“বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিহত বাংলাদেশি ‘রা সবাই অপরাধী” এমনটাই বলেছেন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং।
তারা প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের মাদক ও চোরাকারবারের সঙে জড়িত। তিনি বলেন, আমাদের উভয় দেশের সীমান্তবর্তী দুই এলাকাতেই ভালো-মন্দ, খারাপ-ভালো মানুষ আছে। তাদের কারণে সীমান্তে অপরাধ সংঘটিত হয়। চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটছে। গরু পাচার, শিশু ও নারী পাচারের ক্ষেত্রে অপরাধীরা সীমান্তে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। এ কারণে তারা গুলিতে নিহত হয়।
গতকাল দুপুরে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
সীমান্তে নিহত বাংলাদেশি ‘দের কিসের ভিত্তিতে অপরাধী বলছেন। তাদের শরীরের উপরের অংশে গুলি লাগার পরও কেন এটা টার্গেটেড কিলিং নয় এমন প্রশ্নের জবাবে পঙ্কজ কুমার সিং বলেন, জুডিশিয়াল সিস্টেমে বা কোনো অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাউকে অপরাধী বলতে পারি না।
আমরা বর্ডার বাহিনীর সঙ্গে কথা বলি। কলকাতা পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করি। কারণ সীমান্তে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙে জড়িতরা হলো দুই দেশের মাফিয়া। বিএসএফ প্রধান বলেন, শিশু ও নারী পাচারের সঙ্গে জড়িতরাই সীমান্ত অতিক্রম করেন। এখন পর্যন্ত সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও চোরাকারবারি ঠেকাতে ৮৯ জন বিএসএফ সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আমরা মারণাস্ত্র নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছি। বিজিবির সঙ্গে আমাদের আগের চেয়ে সম্পর্ক ভালো। সীমান্ত সুরক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ করবো।
প্রতিবার সীমান্ত সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা বন্ধে আলোচনা হয়, কিন্তু হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। চলতি বছরের জুনে সীমান্তে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্তে হত্যা কেন শূন্যের কোটায় নামছে না?- এমন প্রশ্নে বিএসএফ প্রধান বলেন, আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ভিন্ন। পশ্চিমা দেশগুলোর চাইতে আলাদা। আমাদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা পর্যায়ে সীমান্তের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশেই ভালো-মন্দ মানুষ আছে। সীমান্তে মন্দ লোকেরাই নিহত হয়েছেন। যারা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ ও বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং ৫২তম সীমান্ত সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। সীমান্তে হত্যা বন্ধ, মাদক চোরাচালান রোধ ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করবে বলে একমত হয়েছে দুই বাহিনী।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে নিহত বাংলাদেশি ‘দের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এটি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সীমান্ত হত্যার পাশাপাশি মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এবং সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং এসব অপরাধ দমনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিজিবি মহাপরিচালকের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি সীমান্তে বিভিন্ন অপরাধ, মাদক চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ ভারতীয় পার্শ্বে অনিষ্পন্ন বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়াও উভয় পক্ষই সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ’র যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা-আহত-মারধরের ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক সতর্কতামূলক ও কার্যকরী উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তে যৌথ টহল জোরদারকরণ, বিশেষ করে রাত্রিকালীন টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। সীমান্তে আক্রমণ-হামলার ঘটনা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে সমন্বিত যৌথ টহল পরিচালনাসহ অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদারকরণ, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের ব্যাপারে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন-অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানব পাচার, সীমান্ত পিলার উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য সীমান্ত অপরাধ থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হন। উভয় পক্ষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত অতিক্রম করে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের ব্যাপারে একমত হন। উভয় পক্ষ ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজ করার বিষয়ে নিজ নিজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে বিষয়টি ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেন। পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যৌথ নদী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত সীমান্তের অভিন্ন নদী সমূহের বন্ধ থাকা তীর সংরক্ষণ কাজ পুনরায় শুরু করার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এছাড়াও সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে একসারি বিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ অনুমোদিত স্থান ও অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তিকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজসমূহ নিজ নিজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে দুই বাহিনীর নোডাল অফিসার পর্যায়ে যোগাযোগের একটি ক্ষেত্র তৈরি ও একটি নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সূত্রঃ মানব জমিন
এফএইচ/বিডি
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান