ফিচার্ড লেখালেখি

গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তির বৃহওম স্বার্থে  ইউক্রেনে  রাশিয়ার অবৈধ সামরিক অগ্রাসন অবশ্যই রুখতে হবে

গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তির বৃহওম স্বার্থে  ইউক্রেনে  রাশিয়ার অবৈধ সামরিক অগ্রাসন অবশ্যই রুখতে হবে

বিদ্যুৎ ভৌমিক।। ইউক্রেনে রাশিয়া বিনা প্ররোচনায় এক ভয়ানক, নগ্ন ও বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হয়। রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণের আজ ১১তম দিন।  ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের বেশ কিছ ভূমি, গুরুত্বপূর্ণ শহরও দুইটি পারমাণবিক স্থাপনা দখল করে নিয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাবে, এ পর্যন্ত প্রাণভয়ে নিজ দেশ ইউক্রেন ছেড়েছে ১৫ লাখ মানুষ। জীবন বাঁচাতেই তারা নিজ মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি শরনার্থী প্রতিবেশী পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। এছাড়া প্রতিবেশী হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, মলদোভা ও রোমানিয়াতেও আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে ইউক্রেনের মানুষ। ইউক্রেনে রণাঙ্গনে থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই  ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বীরত্বের সাথে নিজ মাতৃভূমিকে রক্ষা করার অবিরাম চেষ্টা করে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী তার সাহসিকতা ও দৃশপ্রেমের জন্য প্রশংশিত হচ্ছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ, শুধু ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ বা বিমানের শব্দ নয়, এই গর্জন আসলে রাশিয়া কর্তৃক সভ্যতা ধ্বংসের অপচেষ্টা, যার জন্য দায়ী থাকবে রাশিয়া।  ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ এ ভয়ানক আগ্রাসী আক্রমনে এক মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার অনৈতিক ও আগ্রাসী অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পুতিনের রাশিয়াতেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরোধী অব্যাহত প্রতিবাদ ক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে।  যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, নরওয়ে, বেলজিয়াম সহ ইউরোপের বিভিন্ন শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে স্বৈরাচারী পুতিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং গনতান্ত্রিক ইউক্রেনের পক্ষে  যুদ্ধবিরোধী  মানিবক প্রতিবাদ ক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। বিশ্বব্যাপীই রাশিয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে।

এরি মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে । নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনের প্রতি জোরাল সমর্থন সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার আক্রমণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য পশ্চিমাদের যেসব পথ রয়েছে, সেগুলোও সম্ভবত সীমিত হয়ে আসছে। জি-৭ দেশগুলো গত শুক্রবার রাশিয়ার ওপর ‘নতুন কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও জনগণ বীরত্বের সাথে মাতৃভূমি রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে চলেছেন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভ জানিয়োছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ৬৬ হাজার ২২৪ জন ইউক্রেনিয়ান বিভিন্ন দেশ থেকে ইউক্রেনে ফেরত এসেছেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক হামলা শুরু করার আগে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান প্রভৃতি দেশ চাপ সৃষ্টি করতে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় অর্থনৈতিক ক্ষতিতে পড়তে পারে দেশটি। তাতে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী ও চরম আগ্রাসীবাদী ডিকটেটর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে কোনও ভাবেই দমানো যায়নি।  পশ্চিমা দুনিয়ার প্রবল বিরোধিতার মধ্যেই রাশিয়া সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তে প্রথমে দুই লাখ সেনা মোতায়েন করেছিল। রুশ পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিদেশে সৈন্য ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এরই মধ্যে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের মহড়া শুরু করেছে।  এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ার ওপর কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইউক্রেনে নিজেদের প্রতি অনুগত একটি সরকারকে বসানোর লক্ষ্য পূরণেও ব্যর্থ অবশ্যই হবে মস্কো।

এমন ভয়ঙ্কর পরিস্হিতিতে পশ্চিমা বিশ্ব ও ন্যাটো সামরিক জোট ইউক্রেনকে যে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল- সে আশ্বাস ও সহযোগীতা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, নরওয়ে, বেলজিয়ামসহ ৩০ সদস্যভূক্ত  শক্তিশালী ন্যাটো সামরিক জোটকে এ মুহু্র্তে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার ভয়ানক ডিকটেটর ও স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসী আক্রমন থেকে ইউক্রেনকে রক্ষা করতেই  সর্বাত্থক প্রচেষ্ঠা চালাতেই হবে। গত ২২ বছর যাবত নিজ দেশের মানুষের উপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতাসীন রাশিয়ার ভয়ানক ডিকটেটর ও স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বে শান্তি, গনতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্হিতিশীলতার বিরুদ্ধে বিরাট হুমকীসরুপ।। গত ২২ বছর যাবত স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভবিষ্যতে নিজ দেশে তার বিরুদ্ধ গণঅসন্তোষের বড় ঢেউ চাপা দেওয়ার জন্য ও তার সাম্রাজ্যবাদী লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য  ইউক্রেনে এ আক্রমন চালিয়েছে ।  এ হামলা গনতন্ত্র, মানবাধিকার ও বিশ্বশান্তির উপর একটি অগনতন্ত্রিক ও স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নগ্ন আক্রমন ও হামমলা। গতকল্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি  মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথে ভিডিও কনফারেনসে তার দেশে আরও সহযোগিতা করতে আহ্বান জানান। বারংবার তিনি ইউক্রেনের উপর No Fly Zone ঘোষনার জন্য অনুরোধ জানান। রাশিয়ার তেল আমদানি কালোতালিকাভুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানান তিনি।

ন্যাটো সামরিক জোট ও গনতন্ত্রে বইশ্বাসী বিশ্বনেতাদের এ মুহুর্তে উচিত হবে ইউক্রেনের জন্য একটি ‘আন্তর্জাতিক মানবিক জোট’ সচল করা। ৩০ সদস্য বিশিষট ন্যাটো সামরিক জোট ও গনতন্ত্রে বইশ্বাসী বিশ্বনেতাদের আরও উচিত হবে ইউক্রেন আত্মরক্ষার জন্য যে লড়াই চালাচ্ছে, তাতে সর্বার্থক সামরিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন দেওয়া। ইউক্রেনের উপর অবশ্যই NATO র মত No Fly Zone ঘোষনা করা। রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ ও নিষেধাজ্ঞা আরও আরও বাড়াতে হবে। আরও উচিত হবে,  ন্যাটো সামরিক জোট রাশিয়াকে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেওয়া, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাশিয়া ষুদ্ধ বন্ধ না করলে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট  বিশ্বের শক্তিশালী ন্যাটো সামরিক জোট রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে বিতারিত করতে  সর্বার্থক সামরিক অভিযান চালাবে।

বিদ্যুৎ ভৌমিক, লেখক, কলামিষ্ট ও ‘সিবিএনএ’ এর  উপদেষ্টা

৬ মার্চ  ২০২২, মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

সংবাদটি শেয়ার করুন