ফিচার্ড বিশ্ব

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম ফৌজদারি মামলা শুরু

কী-করবেন-ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম ফৌজদারি মামলা শুরু

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। নিউইয়র্কে ট্রাম্পের ফৌজদারি বিচার শুরু হয়েছে সোমবার ১৫ই এপ্রিল ২০২৪। মার্কিন ইতিহাসে এই প্রথম একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অপরাধে বিচারের সম্মুখীন হলেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবসায় জালিয়াতি সংক্রান্ত ৩৪টি অভিযোগ, দোষী সাব্যস্ত হলে তার ৪বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এটিকে সংক্ষেপে ‘হাস মানি ট্রায়াল’ বলা হচ্ছে। ২০১৬-এ নির্বাচনের আগে মডেল স্ট্ররমি ড্যানিয়েলের মুখ বন্ধ রাখতে ট্রাম্প বিপুল পরিমান অর্থ দিয়েছেন। অর্থ দেয়াটা অপরাধ নয়, অভিযোগ, অর্থ দেয়ার প্রক্রিয়াটি অপরাধ।
সিএনএন ১২ই জানুয়ারি ২০১৮-তে জানিয়েছিল, ঐসময় ট্রাম্পের এটর্নি মাইকেল কোহেন পর্ণস্টার  স্ট্ররমি ড্যানিয়েলকে ১৩০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। এই মামলায় ট্রাম্প হেরে গেলে, তিনি ‘ক্রিমিনাল’ হিসাবে চিহ্নিত হবেন। ট্রাম্প যদি এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিতও হ’ন, তা হলেও তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না, কারণ মামলাটি ষ্টেটের, প্রেসিডেন্ট ফেডারেল সাজা  মাফ করতে পারেন, ষ্টেটের সাজা মাফ করার অধিকার তার নেই? যদিও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলাটি দুর্বল, এটি ট্রাম্পের প্রথম অপরাধ, দোষী সাব্যস্ত হলেও তার জেল হবার সম্ভবনা কম।

ঐতিহাসিক এ মামলার প্রথম দিনে জুরী নির্বাচন শুরু হয়। ৯৬জনকে ডাকা হলেও কেউ মনোনীত হ’ননি। বাদী-বিবাদী পক্ষ একমত হয়ে বিচারকের সম্মতিক্রমে মোট ১২জনের জুরী প্যানেল মনোনীত করবেন। অতিরিক্ত আরো ৬জন জুরীও মনোনীত করা হবে। ট্রাম্প সকালেই ডাউনটাউন ম্যানহাটান আদালতে উপস্থিত হ’ন, তখনো আদালত-কক্ষ অর্ধেক খালি ছিলো, ট্রাম্প ‘ডিফেন্স টেবিলে’ গিয়ে বসেন। দুপুরে আদালত কক্ষ পরিপূর্ন হয়ে যায়। বিচারক সম্ভাব্য প্রত্যেক জুরীকে উত্তর দেয়ার জন্যে ৪২-টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি কাগজ দেন্, অর্ধেকের বেশি জুরী এতেই বাদ পড়েন।

ট্রাম্প মাত্র তিনবার কথা বলেছেন। অধিকাংশ সময় তিনি তার এটর্নিদের সাথে মত বিনিময় করেন। বিচারক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, আপনি কি বুঝতে পারছেন যে, আপনি ফৌজদারি মামলার আসামী? ট্রাম্প হ্যাঁ সূচক জবাব দেন্। কোর্ট রুম থেকে বাইরে এসে ট্রাম্প অবশ্য মুখ খুলেন, বলেন, এটি স্ক্যাম, দেখা যাচ্ছে, বিচারক আমাকে এ থেকে মুক্তি দিচ্ছেন না? এ মামলাটি হচ্ছে, “দি পিপুল অফ দি ষ্টেট অফ নিউইয়র্ক ভার্সেস ডোনাল্ড ট্রাম্প”। বিচারকের নাম জুয়ান মার্চেন। ট্রাম্পের প্রধান দু’জন এটর্নি হচ্ছেন, টড ব্লাঞ্চ ও এমিল বোভে। বলা বাহুল্য, ট্রাম্পের এটর্নিগন মামলার গতি শ্লথ বা থামিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, মামলাটি ৬থেকে ৮সপ্তাহ চলতে পারে।

পূর্ববর্তী খবরে বলা হয়: ট্রাম্প শিবির বেশ ক’বার বিচারককে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার চেষ্টা করেছেন। বারবার তারা ব্যর্থ হয়েছেন। ট্রাম্প পক্ষ বলছেন, বিচারকের কন্যা লরেন মার্চেন ডেমক্রেট ফান্ড রেইজিং-র সাথে যুক্ত এবং এ মামলা থেকে ফায়দা নেবেন। ৮ই এপ্রিল ট্রাম্প আপিল বিভাগে একই আবেদন জানালে সেটিও বাতিল হয়ে যায়। ট্রাম্পের জন্যে আরো দু:সংবাদ হচ্ছে, জর্জিয়া নির্বাচনী হস্তক্ষেপ, ফেডারেল ক্লাসিফাইড ডক্যুমেন্ট মামলা বাতিলের আবেদনও বিচারক আইলিন এম ক্যানন বাতিল করে দিয়েছেন। 

   ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোট ৪টি ফৌজদারি মামলা আছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিউইয়র্কে ‘হাস মানি’ মামলা ব্যাতিত আর কোন মামলা নির্বাচনের আগে শুরু হবেনা। এই মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘গ্যাগ’ অর্ডার আছে, ট্রাম্প এই মামলায় সম্পৃক্তদের নিয়ে কথা বলতে পারবেন না? এ গ্যাগ অর্ডারের বিরুদ্ধে ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ বিচারক জোয়ান মার্চেন-এর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তারা আমার সম্পর্কে কথা বলবেন, অথচ আমি কথা বলতে পারবো না, এটি কেমন কথা? এ মামলায় স্ট্ররমি ড্যানিয়েল ও ট্রাম্প মুখোমুখি হবেন। এদিকে টেক্সাসে স্ট্ররমি ড্যানিয়েল অপর একটি মামলায় জড়িয়ে গেছেন। তার বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৪টি ফৌজদারি মামলার সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে: ওয়াশিংটন ডিসি-তে ২০২০ নির্বাচনের ফলাফল বানচালের ষড়যন্ত্র দায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা পিছিয়ে গেছে। এটি শুরুর কথা ছিলো ৪ঠা মার্চ। ট্রাম্প আপিল করেছেন, তিনি দাবি করেন যে, ৬ই জানুয়ারি তিনি যা করেছেন, তা প্রেসিডেন্ট হিসাবে করেছেন, সুতরাং এটি বিচারের আওতায় পড়েনা। ট্রাম্পের অপর মামলা নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সুপ্রিমকোর্টে ব্যবসায় জালিয়াতি শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের অন্য দু’টি ফৌজদারি মামলার একটি হচ্ছে ফ্লোরিডায়, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ক্লাসিফাইড ডক্যুমেন্ট অযত্নে নিজের কাছে রাখা এবং তাঁর মার্-এ-লগো বাসস্থান থেকে সেগুলো উদ্ধারে বাধা দেয়া। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্য মামলাটি হচ্ছে, জর্জিয়া ষ্টেট নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি।

বাইডেন শিবির বলেছে, মিশিগানে যারা ‘ডেথ টু আমেরিকা’ শ্লোগান দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাদের ভোট চাননা। মনে হচ্ছে, এবারকার নির্বাচনে ‘গর্ভপাতের অধিকার’ নিয়ে প্রচারণা তুঙ্গে উঠবে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে তার অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, এটি ষ্টেটের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। বাইডেন ফেডারেল আইনের পক্ষে। এদিকে ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল আক্রমনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত অনেকে ছাড়া পেতে শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সুপ্রিমকোর্ট এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন এবং এরফলে প্রায় সকল দন্ডপ্রাপ্ত ও অভিযুক্তের মুক্তি পাবার সম্ভবনা রয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৬ই জানুয়ারির মামলাটি এতে দুর্বল হবে। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের একটি আদালত ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা এলেন উইসেলবার্গ-কে ‘শপথ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য’ দেয়ার অপরাধে ৫মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন।

এরআগে ট্রাম্প ১৭৫ মিলিয়ন ডলার বন্ড জমা দিয়েছেন। এরফলে ৪৬৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করতে পারবেন। সর্বশেষ এনপিআর\পিবিএস নিউজ আওয়ার\ম্যারিস্ট জরিপ বলেছে, ইয়ং ল্যাটিন\নির্দলীয় ভোটাররা ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছে; পক্ষান্তরে শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ ও বয়স্করা বাইডেনের দিকে। টেক্সাসের এটর্নি জেনারেল পেন প্যাক্সটন নিউজম্যাক্সকে বলেছেন যে, নির্বাচন সামনে তাই বাইডেন প্রশাসন অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের আমেরিকায় প্রবেশের ঢল কমাতে সচেষ্ট হয়েছেন। একই সংস্থাকে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্লেন হল্ট বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রকে ৩য় বিশ্বযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নাল ৩রা এপ্রিল জানায়: ৭টি’র মধ্যে ৬টি ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটে ট্রাম্প জরিপে এগিয়ে আছেন ২-৮% ভোটে, সেটি সরাসরি প্রতিদ্ধন্ধিতা বা নিরপেক্ষ প্রার্থীদের নিয়েই। এ রাজ্যগুলো হচ্ছে: নর্থ ক্যারোলিনা, পেসিলভানিয়া, নেভাদা, মিশিগান, জর্জিয়া,ও আরিজোনা। উইসকনসিনে বাইডেন ৩% ভোট এগিয়ে। এ ষ্টেটে মঙ্গলবার এক সভায় ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন আফ্রিকান আমেরিকান, হিস্পানিক এবং ইউনিয়ন শ্রমিকদের সাথে বেইমানি করেছেন। উইসকনসিনে ট্রাম্প বলেছেন, ৫ই নভেম্বর নির্বাচনের দিনটি হবে, ‘খৃষ্টান ভিজিবিলিটি ডে’। তিনি বলেন, ঐদিন আমরা জিতবো, হোয়াইট হাউস দখল করবো, এবং আমেরিকাকে বাঁচাবো।

বাইডেন ও ট্রাম্প ইতিমধ্যে বেসরকারিভাবে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করলেও প্রাইমারি চলছে, এবং দু’জনই জিতে চলেছেন। নিউইয়র্কে তারা জিতেছেন। কিন্তু দু’জনের ক্ষেত্রেই ‘আনকমিটেট’ ভোট বাড়ছে। মঙ্গলবার ২রা এপ্রিল নিউইয়র্কে বাইডেনের বিরুদ্ধে প্রায় ৪০হাজার ‘আনকমিটেট’ ভোট পড়েছে, নিকি হ্যালি সরে দাঁড়ানোর পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও এমত ভোট বাড়ছে। সেন্ট্রিস্ট গ্রূপ কোন প্রার্থী দেবেনা বলে জানিয়েছে। তারা বলছেন, ভাল কোন প্রার্থী নেই। তদুপরি প্রার্থী দিলে ট্রাম্প লাভবান হবেন।  এদিকে সোমবার লস এঞ্জেলসে এক বিচারক বাইডেন পুত্র হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে আনীত ট্যাক্স-ফাঁকি দেয়ার মামলাটি খারিজ করে দিতে অস্বীকার করেছেন। হান্টার বাইডেন ১.৪ মিলিয়ন ডলার কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।

আরএফকে জুনিয়র টিম প্রথমে বলেছিলো যে, ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল আক্রমণকারীরা ‘এক্টিভিস্ট’। পরে তারা সেটি প্রত্যাহার করে বলেন, ওটি আরএফকে জুনিয়র-এর বক্তব্য নয়। রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সিএনএন‘র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্যে ট্রাম্পের চেয়েও বাইডেন বেশি বিপদজ্জনক। দৃষ্টান্ত হিসাবে তিনি বলেন, বাইডেন তার রাজনৈতিক প্রতিদ্ধন্ধীদের বিরুদ্ধে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করছেন। কেনেডির ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট ২০২১ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়, ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলে তা পুনরায় খুলে দেয়া হয়। কেনেডি মনে করেন বাইডেনের চাপে তা করা হয়েছিলো। [email protected];

 

এসএস/সিএ

সংবাদটি শেয়ার করুন