১৬ ডিসেম্বর হল গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয় দিবস ।।। বিদ্যুৎ ভৌমিক
১৬ ডিসেম্বর হল গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয় দিবস। গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা ও পরম ভালবাসার সাথে সমগ্র জাতি স্মরণ ও উদযাপন করছে ৫৩তম গৌরবউজ্জল মহান বিজয় দিবস। প্রবাসেও উদযাপিত হচ্ছে ৫৩তম গৌরবোজ্জ্বল মহান বিজয় দিবস । ব্রিটিশ শাসনাধীন দুইশ বছরের দাসত্ব এবং পাকিস্তানী কুশাসনের ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার দিন হল গৌরবউজজল বিজয় দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চ বাংগালী জাতির প্রতি ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন । ৫২ বছর আগে এই দিনেই অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়েছিল নয় মাসের যুদ্ধ শেষে মহান বিজয় ও মুক্তির গান। ভারতের সাহায্য ও সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের নিরন্তর মুক্তির লড়াইয়ের পর বিজয়ী হয় বাঙালী জাতি। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংগালী জাতি চূড়ান্ত বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছিল একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর । ছিনিয়ে আনা হয় লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর একদিকে গৌরবোজ্জ্বল বিজয়ের – বাঁধভাঙ্গা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। আমার প্রাণপ্রিয় পিতাও মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছিলেন । মিত্র বাহিনীর ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষর ও সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীকে পর্যুদস্ত হয়ে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে মিত্র বাহিনীর কাছে । বিশ্ব মানচিত্রে আলোর ঝর্ণাধারায় প্রজ্বলিত হয়ে উঠেছিল এক নতুন দেশ যার নাম হল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। রক্ত লাল পতাকায় সিঞ্জিত হয় বাঙালীর চেতনা । অহঙ্কার, আত্মমর্যাদা ও বিজয়ের গৌরবে আমাদের গৌরবান্বিত হওয়ার দিন হল মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর । মহান বিজয় দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতি সৌধে মুক্তিযুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো সাহাবুদ্দিন ও মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৫৩তম মহান বিজয় দিবসের শপথ হউক, যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল, ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মহান বিজয় দিবস তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকার, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ সহ আমাদের সকলের । মহান বিজয় দিবসে আরও শপথ হউক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ও গনতান্ত্রিক চেতনা সমুন্নত রাখা, সর্বোপরি দেশের ভিতরে ও বাহিরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, মহান মুক্তিযুদ্ধ,মহান স্বাধীনতা দিবস ও মহান বিজয় দিবস সম্পর্কে জানানোর দায়বদ্ধতা সরকার, রাজনীতিবিদ,বুদ্ধজীবি সুশীল সমাজ সহ সকলের । দেশমাৃকার সর্বাঙ্গীন উন্নতির বৃহত্তর স্বার্থে ও একই সাথে গনতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার বৃহত্তর স্বার্থেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তি এবং রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও তাদের দোসরদের আস্ফালন রুখে দাড়িয়ে প্রকৃত গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতেই হবে ।
বিদ্যুৎ ভৌমিক- কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’র উপদেষ্টা।
মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩