দেশের সংবাদ

প্রদীপ-লিয়াকতের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা

প্রদীপ-লিয়াকতের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা
ওসি প্রদীপ এবং এসআই লিয়াকত

প্রদীপলিয়াকতের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা

প্রদীপ-লিয়াকতের একের পর এক অভিযোগে কখনো দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহৃত হয়েছেন, আবার কখনো সাময়িক বরখাস্ত। হয়েছে বিভাগীয় মামলাও। কখনো মামলার বাদীকে রাজি করিয়ে, আবার কখনো তদবির করে রেহাই পেয়েছেন কিছু অভিযোগ ও মামলা থেকে।তিনি টেকনাফ থানার দায়িত্ব থেকে সম্প্রতি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৩ বছর দায়িত্ব পালনকালে অর্থের বিনিময়ে নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়ানো, আইনজীবীকে অপহরণ, জায়গা দখল, মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে শিল্পপতিকে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ ছিল প্রদীপ-লিয়াকতের বিরুদ্ধে।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা

সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর প্রদীপের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা অনেকেই বলছেন, প্রদীপকে আগেই শাস্তির আওতায় আনা হলে হয়তো সিনহা হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধের ঘটনা এড়ানো যেত।

এ ছাড়া পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী।

সিনহা হত্যা মামলার আসামি লিয়াকতও দীর্ঘ সময় চট্টগ্রামে দায়িত্বরত ছিলেন।

পুলিশ সদস্যদের অনেকে অপরাধ করেও কেন শাস্তির আওতায় আসেন না, জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনায় সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না বলে রেহাই পেয়ে যান তাঁরা।

তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা সাক্ষ্যপ্রমাণ না পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা যাতে সঠিক তথ্য দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা উচিত।

টাকা নিয়ে আসামি
ডেকোরেশন ব্যবসায়ী আবু নাছেরের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা ছিল না। ২০১৬ সালের ৫ জুন সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী থেকে গ্রেপ্তার করেন চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক প্রদীপ দাশ।

নাছেরের দাবি, এলাকায় মাজার নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে
এজাহারে নাম না থাকলেও তাঁকে এই মামলায় জড়ানো হয়।

নাছেরকে গ্রেপ্তারের ২০ দিন পর তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, মাহমুদা হত্যায় নাছেরের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

পাঁচ মাস কারাভোগের পর তিনি এই মামলায় জামিনে মুক্তি পান। অপরাধী না হয়েও এখনো ধার্য দিনে আদালতে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন নাছের।

আবু নাছের মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে প্রদীপ এই মামলায় আমাকে জড়ান। কারাগারে হারিয়ে যাওয়া পাঁচটি মাস, হারানো সম্মান কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন প্রদীপ?’

চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনকালে নানা অভিযোগ ওঠে প্রদীপের বিরুদ্ধে
লিয়াকতের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর অভিযোগ

নাছেরের স্ত্রী পারভীন আক্তার বলেন, ‘ওই সময় প্রদীপের বিরুদ্ধে শাস্তি চেয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম। সেই দিন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে নিরীহ কেউ আর হয়রানির শিকার হতো না।’

নাছেরের মামলাটি পিবিআই চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দীন তদন্ত করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত আসামিরা ধরা পড়ায় নিরীহ আসামিকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।

অপহরণ করেন আইনজীবীকেও
২০১৩ সালে আরিফ নামের এক আসামির রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশ। চট্টগ্রামে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নুরুল আলম তাঁর মক্কেলের রিমান্ডের আবেদনের বিরোধিতা করেছিলেন।

নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ আরিফকে রিমান্ডে নিয়ে পকেটে তাঁর ভিজিটিং কার্ড পেয়েছিল।

এরপর ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি আদালত থেকে বাসায় ফেরার পথে নগরের সিনেমা প্যালেস এলাকা থেকে সাদাপোশাকে পাঁচলাইশ থানা-পুলিশের একটি দল তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। সারা রাত নির্যাতন করে তাঁকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার নামে প্রদীপ ৭০ হাজার টাকাও আদায় করেন বলে জানান নুরুল আলম। তিনি বলেন, নির্যাতনের কারণে তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।

এই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে অপহরণের মামলা করেন। আদালত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনজীবী নেতাদের সমঝোতা বৈঠকের পর মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।

আইনজীবী নুরুল আলম রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাপে পড়ে সেদিন মামলাটি প্রত্যাহার করেছিলাম। এখন মনে হয় ভুল করেছি। মামলাটি চালিয়ে গেলে প্রদীপসহ জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি হতো। এতটা বেপরোয়া হতে পারতেন না তাঁরা।’

বাঅ/এমএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন