জীবন ও স্বাস্থ্য

মেয়েদের কন্ডোম সালাদ, যৌনতা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে

২৬ বছরের অরুণার লক্ষ্য ভারতে নতুন দিন তৈরি ফাইল চিত্র

মেয়েদের কন্ডোম সালাদ, যৌনতা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ‘ফিসফিসানি’ দূর করতে চান অরুণা

অরুণা চাওলা। বাড়ি দিল্লিতে। বছর ছাব্বিশের অরুণা লেখাপড়া করে আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন। সেই মতোই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু কিছু দিন ওকালতি করার পরেই তাঁর পথ বদলে যায়। নিজেই বদলেছেন। যৌনতা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারতীয়দের ধারণা সম্পর্কে কৌতূহল আর তা নিয়ে সমীক্ষা চালাতে গিয়েই বদলে গেল পথ। বদলে গেল জীবনও। তবে তিনি প্রথম নন, এর আগে অন্য এক ভারতীয় মহিলা কোমল বালদোয়া কন্ডোম উৎপাদক সংস্থা গড়েছেন। তবে অরুণার কাহিনি অনেকটাই অন্য রকম।

কন্ডোমের ব্যবসা করার ইচ্ছা না থাকলেও আইনজীবীর পেশা ঠিক ভাল লাগছিল না বলেই কাজ থেকে দু’মাসের ছুটি নিয়েছিলেন অরুণা। সেই সময়েই শুরু হয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে খোঁজ খবর করা। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অরুণা বলেন, ‘‘একেবারে লেখাপড়া করার মন নিয়েই দু’মাস এ নিয়ে খোঁজ খবর নিই। আর তখনই আমি বুঝতে পারি শুধু কন্ডোমের জোগান ও দাম নয়, কন্ডোম নিয়ে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাই অনেক কম।’’

পুরুষশাসিত সমাজে যৌনতার বিষয়েও মহিলারা যে বেশির ভাগ সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না সেটাও অরুণা জানতে পারেন সমীক্ষা চালিয়ে। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেই সমীক্ষা থেকেই তিনি জানতে পারেন জন্ম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারতীয় পুরুষদের মধ্যেও যথেষ্ট অজ্ঞতা রয়েছে। আর তার ফল ভুগতে হয় মেয়েদের। অকাঙ্খিত গর্ভধারণ থেকে গর্ভপাতের ঝুঁকি নিতে হয় তাদের। এই ভাবনা থেকেই মহিলাদের জন্য কন্ডোম তৈরির পরিকল্পনা করেন অরুণা। আর করোনা অতিমারির মধ্যেই ‘সালাদ’ নামে মহিলাদের কন্ডোম বাজারে এনেছেন তিনি। ২০২০ সালের জুন মাসে নিজের জমানো টাকা দিয়েই শুরু করেন উৎপাদন ও ব্যবসা। এক জন মহিলা হিসেবে কন্ডোমের ব্যবসা করতে গিয়ে অনেক চাপের মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। তবে সব কিছু টপকে এখন অনলাইনেও ‘সালাদ’ বিক্রির ব্যবস্থা করে ফেলেছেন তিনি।

সাধারণেমর মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে চান অরুণা।

সাধারণেমর মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে চান অরুণা।
ফাইল চিত্র


এক সাক্ষাৎকারে অরুণা জানিয়েছেন, তাঁদের সংস্থার কন্ডোম একেবারে রাবার গাছ থেকে সংগ্রহ করা প্রাকৃতিক ল্যাটেক্স দিয়ে তৈরি। একই সঙ্গে এই কন্ডোম কোনও ক্ষতি করে না এবং এর কোনও গন্ধও নেই। পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয় না এমন জিনিস দিয়ে শুধু তৈরি করাই নয়, কন্ডোমের প্যাকেটের ক্ষেত্রেও সেটা মেনে চলা হয়। অরুণার, দাবি, ‘‘আমাদের লক্ষ্য শুধু কন্ডোম বিক্রি করা নয়, বরং আমরা চাই, যৌনতা নিয়ে ফিসফিসানি থেকে মুক্ত হোক ভারতীয় সমাজ। যে ভারতে মাত্র ৫.৬ শতাংশ মানুষ কন্ডোম কিনতে অভ্যস্ত তাঁদের সচেতন করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ একই সঙ্গে অরুণা জানিয়েছেন, আগামী দিনে প্রতিটি কন্ডোম বিক্রির টাকার একটা অংশ যৌন সচেতনতার কাজে খরচ করা হবে।

-সূত্রঃ আনন্দবাজার

সংবাদটি শেয়ার করুন