দেশের সংবাদ ফিচার্ড

করোনাকালের জীবন  । শিক্ষক দম্পতি চাকরি হারিয়ে দিশাহারা

করোনাকালের জীবন  । শিক্ষক দম্পতি চাকরি হারিয়ে দিশাহারা

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বসবাস শিক্ষক দম্পতির। প্রাণঘাতী করোনার আঘাতে চাকরি হারিয়েছেন দু’জনই। এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। মানিক রায় চাকরি করতেন দি টাইম  একাডেমিতে। আর তার স্ত্রী চাকরি করতেন ধোপাপাড়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রাজশাহীতে। হঠাৎ চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। তাদের আয়ে নির্ভর দুই মেয়ে, মা ও বিধবা বোন।

মানিক রায় বলেন, হঠাৎ একাডেমি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আয় শূন্য হয়ে যাই। এখন কোনো রকম গরু-ছাগল পালন করে চলছি।

এ ছাড়াও একাডেমিতে জামানত ভাঙিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
তার স্ত্রী নাগরী সরকার বলেন, আমার দুটো মেয়ে। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ও ক্লাসে প্রথম। কিন্তু এখন টিউশনি দিতে পারছি না। পিছিয়ে পড়ছে মেয়েটা। আর ছোট মেয়ে সবে ভর্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ দুজনই চাকরি হারিয়ে বিপদের মুখে পড়েছি। দিনকে দিন ঋণের বোঝা বাড়ছে। কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। এভাবে কতোদিন চলবে? খুবই হতাশার মধ্যে দিন কাটছে।
এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। সংসার কোনোভাবেই চলছে না। আমার স্বামী পরিবারের সব থেকে বড়। আমাদের দেখারও কেউ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে ওর (স্বামী) আয় শুরু হবে। তাও সংসারটা চালানো সম্ভব হবে। আর আমার চাকরি ফেরত পাবো কিনা জানি না। চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় আছি। আর সংসার নিয়ে খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে আমাদের।

শিক্ষক থেকে কাঠমিস্ত্রি
এই একবার হিসাবের কাজ করলে ২০০/২৫০ টাকা মেলে। এই দিয়ে কোনোরকম টেনেটুনে সংসার চালাই। এখন আর সে কাজও মেলে না। কয়েকদিন লিচু গণনার কাজ করলাম। এখন আর সে কাজও পাচ্ছি না। কাজতো করা লাগবে। এ ছাড়াও সব ধরনের কাজ করেছি আমি, দীর্ঘদিন কাঠমিস্ত্রির কাজও করেছি। কোনোরকম কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলাম- এখন সেটাও আর চলছে না।

ডালিম কুমার রায়। ২০১৩ সাল থেকে আদর্শলিপি রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, দিনাজপুরে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হঠাৎ করোনার আঘাতে থেমে যায় গতিপথ। ২০২০ সালের করোনা আঘাতের কয়েক মাস পরেই চাকরি হারিয়ে বিপাকে পড়ে যান তিনি।

ডালিম বলেন, বাবা-মা ও বোন নিয়ে আমাদের সংসার। বাবার বয়স হয়েছে। সেভাবে কাজ করতে পারেন না। আমার বাবা জ্বালানি খড়ির জন্য কাঠ কাটার কাজ করেন। আমাকেই সংসার চালাতে হয়। এমন এক অবস্থা, না পারছি সহ্য করতে না পারছি কিছু করতে। টমেটো বাজারে কাজ নিলাম। টমেটো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবার আগে হিসাব রাখতে হয়। এ থেকে ২০০/২৫০ টাকা দিতো। সে কাজটাও হারালাম। এরপর লিচুর মৌসুমে পাইকারদের সঙ্গে কাজ নিলাম। গণনা, মালিকের সঙ্গে দামাদামি ইত্যাদি কাজ। সেখানে দিনে ৩০০/৪০০ টাকা আসতো- সেটাও হারালাম। লজ্জা না করে কাঠমিস্ত্রির কাজও করেছি দীর্ঘদিন। এখন কীভাবে সংসার চলবে-এই চিন্তায় ঘুমহীন রাত কাটে।

ডালিম পূর্বের জীবন সম্পর্কে বলেন, আমি স্কুলের চাকরিতে একটা ভালো বেতন পেতাম। এ ছাড়াও টিউশনি, কোচিং করিয়ে ভালো আয় হতো। করোনা আসার পরেও বেশকিছু মাস চাকরিটা ছিল। এখন আমি দিশাহারা। দীর্ঘদিন কোনো টিউশনিও ছিল না। এখন একটা টিউশনি অবশ্য পেয়েছি কয়েকদিন যাবৎ।

শুধু ডালিম না, তার স্কুলের প্রায় শিক্ষকই চাকরি হারিয়েছেন। এখন আশায় বসে আছেন ফের মিলবে কিনা চাকরি। ডালিম দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বাবার বয়স হয়েছে। ডালিমের ঘাড়েই সংসার। তিনি বলেন, আমার তো আর লাখ লাখ টাকা নেই যে আয় ছাড়া কাটিয়ে দিতে পারবো। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলছে না। কী হবে এই নিয়ে ব্যাপক চিন্তার মুখে আছি। -মানবজমিন


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন