুষ্ঠানিক সূত্র মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ৩২ বাংলাদেশির। এছাড়া বৃটেনে ১১, ইতালিতে ২, কাতারে ২, সৌদি আরবে ২, স্পেনে ১, সুইডেনে ১, লিবিয়ায় ১ এবং গাম্বিয়ায় ১ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর বেরিয়েছে।

মৃত্যুপুরী নিউইয়র্ক
নিউইয়র্কে ৩০ বাংলাদেশি মারা গেছেন। কনসাল জেনারেল ডা. সাদিয়া ফয়জুন্নেছা মানবজমিনকে বলেন, রবি ও সোমবার দু’দিনে নিউইয়র্ক সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে।  কমিউনিটি সূত্রে তারা বাংলাদেশি অাক্রান্ত বা মারা যাওয়ার তথ্য পান জানিয়ে বলেন, সরকারীভাবে কোন তথ্য সরবরাহ করা হয়না বা চাওয়া যায় না। ডা. সাদিয়া বলেন, নিউইয়র্কে এমন পরিস্থিতি হাসপাতালে যাওয়ার মত অবস্থা নেই। তাই মিশন জরুরি যোগাযোগে একটি চিকিতসক-পুল তৈরি করেছে, যেখানে ঘরে বসে বাংলাদেশিরা চিকিতসকের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন এবং আতঙ্কিত না হয়ে চিকিতসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মিশিগানের ডেট্রয়েট সিটিতে একজন ও নিউজার্সির প্যাটারসনে একজন বাংলাদেশি নারী করোনায় মারা গেছেন।

সোমবার স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে চিকিতসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রবাসী ফটো সাংবাদিক এ হাই স্বপন। শারীরিক নানা জটিলতায় ভোগা স্বপন করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুইন্সের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাছাড়া গত দু’দিনে যারা মারা গেছেন তার অন্যতম আইটি প্রফেশনাল মির্জা নুরুল হুদা (৪৪), মোহাম্মদ আনিসুর রহমান (৭৬), জায়েদ আলম (৪৫), মোতাব্বির চৌধুরী (৬৮), বিজিত কুমার সাহা (৩৮), মোহাম্মদ শিপন মোসেন (৫৬) শফিকুর রহমান মজুমদার ও কাজী কায়কোবাদ প্রমূখ।

বাংলাদেশির মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে লন্ডন: যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মারা যাওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে বৃটেন। দেশটিতে সোমবার পর্যন্ত ১১ বাংলাদেশি মারা গেছেন। এর মধ্যে ১০জনই  লন্ডনে। একজন বার্মিংহামে। বৃটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী মঙ্গলবার মানবজমিনের সঙ্গে অালাপে জানান, গত ২৪ ঘন্টায় বৃটেনের করোনায় ৩৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশার দিক হচ্ছে ওই তালিকায় কোনো বাংলাদেশে নেই। সোমবার পর্যন্ত ১১ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মারা গেছেন মর্মে কমিউনিটি সূত্রে মিশন নিশ্চিত হয়েছে এবং ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

কাতারে মঙ্গলবার অরেক প্রবাসীর মৃত্যু: দোহায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ রাতে মানবজমিনকে জানান,  কাতারে আবুল কাশেম (৫৮) নামের আরেক প্রবাসীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা গেছেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। এর আগে গত ২৩ শে মার্চ দীপক কুমার (৫৭) নামের একজন মারা যান। তার বাড়ি শ্রীমঙ্গলে।
ভয়াবহ পরিস্থিতি ইতালিতে: এদিকে মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জানিয়েছে- ইতালির করোনা পরিস্থিতি বিপদ্জনক রূপ নিয়েছে বহু অাগেই। প্রতি দু’মিনিটে একটি মৃত্যু দেখেছে ইউরোপের প্রভাবশালী ওই দেশটি। কিন্তু এত দিনে বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিলো। যদিও আচমকা ১ জন মারা গেছেন। তার অবশ্য করোনা ধরা পড়ার আগে থেকে অন্য জটিলতাও ছিলো। মিশন বলছে সোমবার অারেক বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর মিলেছে। মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়াসহ বৃহত্তর লোম্বাদিয়া, ভারেজে, তরিনো, রোমসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধির খবর এসেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যা বলছে: বিদেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শতক পার হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেল এখনও ৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়ার কথা জানাচ্ছে। সেলে প্রধান অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ডা. খলিলুর রহমানের ভাষ্যটি ছিল এমন- যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় আইনে চিকিতসাধীন কিংবা মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ছাড়া অন্যদের তথ্য শেয়ার করা বারণ। ফলে সেখান থেকে সরকারিভাবে তথ্য পাওয়ার সূযোগ নেই। সর্বশেষ কোভিড-১৯ এ অাক্রান্ত হয়ে  চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কে একজন সাংবাদিকের যাওয়াসহ অনেকের মৃত্যুর খবর কমিউনিটি মারফত পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এটাতো আনুষ্ঠানিক বা সরকারি তথ্য নয়। ইতালিতে ২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন লন্ডনে গিয়ে মারা যান। স্পেনে ১, কাতারে সর্বশেষ ২ জন এবং সুইডেনে ১জন- এই ৬ বাংলাদশির মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সরকারি বা আনুষ্ঠানিকভাবে বলছি। বাকি অাপনারা যা পাচ্ছেন তা অনানুষ্ঠানিক। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট ডা. খলিল বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশিদের উদ্বেগজনক হারে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, নানা সূত্রে আমরাও তথ্য পাচ্ছি, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই শতাধিক  বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বা অভিবাসীদের আক্রান্তের হারও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলে দেশের বাইরে ২ শতাধিক বাংলাদেশিরর করোনা শনাক্ত হয়েছে মর্মে আমরা তথ্য পেয়েছি। যার মধ্যে ইতালিতে ৪০, স্পেনে ২৩, সিঙ্গাপুরে ১৪ জনের করোনা আক্রান্ত চিকিতসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। এদিকে কানাডা মিশন বলছে, দেশটিতে ২০ জনের মতো বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রান্সের মানবজমিন প্রতিনিধিও দেশটিতে প্রায় ২০ জনের মতো আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

সর্বশেষ: এদিকে সৌদি আরবের মদিনায় মঙ্গলবার মারা যাওয়া বাংলাদেশি চিকিতসক আশফাক হোসাইন ঝিনাইদহ ক্যাডেট ও সলিমুল্লাহ মেডিকেলে প্রাক্তন ছাত্র বলে জানা গেছে। এর আগে ২৪শে মার্চ মদীনায় করোনা আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তার বাড়ি সাভারে।

উল্লেখ্য,ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহান শহরে ধরা পড়ে নোভেল করোনা ভাইরাস। এর পর বিশ্বজুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়ে।  দুনিয়াব্যাপী প্রাণঘাতি এমন ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা সম্ভবত এটাই প্রথম। (সূত্র: মানবজমিন)

 

সি/এসএস



 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + seven =