খেলা ফিচার্ড

বাংলাদেশীদের মেসি ভক্তি : বিস্ময় প্রকাশ করছে আর্জেন্টিনা

বাংলাদেশীদের-মেসি-ভক্তি

বাংলাদেশীদের মেসি ভক্তি ও আর্জেনটিনা ভক্তি

বাংলাদেশে ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা নিয়ে বিশ্বের গণমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা। বিস্ময় প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় আর্জেন্টাইন সংবাদপত্র ‘ওলে’।

তারা বলছে, ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ বাংলাদেশে কীভাবে এত জনপ্রিয়তা পেলো আর্জেন্টিনা? বাংলাদেশীদের মেসি ভক্তি ও মেসিদের নিয়ে কেন এত আবেগ তাদের মাঝে? এর কারণ উদ্‌ঘাটন করার চেষ্টা করেছেন ওলের প্রতিবেদক মাতিয়াস মানকুসো।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের মাঠে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখার ছবি ভাইরাল হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। এ নিয়ে ওলের প্রতিবেদক মাতিয়াসের প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলোঃ-

আমাদের রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের ‘ফুটবল জোন’ খ্যাত ওবেলিস্ক, পার্ক চাকাবুকো, আভেয়ানেদা, প্লাজা মুন্দিয়ালিস্তাস স্পটগুলোতেও এত দর্শক দেখা যায়নি, যতটা না দেখা গেছে বাংলাদেশের ঢাকায়। শনিবার মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ের পর আর্জেন্টাইন সমর্থকদের আনন্দ উল্লাস করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছিল বাংলাদেশের ফ্যানদের। দেশের প্রধান শহর ছেয়ে গেছে আর্জেন্টিনার আকাশী-নীল পতাকায়। গায়ে গায়ে জার্সি। তারা গাইছে আলবিসেলেস্তেদের জয়গান।

ফুটবল বুঝি এমনই হয়। কোনো ভাষা বোঝে না। কোনো রাজনীতি বোঝে না। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমার দিয়ে আবৃত দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে আমাদের ফুটবলের জন্য এত মায়া কীভাবে জন্মালো? কীভাবে তারা আমাদের জন্য পাগল হলো? আমরা মোহাম্মদ সবুজ নামের একজনের সঙ্গে কথা বলেছিলাম।

সে ওলেকে বলেছে, ‘এটা নতুন কিছু নয়। আমরা ১৯৮৬ থেকে আর্জেন্টিনার সমর্থক। যখন দিয়েগো ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতেছিল। দিয়েগোর প্রতি ভালোবাসা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে চলেছি আমরা। আর মেসির কারণে সেটি আরও বেড়েছে। ৪০ লাখ ভক্ত আর্জেন্টিনার জয় উদযাপন করেছি।’ বাংলাদেশ, যে দেশটি ‘কান্ট্রি অব বেঙ্গল’ নামে পরিচিত। ১৮৫৮-১৯৪৭ পর্যন্ত বৃটেনের উপনিবেশ ছিল।

যদিও তারা বৃটিশ শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত তার প্রভাব রয়ে গিয়েছিল। শুনতে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু ওরাও তেমন স্বস্তিই অনুভব করে, যেমনটা আমরা করেছিলাম ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর। যেবার ম্যারাডোনার দল কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। আয়তনে ছোট হলেও (আমাদের সালতা প্রভিন্সের মতো) জনসংখ্যায় বিশ্বে অষ্টম তারা। প্রায় ১৬৬ মিলিয়ন জনসংখ্যা। পানিতে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল দূষণ, বায়ু ও শব্দ দূষণে জর্জরিত দেশটিতে ফুটবল আবির্ভূত হয় আনন্দের উপলক্ষ হিসেবে। তারা মনে করে, আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপ জিতবে। মেসির হাতে ট্রফি উঠবে।

কারণ, দীর্ঘদিন ধরে এমন একটা কিছুর জন্য লড়াই করছে আর্জেন্টিনা। সেখানকার শিক্ষার্থীরা পড়া বাদ দিয়েও মেসির খেলা দেখার জন্য উদগ্রীব। ম্যারাডোনার জন্য ওদের ভালোবাসা দেখুন। ২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর যখন তিনি মারা গেলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট লীগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছিল, যেটি তাদের প্রধান খেলা।

মোহাম্মদ সবুজ বলেছেন, তার অন্যতম স্বপ্ন মেসি বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবে। সে আমাদের দেশে আসতে চায়। আমাদের ফুটবল কালচারকে দিব্যদর্শনে অনুভব করতে চায়।

সূত্রঃ মানবজমিন

সংবাদটি শেয়ার করুন