দেশের সংবাদ ফিচার্ড

ছয়চিরির চড়ক পূজা দেখতে মানুষের ঢল

কমলগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরি দিঘির পাড়ের
চড়ক পূজা দেখতে মানুষের ঢল

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ছয়চিরি দিঘির পাড়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পহেলা ও দ্বিতীয় বৈশাখ শুক্রবার ও শনিবার দুই দিনব্যাপী এ মেলা চলে। ঐতিহাসিক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।

সরেজমিনে চড়ক পূজা ঘুরে দেখা যায়, পূজার জন্য বিশাল দিঘির পূর্ব ও উত্তর পাড়ে একটি করে ও দক্ষিণ পাড়ে দুটি পৃথক ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ রয়েছে। দিঘির চারপাশের বাসিন্দাদের জন্য আলাদাভাবে চারটি চড়কগাছে সন্ন্যাসী চার ভক্তের পিঠে লোহার দুটি বড়শি গেঁথে রশির সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়কগাছ ঘোরানো হচ্ছে। পূজা দেখতে আসা আগত হাজারো দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ফল ও প্রসাদ উড়িয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া চড়ক পূজায় কালীনাচ, অগ্নিনাচ, হর গৌরী পূজাসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। এসব পূজাকে কেন্দ্র করে কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে ম-লী তৈরি করে পূজা করা হচ্ছে।

জানা যায়, চরক পূজার প্রথম দিন ৪টি চড়ক গাছে প্রায় ৪০ জন ভক্তের শরীরে লোহার শিকল বেঁধে নৃত্যের তালে তালে চড়কগাছ ঘোরানো কথা থাকলেও এবছর প্রায় ২০জন ভক্ত দিয়ে চড়ক গাছ ঘোরানো হয়। চড়ক পূজাকে কেন্দ্র করে একপাশে মেলা বসেছে।
আয়োজক কমিটির কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় ৪৯ একর দিঘির চতুর্থ দিকের পারে প্রায় ২০০ বছরেরও আগে থেকে এই চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সঠিক সময়কাল জানা না থাকলেও এলাকায় কথিত আছে (১৮০৪-১৮১০ইং) সালের কোন এক সময় রাজা ধর্ম্ম নারায়ণের পারিবারিক সহায়তায় শুন ভক্ত নামে এক লোক এলাকার লোকজনদের নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে কমলগঞ্জের ছয়চিরি সাগর দিঘিরপাড়ে চড়কপূজার শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যেই এটি বৃহৎ পরিসর নেয়। এরপর থেকে এখানে প্রতিবছর এ পূজার আয়োজন করা হয়। চড়ক উৎসবে অংশগ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এসেছেন। এছাড়া বিদেশী পর্যটকও এসছেন পূজা দেখতে।
চড়ক পূজায় অংশগ্রহণকারী কয়েকজন জানান, চরক পূজা উপলক্ষে এ এলাকায় প্রায় এক মাস ধরে পূজার আয়োজন চলে। সনাতনী পঞ্জিকামতে, প্রতিবছরের চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে এ পূজা উদযাপতি হয়। প্রতিটি চড়কে চারজন সন্ন্যাসীভক্তের পিঠে লোহার দুটি করে বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়কগাছ ঘোরানোর দৃশ্যটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন।

ঐতিহ্যবাহী চড়কপূজা দেখতে আসা পূর্ণিমা মল্লিক বলেন, এখানে অনেক বড় চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। নতুন বিয়ে হয়েছে, বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে প্রথম চড়ক দেখতে আসলাম। আসলে এত বৃহৎ আয়োজনের চড়ক এর আগে দেখা হয় নি। এখানের চড়ক পূজা দেখে খুবই ভাল লাগছে।

চড়কপূজা দেখতে আসা সীমা তালুকদার, মিকন দেবনাথ, পাপন সরকার, অনুকূল পাল জানান, চড়ক পূজার জন্য দেশের অন্যতম একটি স্থান এটি। এখানে সারা দেশ থেকে বিশেষ করে সনাতনধর্মালম্বী মানুষেরা আসেন চড়ক দেখার জন্য। আমরাও এখানে চড়ক দেখতে এসে খুবই আনন্দিত।

এ পূজা আয়োজন কমিটির নেতা অঞ্জন প্রসাদ রায় চৌধুরী বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে আমার পূর্বপুরুষরা প্রথম এই চড়ক পূজার আয়োজন করেন। এই পূজা ও মেলা কেন্দ্র করে ছয়চিরি দিঘির চারপাশে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। প্রতি বছরের মতো এবারেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন। চড়ক পূজায় বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫০ জন পূজারি অংশ নেন।

রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল বলেন, ছয়চিরি দিঘিপাড়ের চড়ক পূজা প্রায় দুইশতবছর ধরে এ ইউনিয়নের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে আসছেন। এ পূজাকে ঘিরে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটেছে।



 

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন