ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

ধারাবাহিক একটি রিয়্যালিটি উপন্যাস || দশচক্র || সিদ্ধার্থ সিংহ ।। পর্ব ৭

পর্ব – ৭ | পূর্ব প্রকাশের পর…

ধারাবাহিক একটি রিয়্যালিটি উপন্যাস || দশচক্র || সিদ্ধার্থ সিংহ ।। পর্ব ৭

— হ্যাঁ, তুমি চেনো নাকি?

— ও তো আগে আবৃত্তি-টাবৃত্তি করত।

— তাই নাকি?

— হ্যাঁ, আমার এক বন্ধু ওকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। আমার বেশ কিছু কবিতা ক্যাসেটে তুলে আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। আমার বন্ধুবান্ধবরা যে সব অনুষ্ঠান করে, সে সব জায়গায় যাতে ওকে আবৃত্তি করার সুযোগ করে দিই, সেই জন্য। কয়েক জায়গায় করেও দিয়েছিলাম।

— তোমার বন্ধু?

— বন্ধু মানে কি, আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। আমরা দাদা ডাকতাম। টেলিফোনে কাজ করত। খুব বড় পোস্টে। ফোন খারাপ হলেই ওকে বলতাম। ও সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দিত। ও তো কণিকার বস ছিল। কণিকা তো ওর সঙ্গেই থাকত।

— থাকত! মানে?

— মানে বুঝিস না? বয়স কত হল? তখনও ও সল্টলেকের ফ্ল্যাটটা পায়নি। মানিকতলার কাছে আমার একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট ছিল। আমার সেই বন্ধু ওটা কিনতে চেয়েছিল কণিকাকে নিয়ে থাকবে বলে। আমি বিক্রি করিনি। পরে শুনলাম, আমার সেই বন্ধুকে ধরেই নাকি ও অনেক কিছু বাগিয়েছে।

— তাই, কী নাম তার?

— ওই তো, সল্টলেকের ডি এন ব্লকে থাকত… কী নাম যেন… কী নাম… ও হ্যাঁ, অপূর্বকুমার সরকার। বহু দিন যোগাযোগ নেই তো… কলকাতা টেলিফোনের সবাই চেনে। কণিকার দুটো মেয়ে ছিল না! যমজ। কী যেন নাম! রুনু ঝুনু, না?

— রুনু ঝুনু!

— হ্যাঁ, ও তো তাই বলত, আমার তিন মেয়ে রুনু ঝুনু বুনু।

— বুনু!

— আসলে আমার ওই বন্ধুর মেয়ের নাম ছিল বুনু। ওর এক ছেলে এক মেয়ে। ওদের দাদু-দিদারা ওর ছেলেকে দাদুভাই আর ওর মেয়েকে বুনু বলে ডাকত। তাঁদের দেখাদেখি বাড়ির সবাই ওকে বুনু বলে ডাকতে শুরু করে। এমনকী, আমার সেই বন্ধুও।

— সে কী!

— ও যখন কণিকাকে অফিসের থ্রু দিয়ে সল্টলেকের ফ্ল্যাটটা পাইয়ে দিল, তখন আমার সেই বন্ধু তো ওই ফ্ল্যাটে গিয়েই থাকত। ওর মেয়েদের ইংরেজি শেখাত। মাঝে মাঝে স্কুটারে করে চিড়িয়াখানা, দক্ষিণেশ্বর, ডায়মন্ড হারবার, কত জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যেত। ওই বাড়িতেই তো ওর প্রথম হার্ট অ্যাটাকটা হয়।

— তাই নাকি?

— শুনেছিলাম, উত্তেজনা থেকে নাকি ওটা হয়েছিল। সেটা ঝগড়ার কারণেও হতে পারে। আবার সেক্স করতে গিয়েও হতে পারে। হঠাত্‌ করেই নাকি ওর হার্টবিট খুব বেড়ে গিয়েছিল। কণিকা খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। তখন যদি ওর কিছু হয়ে যেত, কণিকা কেস খেয়ে যেত। ওর বউ খুব জাঁদরেল মহিলা। চেনে না তো…

— উনি এখনও আছেন?

— জানি না বেঁচে আছেন কি না, বহু দিন কোনও যোগাযোগ নেই তো, তুই কিন্তু আবার বলিস না, আমি তোকে এ সব কথা বলেছি।

আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ঋজুর। মনটা কেমন খিচ মেরে গেছে। আগের জায়গায় ফিরে এসে কণিকাকে ডেকে নিয়ে ওদের থেকে একটু দূরে সরে গেল ও। তুমি অপূর্বকুমার সরকারকে চেনো?

প্রশ্ন নয়, ঋজুর মুখে ওই নামটা শুনে ও যেন ভূত দেখল। কে বলল তোমাকে?

— যে-ই বলুক। তুমি চেনো?

— হ্যাঁ। উনি আমাকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করতেন।

— আমি তো অন্য কথা শুনলাম।

— কী শুনেছ?

— উনি নাকি তোমাকে নিয়ে থাকতেন?

— একদম বাজে কথা। উনি যখন আমার বস হয়ে এলেন, তার সাত দিন পরেই তো রিটায়ার হয়ে গেলেন।

— তোমার সঙ্গে ওঁর কী সম্পর্ক ছিল?

— বললাম তো। তুমি আমাকে একদম বিশ্বাস করো না, না? বলেই, সারা মুখ ঘন মেঘে ঢেকে ফেলল। চোখ ছলছল হয়ে উঠল। ‘আমি কবিতা পড়ব না’ বলেই, হনহন করে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল। পিছু পিছু ঋজুও। ওদের দু’জনের কারওরই সে দিন কবিতা পাঠ করা হল না।

মা আর আঙ্কেলের মন কষাকষি দেখে ছোট বাবি দু’কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যাবার সময় দরজা টেনে, ও পাশ থেকে টানটান করে পর্দা দিয়ে দিল।

শেষ চা খেয়ে রাত এগারোটা নাগাদ যখন ঋজু ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে, টা টা করার জন্য দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে কণিকা, তখন ছোট বাবি এসে বলল, আঙ্কেল, সে দিন আপনি বলছিলেন না, আজকাল পুজো সংখ্যায় আপনি কবিতা দেবেন? তা, মা’র এই কবিতাটা আমি কপি করে রেখেছি, আপনারটা যখন দেবেন, এটা দিয়ে দেবেন?

আজকাল পুজো সংখ্যা দেখেন সুব্রত সেনগুপ্ত। তাঁকে নিজের কবিতা দেওয়ার সময় ওই একই খামের ভিতরে কণিকার কবিতাটাও দিয়ে দিয়েছিল ঋজু। কিন্তু আজকাল যখন বেরোল, তাতে কণিকার কবিতা নেই। সকালেই ফোন করল ছোট বাবি— আঙ্কেল, এটা কী হল? মা’র কবিতা আজকালে নেই কেন?

ঋজু মনে মনে বলল, কী করে বলব, আমি তো ওই কাগজের সম্পাদক নই, হলে শুধু কবিতা নয়, তোমার মায়ের উপন্যাস, এমনকী জীবনীও ছেপে দিতাম। কিন্তু মুখে বলল, তাই নাকি? ঠিক আছে, আমি দেখছি।

— আর কী দেখবেন? কাগজ তো বেরিয়ে গেছে। লেখাটা আপনি দিয়েছিলেন তো?

— মা উঠেছে? মাকে দাও।

— মা’র মনমেজাজ ভাল নেই। কারও ফোন ধরছে না।

— বলো, আমি করেছি।

— এখানে নেই। বলেই, রিসিভার নামিয়ে রাখল। ছোট বাবি যে এ রকম ব্যবহার করতে পারে, ঋজু ভাবতেই পারেনি। অথচ এই সে দিনও পুরো ব্যাপারটাই ছিল উল্টো। মনে মনে ঋজু ভাবল, ভাগ্যিস সে দিন ও রকম একটা রিস্ক নিয়েছিল সে।

ধারাবাহিক একটি রিয়্যালিটি উপন্যাস || দশচক্র || সিদ্ধার্থ সিংহ ।। পর্ব ৬

লেখক, গল্পকার, ভারত


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন