দেশের সংবাদ ফিচার্ড

অবন্তিকার আত্মহত্যা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই: অবন্তিকার সহপাঠী

ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা

অবন্তিকার আত্মহত্যা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই: অবন্তিকার সহপাঠী, জোহরের পর জানাজা, বাবার কবরের পাশে দাফন হবে অবন্তিকার

যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। কুমিল্লা নগরীর বাসায় শুক্রবার রাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার পর সেই পরিবারে এখন শোকের ছায়া। শনিবার সকালে অবন্তিকার মা ও ভাইকে সান্ত্বনা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তিনজন শিক্ষকের নেতৃত্বে ৩৫ জন শিক্ষার্থী কুমিল্লায় যান।

অবন্তিকার সহপাঠী আবদুর রহমান ও মুশফিকুর রহমান বলেন- অবন্তিকা পুরো ক্লাস মাতিয়ে রাখত, সে কখনও কারও সঙ্গে হাসি ছাড়া কথা বলতো না। তার মৃত্যুর খবর শুনে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আমরা চাই ঘটনাটির একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

এ সময় জবির আইন বিভাগের শিক্ষক মুনিরা জাহান সুমি বলেন, অবন্তিকা আমাদের প্রিয় ছাত্রী ছিল। একজন ছাত্রীকেও যদি ভাইভা পরীক্ষায় ভালো নম্বর দিতে চাইতাম সেখানে অবন্তিকার নাম চলে আসতো। তার এভাবে মৃত্যু হবে এটা কখনও চিন্তাও করিনি।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবন্তিকার বাসায় ছিলেন। এ সময় তিনি পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেন, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত হয়েছে। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে কথা হচ্ছে। রাতের মধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে বলা হয়েছে।

মেয়ের মৃত্যুর জন্য অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ছাড়াও পুরো জবি প্রশাসন দায়ী করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তারা কেন এক বছর ধরে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে আমার মেয়েকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো। আহাজারি করে তিনি বলেন, কোথাও বিচার পায়নি আমার মেয়ে। কারণে-অকারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২২ সাল থেকে আমার মেয়ের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।

অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। শুক্রবার রাতে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাও এলাকার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে অবন্তিকা তার ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আম্মান সিদ্দিকী নামের তার এক সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি যদি কখনও সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাব না।’

অবন্তিকা আরও লিখেছেন ‘আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্টমর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজার আমাকে এটাই বলছিল যে, আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার জানাজা হবে জোহরের পর। গতকাল রাতে শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আজ শনিবার কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা কবরস্থানে বাবার পাশেই দাফন করা হবে অবন্তিকাকে।

ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।

শনিবার (১৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে গণমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছেন মৃত ফাইরুজ অবন্তিকার মামা লুৎফুর আনোয়ার ভুঁইয়া।

 

 

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন