দেশের সংবাদ

সিলেটের জননেতা বদরুদ্দিন কামরান আর নেই

মা-বাবার পাশে শায়িত হবেন কামরান

সিলেটের রাজনীতি অঙ্গনের বটবৃক্ষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার অগ্র সৈনিক, একাধিকবার একই সিটে কাউন্সিলার ও পরবর্তীকালে সিলেটের নির্বাচিত  নগর পিতা , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা, সিলেটের মাটি ও মানুষের জননেতা বদরুদ্দিন কামরান আর নেই, কোভিড-১৯ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে (ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন) ।

তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সোমবার (১৫ জুন) ভোর ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র কামরান গত ৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরদিন তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শরীর আরও খারাপ হলে ৭ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৮ জুন কামরানের শরীরে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়েছিলো। তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার ভোরে মারা যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের টানা ১৭ বছরের এই সভাপতি।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মে কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানেরও করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তিনি অনেকটা সুস্থ রয়েছেন এবং বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে পরিবার জানিয়েছে।

তাঁর মৃত্যুতে দেশে-বিদেশের শোকের ছায়া নেমে আসে।  জননেতা বদরুদ্দিন কামরানের মৃত্যুতে দেশের মত প্রবাসেও শোকের ছায়া নেমে আসে। কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি সিবিএনএ, সিবিএনএ২৪ডটকম তাঁর অকাল প্রয়ানে গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সিবিএনএ-এর নির্বাহী সদেরা সুজন এবং সহযোগী সম্পাদক এবং বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মন্ট্রিয়লের সাবেক সভাপতি দীপক ধর অপু। এছাড়াও প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিবর্গরা শোক প্রকাশ করে স্যোশাল মিডিয়ায় জননেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করছেন।

মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় তিনজন নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক স্বরাষ্ট্র, টেলিযোগাযোগ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী, জননেতা মোহাম্মদ নাসিম এবং বাংলাদেশ সরকারের  ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মো. আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন। তাঁদের মৃত্যুতে বাংলাদেশ সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও গণমুখী নেতাদেকে হারালো। বাংলাদেশ হারেয়েছি তিনজন অভিভাবক’কে।

নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন কামরান

সিলেটে আওয়ামী লীগের কথা উঠলেই ভেসে ওঠতো একটি মুখ। মাথায় সাদা টুপি, মুখে কালো গোঁফ আর চোখে চশমা পড়া সদা হাস্যোজ্জ্বোল এই লোকটির নাম বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।

কেবল আওয়ামী লীগ নয়, সিলেটের রাজনীতিরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কামরান। আওয়ামী লীগের সীমানা পেরিয়ে পুরো নগরবাসীরই আস্থার প্রতিক হয়ে ওঠেছিলেন কামরান। একাধিকবার সিলেট সিটি করোপরেশনের মেয়র ও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। কামরানের অনুসারীরা শ্লোগান দিতেন- ‘নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন কামরান।’ নগরবাসীর সেই প্রিয় নাম হারিয়ে গেছেন চিরতরে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভোরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন কামরান। এরপর থেকেই রাজনীতিতে তার উত্থান পর্ব শুরু।

১৯৬৯ এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝখানে প্রবাসে থাকায় একবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান।

২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় দুই বার কারাবরণ করতে হয় এই নেতাকে। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ দুটি সিটি নিবর্চাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চোধুরীর কাছে হেরে যান তিনি।

১৯৮৯ সালে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সিলেটের আওয়ামী রাজনীতির শীর্ষ নেতৃত্বে আসেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ১৯৯২ সালে এবং ১৯৯৭ সালে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ২০০২ সালে প্রথমবারের মত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন কামরান। ২০০৫ এ সম্মেলনের মাধ্যমে এবং ২০১১ সালে গঠিত কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের পুনরায় সভাপতির দায়িত্ব পান। দীর্ঘ তিন দশক সিলেটের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।

গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সভাপতির পদ হারান কামরান। প্রায় তিন দশক কামরানবিহীন পথচলা শুরু হয় সিলেট আওয়ামী লীগের। তবে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মিলনে নির্বাহী সদস্য করা হয় কামরানকে। (সিলেটটুডে২৪ডটকম থেকে সংকলিত)

 

সি/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন