বিশ্ব

কি চিকিৎসা নিচ্ছেন ট্রাম্প?


কি চিকিৎসা নিচ্ছেন ট্রাম্প?

অনিম আরাফাত ।। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এখন মেরিল্যান্ডের ‘ওলটার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে’ চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন, ট্রাম্পের করোনাভাইরাস সংক্রমণের মৃদু উপসর্গ রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। এর আগে প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে একটি বিবৃতি দেন হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক শন কনলি। এতে তিনি বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুস্থ আছেন। তাকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে না। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে আমরা রেমডিসিভির থেরাপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এরই মধ্যে প্রেসিডেন্টকে ওষুধের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে। তিনি শান্তভাবে বিশ্রাম নিচ্ছেন।

হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, চিকিৎসাধীন ট্রাম্পকে রেজেনেরন ফর্মাসিটিক্যালের পরিক্লোনল এন্টিবডি ককটেল দেয়া হয়েছে। এটি একটি পরীক্ষাধীন এন্টিবডি থেরাপি। কোভিড-১৯ সারাতে এই থেরাপির কার্যকারিতা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। রেজেনেরন একটি নিউ ইয়র্কভিত্তিক বায়োটেক কোম্পানি। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তাদের থেরাপি দেয়ার বিষয়টি রেজেনেরন নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের চিকিৎসকের অনুরোধেই তার ওপরে এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে। এটি ভিন্ন ভিন্ন ইমিউন কোষ থেকে তৈরি একটি এন্টিবডি। পরীক্ষাগারে এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পকে এর ৮ গ্রামের একটি ডোজ দেয়া হয়েছে।

গত জুন মাস থেকে মানবদেহে এর পরীক্ষা চালিয়ে আসছে রেজেনেরন। এখনো এটির পূর্ণাঙ্গ ফলাফল না পাওয়া গেলেও প্রাথমিকভাবে একে নিরাপদ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনো দেশটির ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন এর অনুমোদন দেয়নি। কনলি জানিয়েছেন, ওই থেরাপি ভাইরাসের বিস্তার হ্রাস করে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

ট্রাম্পকে দেয়া রেজেনেরনের থেরাপি এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের করোনা আক্রান্ত রোগীদেরও দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর পিটার হরবি বিবিসি রেডিওকে জানান, উত্তর ইংল্যান্ডের তিনটি হাসপাতালে এই থেরাপির ট্রায়াল চলছে। আগামী সপ্তাহে অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি হাসপাতালে এই ট্রায়াল চালু করা হবে সেখানে। তিনি জানান, এটি যথেষ্ট নিরাপদ। এখন পর্যন্ত ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মধ্যে এই থেরাপি দেয়া হয়েছে এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। হরবির মতে, এই থেরাপিটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এটি অসাধারণ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। এখন পর্যন্ত যতগুলো ওষুধ নিয়ে কাজ হচ্ছে এটি তার মধ্যে সব থেকে সম্ভাবনাময়।

এছাড়া প্রেসিডেন্টকে রেমডিসিভিরও দেয়া হয়েছে। একাধিক গবেষণায় রেমডিসিভির ব্যবহারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের উন্নতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র হাসপাতালে ভর্তি গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় রেমডিসিভির ব্যবহারের অনুমতি দেয়। শন কনলি বলেন, চিকিৎসাধীন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জিংক, ভিটামিন ডি, ফেমটিডিন, মেলাটনিন এবং অ্যাসপিরিন দেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকাল থেকে ট্রাম্প কিছুটা দুর্বলতা অনুভব করলেও ?মানসিকভাবে চাঙ্গা আছেন বলে জানান কনলি।

হাসপাতালে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, তিনি ক্লান্ত। তবে খোশমেজাজে আছেন। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পর ট্রাম্পকে পরীক্ষামূলকভাবে ককটেল ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন বিষয়ক পরিচালক অ্যালিসা ফারাহ বলেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি ট্রাম্প। তিনিই প্রেসিডেন্টের চার্জে আছেন। তবে শুক্রবারে সিনিয়রদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সের দায়িত্ব তিনি মাইক পেন্সকে দিয়েছেন। তাতে সভাপতিত্ব করার কথা মাইক পেন্সের। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অধীনে যদি প্রেসিডেন্ট এতটাই অসুস্থ হন যে, তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাহলে অস্থায়ী ভিত্তিতে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। বিবিসি লিখেছে, এর অর্থ হলো ট্রাম্প সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এবং কাজ শুরু না করা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাইক পেন্স দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

শুক্রবার ট্রাম্পকে তার হেলিকপ্টার মেরিন ওয়ানে করে ওয়াশিংটন ডিসিতে ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে রাখা হয়েছে। এখানেই বার্ষিক চেকআপ করান ট্রাম্প। এদিন মুখে মাস্ক ও পরনে স্যুট পরিহিত ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসের লন দিয়ে হেঁটে গিয়ে হেলিকপ্টারে আরোহণ করতে দেখা যায়। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নাড়েন এবং থাম-আপ দেন। তবে হেলিকপ্টারে আরোহণের আগে কোনো কথা বলেননি। তবে টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, আমার মনে হচ্ছে বেশ ভালোই আছি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে কাজ করছে সেটা নিশ্চিত হতে যাচ্ছি। ফার্স্ট লেডিও বেশ ভালো আছেন। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। অন্যদিকে তার মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ও ছেলে এরিক ট্রাম্প এই টুইটে রিটুইট করেছেন। তাতে তারা তাকে একজন যোদ্ধা হিসেবে প্রশংসা করেছেন। ইভানকা লিখেছেন, বাবা তোমাকে ভালোবাসি।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেলি ম্যাকইনানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশ প্রফুল্ল আছেন। তার হালকা লক্ষণ দেখা দিয়েছে। সারাদিন তিনি কাজ করেছেন। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে তার চিকিৎসক ও মেডিকেল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তিনি আগামী কয়েক দিন ওয়াল্টার রিডের প্রেসিডেন্সিয়াল অফিস থেকে কাজ অব্যাহত রাখবেন। তার এবং ফার্স্ট লেডির প্রতি ব্যাপক সমর্থনের জন্য ট্রাম্প ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিবিসির মার্কিন অংশিদার সিবিএস নিউজের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অল্প মাত্রায় জ্বর এসেছে।

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র এক মাসের সামান্য বেশি সময় বাকি। এ সময়ে ৭৪ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনায় আক্রান্ত। তার এই বয়সটি করোনাভাইরাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়ে তাকে ন্যূনতম হলেও কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে এখন প্রতিযোগিতার কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। তিনি যদি কোয়ারেন্টিনের রীতি অর্থাৎ ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে থাকেন, তাহলে মাঠ গরম রাখা তার জন্য কঠিন হতে পারে। আবার তিনি আক্রান্ত হওয়ার কারণে মার্কিন জনগণের সহানুভূতিও পেতে পারেন। তা নির্বাচনের পালে হাওয়া দিতে পারে, যেমনটা সুবিধা পেয়েছিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফলে বৃটেনে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরে যাওয়ার কথা মিনেসোটা, পেনসিলভ্যানিয়া, ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া, ফ্লোরিডা ও নর্থ ক্যারোলাইনাতে। কিন্তু তা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

একদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন করোনায় আক্রান্ত তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট দল থেকে জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেনের পরীক্ষা করা হয়েছে শুক্রবার। এতে তাদের করোনা নেগেটিভ এসেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তারা। তিনি মিশিগানের গ্রান্ড র‌্যাপিডসে শুক্রবার এক প্রচারণায় বলেছেন, দেশপ্রেমিক হোন। এটি একজন ‘টাফ গাই’ হওয়া নিয়ে কথা নয়। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার জো বাইডেনকে মাস্ক পরা নিয়ে মস্করা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, তার মতো আমি মাস্ক পরি না। যখনই তার (বাইডেন) দিকে তাকাবেন, দেখবেন তিনি মাস্ক পরে আছেন। ওদিকে ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী শিবির বলেছে, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে নেতিবাচক সব বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিচ্ছে। আবার ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডির সুস্থতা কামনা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি ডেমোক্রেটদের এক ভার্চ্যুয়াল প্রচারণায় বলেছেন, আমরা সবাই মার্কিনি। আমরা সবাই মানুষ। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ সুস্থ থাকুক। ডেমোক্রেটদের খুব শক্তিধর প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্পের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ার পর তার জন্য প্রার্থনা সুস্থতার জন্য। -মানবজমিন

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন