ফিচার্ড মত-মতান্তর

কান্তজী মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণ ঘটনাটি যথেষ্ট সমালোচিত হচ্ছে?

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

কান্তজী মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণ ঘটনাটি যথেষ্ট সমালোচিত হচ্ছে?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। আপাতত: কান্তজী মন্দিরের সমস্যার ‘অস্থায়ী’ সমাধান হয়েছে বলেই মনে হয়, স্থায়ী সমাধান দরকার। সমস্যা নিরসনে দেরিতে হলেও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ভাল। মন্দির ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কথা শুনছেন বা মানছেন। মিডিয়া বস্তুনিষ্ঠভাবে সমস্যাটি সামনে এনেছে, বিশেষত: ‘দৈনিক কালবেলা ও ডেইলি ষ্টারের ভূমিকা প্রনিধানযোগ্য। স্থানীয় এমপি জাকারিয়া জাকা’র ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সাবেক এমপি মনোৰঞ্জন শীল গোপাল বলেছেন, এঘটনা সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে। কান্তজী’র মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকে নির্মিত এবং ইউনিস্কো’র তালিকাভুক্ত। সারাদেশ ও বহির্বিশ্ব থেকে ভক্ত ও দর্শনার্থীরা এটি দেখতে ভীড় জমান। এমন একটি মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণ ঘটনা শুধু দেশে নয় বিদেশে যথেষ্ট সমালোচিত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে এটি ভাইরাল হয়ে গেছে। 

১লা মার্চ ২০২৪ স্থানীয় এমপি জাকারিয়া জাকা মন্দির চত্বরে একটি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। পরদিন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ ডিসি’র কাছে আবেদন করলেন ১৩ই মার্চ? এত দেরি হলো কেন? ডিসি একশ্যান নিলেন আরো ১০দিন পর। প্রশাসন মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন্, কাজ শুরুর ২৩দিন পর। ডেপুটি কমিশনার শাকিল আহমদ জানিয়েছেন, কান্তজী মন্দিরের জমিতে সকল নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয়েছে (ডেইলি ষ্টার ২৫মার্চ ২০২৪)। তিনি দুই পক্ষের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, অনুমতি ব্যতিত ‘দেবোত্তর’ সম্পত্তির ওপর মসজিদ নির্মাণ অবৈধ। তিনি আরো বলেন, মসজিদের জন্যে সুবিধাজনক স্থানে জমি দেয়া হবে।

কান্তজী মন্দিরটি দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাফিউল ইসলাম  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মাণ কাজ বন্ধের একটি নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেন্। তিনি উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। বলা হচ্ছে, সেখানে ১৯৫০ সাল থেকে একটি মসজিদ ছিলো, কয়েকবার পরে সংস্কারও হয়েছে, ১৯৭৬ সালে কোন এক ডিসি সেটাকে বৈধ করার জন্য মসজিদ কমিটিকে জমিটি ইজারা দেন? এ লিজ অবৈধ ছিলো বিধায় ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট তা বাতিল করে। প্রশ্ন হলো, হাইকোর্টের রায়ের পর এতদিন জমিটি মসজিদ কর্তৃপক্ষ আটকে রেখেছিলেন কেন? সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক কান্তজী’র মন্দিরের ওপর আক্রমণ শুধু হিন্দুদের ওপর আঘাত তা নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের  চেতনার ওপর আঘাতও বটে?

  কান্তজীর মন্দির সনাতন ধর্মালম্বীদের পবিত্র তীর্থস্থান, এটি বাংলার টোরাকোটা শিল্পের এক অনুপম শিল্পকীর্তি যা পুরাকীর্তি হিসাবে বিশ্বনন্দীত। এ মন্দিরের দেয়ালে উৎকীর্ণ টেরাকোটা শিল্প-কর্ম ও চিত্রকলার এক বিস্ময়কর সমাহার। এই প্রন্ততাত্ত্বিক নিদর্শন উন্নত সভ্যতার স্মারক। মহারাজা প্রাণনাথ রায় শুধু যে কান্তজী’র মন্দিরটি নির্মাণ করেছেন তা নয়, তিনি মন্দিরের অদূরে ‘নোয়াবাদ মসজিদ’ নির্মাণ করে দেন, যা একটি পুরাকীর্তি। জানা যায়, মন্দির ও মসজিদ নির্মাণ শ্রমিকরা অধিকাংশ ছিলো মুসলমান। আবারো প্রশ্ন জাগে, নোয়াবাদ মসজিদ বাদ দিয়ে মন্দিরের জমিতে মসজিদ তৈরির উৎসাহ কেন? কিছুদিন আগে, চন্দ্রনাথ শক্তিপীঠ নিয়ে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতা মিডিয়ায় এসেছে। এসব একটি’র সাথে আর একটি’র যোগসাজসে হচ্ছে?

রমজান মাসে কান্তজী’র মন্দিরের ঘটনাটি আলোচনায় এসেছে। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার অজুহাতে বেশ কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ইতিমধ্যে ঘটেছে। এসব কিসের লক্ষণ? ডেইলি ষ্টার মন্দিরের দলিলপত্র দেখেছে। খতিয়ান-৫ অনুসারে মন্দিরের ৯৪.০৭ একর জমির রেকর্ড আছে। মসজিদটি নির্মিত হচ্ছে দাগ-১৬’র ওপর। মন্দির কমিটির রণজিৎ জানান, ৬৩একর জমি এখন মন্দিরের দখলে আছে, বাকিটা বেদখল। মানুষ সেখানে বসবাস করছে, জমি উদ্ধারের জন্যে মামলা চলছে। তবে এষ্টেট ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে। এমপি জাকারিয়া জাকা ডেইলি স্টারকে জানান, আমি জানতাম না জমি মন্দিরের, আমি শুধু জানতাম পুরাতন মসজিদ ভেঙ্গে নুতন মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে, আমার সম্পৃক্ততা ঐ পর্যন্তই। তিনি জানান, প্রশাসনের নির্দেশের সাথে তিনি একমত।

দিনাজপুর পূজা উদযাপন পরিষদ, এবং দিনাজপুর ঐক্য পরিষদ মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণ ঘটনায় ‘হতাশা’ ব্যক্ত করেছে। মসজিদ কমিটি’র ট্রেজারার রাশেদ আলী বলেছেন, ১৯৭৬ সালের লীজের ভিত্তিতে তারা মসজিদ নির্মাণ করছেন, তবে বিতর্কিত জমিতে তারা মসজিদ তৈরী করবেন না, যদিও তিনি বলেন, সেখানে আগেই একটি মসজিদ ছিলো।  মন্দিরের জমিতে মসজিদ নির্মাণে দেশের ১৭জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে তারা দেশের মন্দিরগুলো রক্ষার জন্যে প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহবান জানান। যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে।

 

এসএস/সিএ

 

সংবাদটি শেয়ার করুন