দেশের সংবাদ ফিচার্ড

ভূমিকম্প ও অগ্নিঝুঁকি কমাতে ঢাকার প্রতিটি ভবন সরেজমিনে পরীক্ষা করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)

ভূমিকম্প ও অগ্নিঝুঁকি কমাতে ঢাকার প্রতিটি ভবন সরেজমিনে পরীক্ষা করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)

ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে ঢাকার প্রতিটি ভবন সরেজমিনে পরীক্ষা করবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে জনবলসংকটের কারণে এ কাজটি তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে করবে সংস্থাটি।

 ১১ মার্চ, শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নগর উন্নয়ন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ৪২টি ভবন ভাঙার জন্য সংশ্লিষ্ট মালিকদের তাগাদাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় উপস্থিত রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বিদ্যমান সব ভবন পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি কীভাবে হবে, সেটি ঠিক করতে ৩০ দিনের মধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। পরীক্ষায় ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ভবনগুলো ভূমিকম্পের জন্য কতটা সহনীয়, তা দেখা হবে।

রাজউকের আওতাধীন এলাকায় (১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার) ২১ লাখের বেশি ভবন ও স্থাপনা আছে। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় মাত্র ৩ হাজার ২৫২টি ভবনে সমীক্ষা চালিয়েছে রাজউক। যদিও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসসংক্রান্ত জাতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজউকের আওতাধীন এলাকায় সব কটি ভবন যাচাই করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করার কথা। ব্যাপক অর্থ ব্যয় ও জনবলসংকটের কথা বলে ১২ বছরেও সেই কাজটি করতে পারেনি রাজউক। এবার গত সপ্তাহে পরপর দুটি ভবনে বিস্ফোরণ ও তার আগে গুলশানের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রাজউকের এলাকার সব ভবন যাচাই করার সিদ্ধান্ত এল।

৩ হাজর ২৫২টি ভবনে করা রাজউকের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪২টি ভবন ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ভবনগুলো ভাঙতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট ভবনমালিকদের চিঠি দিয়েছে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা বোর্ডের ভবন রয়েছে।

এবার নগর উন্নয়ন কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবনগুলো অপসারণের জন্য আবার সংশ্লিষ্ট ভবনমালিকদের তাগাদাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান ব্যবহারকারীদের বিকল্প ব্যবস্থা করার মাধ্যমে কীভাবে ভবনগুলো খালি করা হবে, তা তাগাদাপত্রে জানতে চাওয়া হবে। রাজউকে এ–সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা দিতে ৩০ দিন সময় দেওয়া হবে। আর ভবনগুলো অপসারণ করতে বেশি সময় লাগলে রাজউক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হবে। যাতে জনসাধারণ এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে পারে।

এদিকে নগর উন্নয়ন কমিটির সদস্য বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন প্রথম আলোকে বলেন, কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সাত দিনের মধ্যে ভবনগুলো খালি করতে হবে। আর পরের ৬০ দিনের মধ্যে ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। কারা এসব ভবন ভাঙবে, সেটা আলোচনা করে ঠিক করা হবে।  এদিকে ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থাপত্য নকশার পাশাপাশি কাঠামোগত নকশা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছাড়া গ্যাসের লিকেজ যেখানেসেখানে রাসায়নিক দ্রব্য মজুত বিক্রি বন্ধে তদারকি বাড়াতে শিগগিরই একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর ইমরাত নির্মাণ বিধিমালায় নগর উন্নয়ন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই কমিটির ঢাকা মহানগর এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার কথা।

গৃহায়ণ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মনজুরুর রহমান, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার সাব্বির আহমেদ প্রমুখ অংশ নেন।

তথ্যসূত্র : প্রথম আলো

 




সংবাদটি শেয়ার করুন