ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

এ সপ্তাহের গল্প ঃ আমার বৌ কই ||  অঞ্জলি দেনন্দী মম

এ সপ্তাহের গল্প ঃ আমার বৌ কই ||  অঞ্জলি দেনন্দী মম

বিয়ের পর প্রতিটি মুহূর্ত কল্পিতার নরক যন্ত্রণায় কাটছে। বর সুখেন্দ্র মাথা জ্বালিয়ে কথা বলে। শাশুড়ি তো খোঁটায় পোঁটা বের করে দিচ্ছি। শ্বশুর উসঘুস করে বৌমার নরম বক্ষাঙ্গে হঠাৎ করেই আচমকা ধাক্কা দেওয়ার, যেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়ে গেছে। মাতাল, লম্পট, ব্ল্যাক মানিতে ভরা তার ঘরের সিন্দুক, আলমারী, বাক্স। ননদ সুখেন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে বেশিরভাগ সময় টিভি দেখে। বর ও শ্বশুর দুজনে বাড়িতে বসেই ব্যবসা চালায়। বাড়ির সামনের অংশটা দোকান আর পেছনের অংশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকে সকলে। সোনা, রুপোর দোকানে অনেকজন কর্মচারী কাজ করে। চোরাই সোনা সস্তায় কিনে, রাতারাতি গলিয়ে নতুন গয়না বানায়। চড়া দামে তা বিক্রী হয়। ননদের পুরুষ সঙ্গীর দল মাঝ রাত পর্যন্ত ছাদে গান, বাজনা, নাচ করে। ননদ তাদের মক্ষীরানী।

বউয়ের বাপের বাড়ি থেকে কি করে চুষে, টেনে আদায় করা যায়, সদা সর্বদাই তার জন্য কল্পিতার ওপরে নির্যাতন চলে। বর তো চড় মারে। কোন কারণ নেই। হঠাৎ করে সে চেঁচিয়ে উঠে, ধড়মড় করে এসে বৌকে বেদম মারতে থাকে। ডাক্তার ডাকা হয়। পাশেই তার ডিস্পেন্সারী। সে এসে ঘাড়ে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়। শাশুড়ি ল্যাং মেরে ধমাস করে ফেলে দেয়। ননদ খাবারের মধ্যে সাবান গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়ে অসুস্থ করে দেয়। বাবাকে কল্পিতা সব বলল। যখন ওর বাবা জামাই ষষ্ঠীতে মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ করতে এলো, তখন। বাবা কল্পিতাকে সঙ্গে করে কাছাকাছি এক দোকানে নিয়ে গিয়েছিল, তার শ্বশুর, শাশুড়ি, বর, ননদ ও তার জন্য পোশাক কেনার জন্য। সেই সময় বাবা তার নিজের কারটি ড্রাইভ করছিল আর মেয়েটা পাশের সিটে বসে এসব কথা বলতে লাগল। বাবা শুনে বলল, “আমার বাড়ি ষষ্ঠীতে আয়, তারপর দেখছি কি করা যায়।”

সেরাতটি মেয়ের বাড়ি কাটিয়ে বাবা চলে গেল। মাকে গিয়ে সব বলল। মা কেঁদে ভাসালো।         ষষ্ঠীতে জামাইকে শ্বশুর জিজ্ঞাসা করল, “তোমার মাথার রোগের জন্য আমি আমার বিশিষ্ট বন্ধুর কাছে নিয়ে যাব। সে খুব ভালো মানসিক রোগের চিকিৎসা করে। অনেককে সে সুস্থ করেছে।” জামাই তো শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। বলল, “আমি আর আপনার মেয়েকে আমার সঙ্গে করে আমার বাড়ি নিয়ে যাব না। ত্যাগ করব।” মা এসে তার পায়ে ধরল। তখন দয়া করে সে বৌকে গ্রহণ করল।

ষষ্ঠী কাটিয়ে বউকে নিয়ে বাড়ি এসেই শুরু করল। মা, বাবা ও বোনকে সব কথা বলল। সবাই মিলে গরম তেল ঢেলে তার দাবনা দুটিতে ফোস্কা পরিয়ে দিল। খুব কষ্ট পেল। সহ্য করল। এবার রাতে স্বামী তার স্ত্রীকে বলল, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি সন্তানের বাবা হতে চাই।”

এরপর সে তার পত্নীকে পতির অধিকার দিয়ে গর্ভবতী করল। সেই অবস্থায় রোজ দিনে হাড় ভাঙা খাটুনি আর রাতে বরকে এক ঘন্টা বাদ বাদ যৌন সঙ্গ দেওয়া। তিনমাস পর তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হল। ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছেই না। কেউ চিকিৎসকের কাছে ওকে না নিয়ে গেল বা ওর কাছে চিকিৎসককে নিয়ে এলো। যখন ওর চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে তখন মাকে ফোন করে সব বলল। মা, বাবা এসে সঙ্গে করে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেল। ঔষধ খেয়ে, একটু সুস্থ হল। এরপর কল্পিতা এক সপ্তাহ বাপের বাড়ি রইল। ওকে আনার আগেই সে কথা মা কল্পিতার শ্বশুরবাড়ির সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল। এক সপ্তাহ পর ওকে মা, বাবা বরের কাছে দিয়ে গেল।

সেরাতেই আবার তাকে গর্ভবতী করল। জোরপূর্বক। আবার সেই আগের মতো একই। এবার একমাস পরই তার এ বাচ্চাও নষ্ট হল। এবার আর ফোন করতে দিল না। কয়েক ঘন্টা পর সে নীল হয়ে গেল। তারপর মারা গেল।

অতি সহজ উপায়। পুলিশের সাধ্য নেই বধূ হত্যার প্রমাণ পায়।

এরপর একমাস যেতেই সে বোনের নার্স বান্ধবীকে আবার বিয়ে করল। এর সঙ্গে বহু পুরোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শারীরিক সম্পর্ক তো ছিলই। এ গরীব বলে বিয়ে করেনি। বাবা নেই। মা আর মেয়ে। নার্সিং করে সংসার চলে। তাই। আর কল্পিতার বাবা তো খুব ধনী। সেইজন্য। এই বউ এসে, মাথা গরম করলেই, বরকে ইনজেকশন দিয়ে শান্ত রাখে। আর গর্ভবতী করতে চাইলেই ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়।

পরে সে ননদ তথা বান্ধবীকে বেড়াতে নিয়ে গিয়ে রাস্তায় গুণ্ডা দিয়ে ধর্ষণ করালো। আর খুন করে শ্বশুর ও শাশুড়ির কাছে নিয়ে এলো। বরকে বলল, “আমি তোমাকে বাতিল করলাম। চললাম।” বলে সে বেরিয়ে চলে গেল।

পরে বর তাদের বাড়ি গিয়ে দেখে তালা ঝুলিয়ে ওরা মা ও মেয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানে যে সে কানাডায় নার্সের চাকরী নিয়ে, মাকে সঙ্গে করে চলে গেছে। সেখানেই থাকে ওরা। পাড়ায় বলে গেছে যে তারা আর কোনদিন ভারতে ফিরে আসবে না।

এখানে থাকাকালীন, বরকে ইনজেকশন দিয়ে দিয়ে বদ্ধ উন্মাদ করার ব্যবস্থা করেই গিয়েছিল। কয়েক মাস পর সে বদ্ধ পাগল হয়ে শুধু নেশা করে রাস্তায় রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে আর বলে, “আমার বৌ কই?” বাবা ও মা কিছুতেই তাকে বাড়িতে রাখতে পারে না।

অঞ্জলি দেনন্দী, মম । কথা সাহিত্যক, দিল্লী, ভারত

 



 

সংবাদটি শেয়ার করুন