খেলা ফিচার্ড

অবিশ্বাস্য, ঐতিহাসিক ইবাদতে কামিয়াবি

অবিশ্বাস্য, ঐতিহাসিক ইবাদতে কামিয়াবি

নির্বাচক হাবিবুল বাশার জানালেন তার মনের কোণে ছোট্ট একটি স্বপ্ন দানা বেঁধেছে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। বলবেন কীভাবে! সে যে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের স্বপ্ন। যেখানে গেল ১১ বছরে যা করে দেখাতে পারেনি টাইগারদের কোনো অধিনায়কই। কিন্তু মুমিনুল হক সৌরভের দল সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাই গতকালের ভোরের বাতাসে ছিল ইতিহাস বদলের স্বস্তির নিঃশ্বাস। হাজার কিলোমিটার দূরে টাইগারদের সেই জয়ে গর্বের আবেগে জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। এ যেন আঁধার কাটিয়ে এদেশের ক্রিকেটে এক নতুন ভোর।

আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ। প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাকক্যাপরা দেশের মাঠে অজেয় এক দল। যাদেরকে তাদের মাঠে কখনোই কোনো সংস্করণে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। তাদের বিপক্ষেই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ৮ উইকেটের জয়! ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করা কিউইদের ইনিংস শেষ করতে এক ঘণ্টাও লাগেনি বাংলাদেশের। এরপর ৪০ রানের ছোট্ট লক্ষ্য তাড়ায় ২ উইকেট হারালেও ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। প্রশ্ন উঠতেই পারে এই জয় কি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সামর্থ্যের প্রমাণ! অধিনায়ক মুমিনুলও তাই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা সবসময়ই ছিল। গুরুত্বপূর্ণ ছিল বিদেশে গিয়ে একটা ম্যাচ জেতা। অন্তত আমরা ম্যাচ জিততে পারি, ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি- ওই জিনিসটা দেখানোর ছিল। আল্লাহর রহমতে ওই জিনিসটা দেখাতে সক্ষম হয়েছি।’
বলার অপেক্ষা রাখে না এ জয় টিম বাংলাদেশের একই সুতায় গাঁথা সুর। যে সুতায় বল হাতে মুক্তা গেঁথেছেন ইবাদত হোসেন চৌধুরী, তাসকিন আহমেদরা। গেল বছরের শেষ ভাগটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাছে ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা হার, দেশের মাটিতে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণ। মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিল। শুধু কী তাই? আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ চক্রে ৭ ম্যাচের ৬টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। শুধুমাত্র একটি ম্যাচ হয়েছিল ড্র। সবকিছু মিলিয়ে  দেশের ক্রিকেটে নেমে আসে অন্ধকার। তাই নতুন বছর প্রথম দিন অসম্ভব রকম চাপ নিয়েই সিরিজের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে মুমিনুলের দল। এখানেই শেষ নয়, নিউজিল্যান্ডে প্রথম জয়ের অপেক্ষাটা ছিল আরও দীর্ঘদিনের। কিউইদের বিপক্ষে তাদের মাঠে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৩ ম্যাচ কোনো জয় ছিল না বাংলাদেশের। এ ছাড়াও  দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডের টানা ১৭ টেস্টের অপরাজেয় যাত্রা থামলো এই হারে। সবশেষ তিন সিরিজে তারা হোয়াইটওয়াশ করেছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতকে। উপমহাদেশের কোনো দলের সবশেষ জয় ছিল ১১ বছর আগে, পাকিস্তানের।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে শুরু থেকেই দাপুটে ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৩২৮ রানে আটকে দেয় মুমিনুলের দল। ভয় ছিল গেল কয়েক মাস ধরেই ব্যাটিং নিয়ে। কিন্তু সেই ব্যাটিং  ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখিয়েছে জয়ের পথ। তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় সুযোগ পেয়ে খেলেন ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। ৬৪ রান করেন ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। পরে ব্যাটিংশৈলী দেখান মুমিনুল হক (৮৮), লিটন দাসরা (৮৬)। দু’জন সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে আউট হলেও তাদের ‘বড় অর্ধশতকে’ ভর করে শেষ লড়াই করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সবার অবদানে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে পায় ৪৫৮ রানের বড় সংগ্রহ। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন টাইগার পেসার ইবাদত হোসেন। ক্রিকেজে বল হাতে ঝড় তোলেন অপর পেসার তাসকিন আহমেদও। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে নিউজিল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ১৬৯ রানে। চতুর্থ দিনে অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ইবাদত হোসেন চৌধুরী শেষ দিনেরও নায়ক। আগের দিনের চারটির সঙ্গে যোগ করেন তিনি আরও দুই উইকেট। সবমিলিয়ে ৪৬ রানে তার শিকার ৬ উইকেট। দেশের বাইরে টেস্টে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। তার হাত ধরে প্রায় ৯ বছর ও ৪৭ ম্যাচ পর টেস্টে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের কোনো পেসার।
এরপর দুই উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, শেষটি মেহেদী হাসান মিরাজ। ফিল্ডিং শেষ দিনও ছিল দুর্দান্ত। দারুণ দুটি ক্যাচ নেন শরিফুল ইসলাম ও বদলি ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম। আগের দিনের রানের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড যোগ করতে পারে কেবল আর ২২ রান। শেষদিনে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারতেন রস টেইলর। ১১১ টেস্টের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে দিনের দ্বিতীয় ওভার আর নিজের দ্বিতীয় বলেই বিদায় করে দেন ইবাদত। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান রাচিন রবীন্দ্রকে বিদায় করেন তাসকিন দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে। শেষ ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্ট দুটি চার মারার পর মিরাজকে চেষ্টা করেন ছক্কায় ওড়াতে। সীমানায় দুর্দান্ত ক্যাচ নেন তাইজুল ইসলাম। মূল কাজ শেষ করে উল্লাস আর উদ্‌যাপনে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
৪০ রানের লক্ষ্যে ওপেন করতে নামা সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন দলকে জয়ের পথে রেখে। আর মুশফিকুর রহীমের বাউন্ডারিতে ধরা দেয় জয়। উইকেটে তখন তার সঙ্গী অধিনায়ক মুমিনুল। অধিনায়ক হিসেবে নিজের ওপর বিশ্বাসের ভিত্তি এখন আরও মজবুত তার। মুমিনুল হক বলেন, ‘জিততে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ, এটা খুবই ভালো। বিশ্বাস আমার ওপর ছিল, আপনারা হয়তো আস্তে আস্তে আমার ওপর বিশ্বাস করবেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জিনিসটা আস্তে আস্তে শুরু হবে, তার মানে হঠাৎ করে হলো এরপরের ম্যাচেই আবার হলো না- এরকম না। কোনো সময় হবে আবার হবে না। বিশ্বাস ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা সবার ভিতরে ঢুকবে। কেউ চোখে দেখে বিশ্বাস করে, কেউ ইমাজিনেশনে বিশ্বাস করে। এখন সবাই চোখে দেখছে যে, আসলে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব।’

-ইশতিয়াক পারভেজ, মানবজমিন

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন