সোশ্যাল মিডিয়া

শিরোনামহীন | সুশীল কুমার পোদ্দার-এর ফেসবুক থেকে

শিরোনামহীন | সুশীল কুমার পোদ্দার-এর ফেসবুক থেকে

আমি অপার হয়ে বসে আছি এ তিমির আঁধার পারি দেব বলে। সামনে আমার অকুল সমুদ্র। ফেনায়িত, তরঙ্গায়িত উত্তুঙ্গু জলরাশি হিংস্র অবয়ব নিয়ে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে, ডুবে যাচ্ছে কত আশা, কতো ভরসা। আমি যে এই বৈরী প্রকৃতির উজান ঠেলে পৌঁছে যেতে চাই আমার সেই পুরানো চিরচেনা পৃথিবীতে – যেখানে আছে নিত্য সংঘর্ষ, নিত্য হানাহানি। থাক সেথায় ধনী গরীবের আকাশচুম্বী ভেদাভেদ, থাক সেথায় কায়ক্লেশে সংগ্রাম-রত অভাবী মানুষের নিত্য হাহাকার, তবু আমি যেতে চাই আমার আপন জনদের সাথে নিয়ে ঐ মহামারী মুক্ত, ঐ করোনা মুক্ত ভূমিতে – যেখানে নেই কোন অচ্ছুত, সবাই কথা বলে মন খুলে, আপদে বিপদে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে, শোকাহত হয়ে অনায়াসে মাথা রাখে অপরের ঘাড়ে।
কতদিন দেশে যাওয়া হয়নি, দেখা হয়নি আমার আত্মজের সাথে। শুনেছি দেশ অনেক বদলে গেছে। যমুনার তীরে গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য পার্ক, চায়না বাঁধের উপরে বিকেল হলে জমে উঠে সৌন্দর্য পিয়াসীদের ভীড়, ভূমি দস্যুদের হাতে ভরাট হয়ে যাওয়া কাটা খালিতে নাকি এখন জল গড়িয়ে যায়, আমাদের মাড়োয়ারি পট্টির বুক চিরে নাকি গড়ে উঠেছে নয়নাভীরাম সড়ক দ্বীপ ! আমার ইচ্ছে করে সড়ক দ্বীপের সেই মেহুগুনী গাছগুলকে দেখতে, ইচ্ছে করে যমুনার ধার ধরে হেটে হেটে শ্মশান ঘাট পার হয়ে চলে যাই দূরে, অনেক দূরে । কবে যাবো ? আর কবে দেখা হবে সবার সাথে ? সময় যে গড়িয়ে যায় ! সময় ক্ষমাহীন হাতে কেড়ে নিচ্ছে প্রাণরশ, শরীরে একে দিচ্ছে বার্ধক্যের রেখা। যখন সময় হবে তখন কি দেখা হবে সবার সাথে! আমি হয়তো না জেনে বন্ধুকে বলব – ও কেমন আছে রে! বন্ধুটি ক্ষণকাল নীরব থেকে বলে উঠবে – ও যে নেই ! পরিবারকে ভয়ংকর বিপদে রেখে ও চলে গেছে না ফেরার দেশে।
আজ পথে হেটে যেতে যেতে চোখে পড়ে আকাশের কোনে একগুচ্ছ আগুন ঝরা সিঁদুর মেঘ। সেই মেঘ কেন যেন হৃদয়ের মাঝে জাগিয়ে তোলে কেমন এক বুক শূন্য করা সর্বগ্রাসী হতাশা – কে যেন নেই ! আমি সেই সিঁদুরে মেঘের মাঝে দেখতে পাই হাজার হাজার চিতার প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা। কানে আসে স্বজনের আহাজারি, চোখে পড়ে নিথর হয়ে পড়ে থাকা লাশের সারী সমাধিস্থ হবার প্রতীক্ষায়। হায়রে জীবন ! কতো ভঙ্গুর এ জীবন ! চারিদিকে কতো বাতাস, কতো অক্সিজেন। ক্ষমতা নেই সেই অক্সিজেনকে বুক ভরে টেনে নেবার। ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো ছটফটিয়ে মানুষের এই অসহায় মৃত্যু দেখে জীবনটাকে ভীষণ ঠুনকো মনে হয়। ইচ্ছে করে বুকের শেষ স্পন্দন থেমে যাবার আগেই কিছু করি। আর কিছু না পারি – হতে পারি সমব্যথী, হতে পারি সহমর্মী ।
পৃথিবীর অন্য-প্রান্তে, অন্য কোন মহাদেশ, বা অন্য কোন দেশের চিতার আগুনের উত্তাপ, শোকাতুর মানুষের বিলাপ যখন সমব্যথী করে তোলে বিশ্ববাসীকে তখন মনে হয় পৃথিবীতে এখনও মানবতা বেঁচে আছে। কতিপয় অমানুষের নগ্ন উল্লাস ভুলে যেয়ে মনে হয় একদিন এই পৃথিবীতে আবারও ফিরে আসবে সুস্থ্য, সুন্দর জীবন – হয়তো সেদিন খুব বেশী দূরে নয় –
সংবাদটি শেয়ার করুন