জীবন ও স্বাস্থ্য ফিচার্ড

ওমিক্রন আতংকে আমাদের করণীয় ||| ড.  শোয়েব সাঈদ

ওমিক্রন আতংকে আমাদের করণীয় ||| ড.  শোয়েব সাঈদ

 

ভারতে ঘাপটি মেরে থাকা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট কুম্ভ মেলার সুযোগে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে এখন যৌবন হারিয়ে বেশ শান্ত হয়ে এসেছে, বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক অবস্থাও হাতছানি দিচ্ছে। তবে বদ  ভ্যারিয়েন্টের শঙ্কা আমাদের কখনো পিছু ছাড়েনি।

এই শঙ্কা আবারো সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করেছে। অতি সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রাপ্ত নতুন ভ্যারিয়েন্ট বি.১.১.৫২৯ ওমিক্রন নাম ধারণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক পঞ্চম ভিওসি অর্থাৎ ৫ নম্বর ভ্যারিয়েন্ট অব কন্সারন বা বদ ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

আলফা, বেটা, গামা আর ডেল্টার চাইতে ওমিক্রনের দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর সক্ষমতা আর ভ্যাকসিন ফাঁকি দেবার প্রবল আশংকার মধ্যে বিশ্বব্যাপী সতর্ক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সুনির্দিষ্টভাবে ওমিক্রনের আচরণ কতোটা ভয়াবহ হতে পারে, ডেল্টার চেয়েও বদ হতে পারে কিনা জানতে হলে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

এই ভ্যারিয়েন্টে ব্যাপকভাবে মিউটেশন ঘটেছে, ৫০টি মিউটেশনের দেখা মিলেছে এবং চিন্তার কারণ হচ্ছে স্পাইক প্রোটিনে সংঘটিত মিউটেশনের সংখ্যা এ যাবত প্রাপ্ত ভিওসিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক; স্পাইক প্রোটিনের জিনে ৩২টি মিউটেশন পাওয়া গিয়েছে। স্পাইক প্রোটিন ভাইরাসটির সংক্রমণ আর ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় মূল ভূমিকা পালন করার কারণে এই অংশে ব্যাপক পরিবর্তন ভাবনার কারণ তো বটেই। স্পাইক প্রোটিনে অধিক মাত্রার মিউটেশন সংক্রমণ আর ভ্যাকসিন প্রতিরক্ষায় কতোটা ঝামেলা বাঁধাতে পারে জানতে হলে বিজ্ঞানীদের আরও কিছুদিন  সময় দিতে হবে।

কোভিড ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব নানাবিধ ভুল ভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে সংকট অতিক্রম করেছে। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরী। ওমিক্রন সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত আসার আগ পর্যন্ত আমাদের কঠোর সতর্কতার মধ্যে থাকতে হবে। ওমিক্রন যাতে ছড়াতে না পারে নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। কানটি জায়গায় আছে কিনা দেখার পাশাপাশি চিলের দিকেও সতর্ক নজর রাখতে হবে।

ওমিক্রনের প্রথম দেখা মিলে ১১ নভেম্বর বোতসুয়ানাতে; দক্ষিণ আফ্রিকাতে এ পর্যন্ত বেশ কিছু   পজিটিভ কেস পাওয়া গেছে এবং একজন যাত্রীর মাধ্যমে হংকং পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বেলজিয়ামে ওমিক্রন আক্রান্ত একজন যাত্রী  মিলেছে যিনি মিসর এবং তুরস্কে ছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাতে নয়। ইস্রায়েলেও দেখা মিলেছে ওমিক্রনের। অর্থাৎ ওমিক্রনের প্রাথমিক গ্লোবাল ওরিয়েন্টেশন হয়ে গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতে কোভিড সংক্রমণ কমই ছিল, হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে।

ইউরোপের অনেক দেশ, আমেরিকা, কানাডা, জাপান ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসুয়ানা, লেসোথো, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া দেশগুলোর উপর।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০২০ সালের মার্চ-এপ্রিলে ইতালি থেকে করোনা আমদানীর বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এই মুহূর্তে কোভিড নিয়ন্ত্রণে আমাদের লজিস্টিক প্রথম সময়ের চাইতে অনেক উন্নত। ভুল করা যাবে না, বিমানবন্দরে কঠোর নজরধারী প্রয়োজন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আকাশ, স্থল আর জলপথে ওমিক্রনের প্রবেশ ঠেকাতে হবে।  এই মুহূর্তের  কঠোরতা আমাদের নিরাপত্তার জন্যে জরুরী। সময় গেলে সাধন হবেনা।

কোভিডের আগ্রাসনে সংকটে নিপতিত বিশ্ব অর্থনীতি নতুন আপদ ওমিক্রনে শংকিত,  সিঙ্গাপুর, হংকং সহ বিশ্বের অনেক দেশের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা লক্ষণীয়। বিজ্ঞানীরাও চিন্তিত, ভ্যারিয়েন্ট অব কন্সারনকে টপকে গিয়ে ভ্যারিয়েন্ট অব হাই কন্সিকুয়েন্সের উৎপত্তি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে।

ওমিক্রন কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে মাস খানেকের মধ্যে আমাদের পরিস্কার ধারণা হয়ে যাবে আর তাই এই মাস খানেক কঠোর সতর্কতা দিনশেষে আমাদের নিরাপদ রাখবে।


লেখকঃ কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেকনোলজিস্ট। কানাডার একটি বহুজাতিক কর্পোরেটে  ডিরেক্টর পদে কর্মরত। 

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন