ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

মধুবন চক্রবর্তী-এর কবিতাগুচ্ছ

মধুবন চক্রবর্তী-এর কবিতাগুচ্ছ


ভাল লাগে
কারও কাছে গেলে ভাল লাগে , সত্যিই খুব ভাল লাগে।
ফুল ফুটবে না জেনেও
রোজ বিকেলে কাছে এসে বসে টুকুদা পাথরের জমিতেই ফুল চাষ করে।
বিশ্বাস, একদিন প্রতিধ্বনি ফিরে পাবেই।
তিস্তার বিষন্নতা হাঙরের মতো গিলতে আসবে জেনেও
হরিয়াল পাখিগুলো পাহাড় ভেঙে ঝর্নাকে ফেলে রেখে নদীতে জল খেতে নামে।
বিষন্নতা সান্দ্র হলে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে।
কারও কাছে গেলে খুব ভাল লাগে, সত্যি ভাল লাগে।
অন্ধকার হবে জেনেও ঘুটঘুটে গুহাটার  নিজস্ব আলোয় উজ্জ্বল হতে ভাল লাগে।
ছোঁয়াটুকু পাবে না জেনেও কারও আকাশে পাখি হতে ভাল লাগে।
সত্যিই খুব ভাল লাগে।


আমি সে রকম না
আচ্ছা একটা কথা বলব?
ইয়ে মানে… আ…পনার হাতটা একটু ধরতে পারি?
একটু আঙুলটা…
রাগ করলেন?
না… মানে, আমি ঠিক সে রকম না।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং…
হ্যালো… কে বলছেন?
ও… আপনি!
— কেমন আছেন ?
সে দিন হাতটা ধরলেন না যে?     কী অদ্ভুত আপনি…
— আসলে আপনাকে দেখলে সব গুলিয়ে যায়…
— তাই নাকি? বমির ট্যাবলেট রাখেন তো?
— অনেকক্ষণ কথা না বললে কেমন যেন হাঁপিয়ে উঠি…
— আপনার কি হাঁপানি আছে? ইনহেলার রাখবেন।
আসলে আপনার কন্ঠ কোকিলের থেকেও বেশি…
— ওমা, সে তো বসন্তে ডাকে… এখন তো শীত।
— মানে, ইয়ে… আপনার কণ্ঠে জওয়ানি আছে…
না, আসলে আপনার কন্ঠ শুনলে বুকের মধ্যে ধড়ফড় ধড়ফড় করে
— সে কি? হার্টের অসুখ নয় তো?
— না না, সে রকম না।
প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
আমি সে রকম না…
ছেলেটি বলল
সে দিন স্যুপ খেতে খেতে আপনার বুকের মধ্যে কয়েক ফোঁটা স্যুপ পড়ে গিয়েছিল…    ফোসকা পড়লে বলবেন…
মলম লাগিয়ে দেব…
কী হল চুপ কেন? রাগ করলেন? সরি সরি, দেখুন আমি কিন্তু সে রকম না।                      মেয়েটি বলল
                 শুনুন…
                     এ বারে দেখা হলে আমি ধরব ই ধরব ।
                                                                  — কোনটা?
                                                                            — আরে, আপনার হাত…
                                              — আপনি যে রকম ভেবেছেন, আমি কিন্তু সে রকম না…


বিচ্ছেদ

নিছক রাগ করেই বলেছিলাম, থাকব না তোমার সঙ্গে। মজা করে বলেছিলাম, ইসসসস্, ভাগ্যিস আমার মতো কোনও সুন্দরী
জুটেছিল তোমার কপালে…
কিংবা পাগল হয়ে তোমার ঘামে ভেজা শরীরটা
জড়িয়ে ধরেছিলাম বলে রেগে বলেছিলে,
ধ্যাৎ… যত আদিখ্যেতা…
সে দিনও বিচ্ছেদ বিছানার চাদরে টমেটোর সস পড়ে যাওয়ার পর
লেগে থাকা দাগের মতো ছিল…
আজ তো টুপুদির বানানো এক কেজি টমেটোর চাটনি
প্রথম বিচ্ছেদের দাগকেও মুছে দিল!
——————
শুনছেন? মধুবন
আপনি ছাপোষা মানুষদের খুব বেশিদিন মনে স্থান দেন না। তাই না? রাগ করবেন না আমি সত্যি ছাপোষা, মূর্খ, ভবঘুরে মনের। আমি আসলে আমি/ আমাকে ভালোবাসলে আমি জল হয়ে যাই/ তৃষ্ণার পর আবার আসি পরের তৃষ্ণায/ জল বাড়তে বাড়তে এখন যমুনার তীরে/
জল আমার কাছে গোধূলি/ কারণে অকারণ আঁচল ভরে গোধূলি পান করি/ গোধূলির পর আর একটা অচেনা রং আছে, সূর্য নিভে যাওয়ার প্রাক মুহূর্তে পৃথিবীজুড়ে এক সোহাগী আলো/আমার সেটাই প্রয়োজন। ওই এক ফোঁটা আলো আমাকে জীবন দেয়/ আপনার সাদা ক্যানভাস, আমার বালির। চোখের বালি সহ্য হবে না
আপনার/ বালির ভেতরে সূর্যাস্ত এঁকেছি আমি/ গোধূলি আমাকে  পরিযায়ী করেছে? মানুষ তো আসলে পরিযায়ী হতে পারে না। আমি পরিযায়ী হয়ে নদী হয়েছি। ছাপোষা এক নদী/ছাপোষা জীবন আপনি ভালোবাসেন না/ আপোসের অ্যাপস ডাউনলোড হয় না আমার অ্যান্ড্রয়েড এ।
মধুবন চক্রবর্তী টেলিভিশন প্রেজেন্টার। লেখিকা। আবৃত্তিশিল্পী
সংবাদটি শেয়ার করুন