লেখালেখি

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ।।।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

২৯ জুলাই বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, সমাজ সংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি   জ্ঞাপন করছি । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হলেন উনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, লেখক, দার্শনিক, পণ্ডিত, সমাজ সংস্কারক , অনুবাদক, প্রকাশক,  মানবহিতৈষী ও গদ্যকার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (বাংলা ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন) বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত ও বলিষ্ঠ দৃঢ়চেতা পুরুষ। ইনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তার সাধ্যের অতীত ছিল। সেই কারণে বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুমার সঙ্গে বাস করতেন। তার আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তার। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও অপরবোধ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য তার বিখ্যাত চারিত্রপূজা গ্রন্থে বিদ্যাসাগর চরিত্রে মহত্ব বাঙালি সমাজের সামনে তুলে ধরেন । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেের  সাথে সাক্ষাৎ করে তার গুণ ও পান্ডিত্যের প্রশংসা করেছেন । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের গুণ ও মাহাত্বের  প্রশংসা করেছেন । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা করেছেন জনপ্রিয় শিশুপাঠ্য বর্ণপপরিচয়সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক ও সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। তিনি লেখেছেন সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা । তাঁর লেখা রচনা ও গ্রন্থগুলির মধ্যে কয়েকটার নাম কথামালা, বোধোদয়, আখ্যানমঞ্জরী ব্যাকরণ কৌমুদী, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (২ খণ্ডে), বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (২ খণ্ডে) , অতি অল্প হইল(১৮৭৩),   ব্রজবিলাশ(১৮৮৪) ইত্যাদি ।

অন্যদিকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  ছিলেন একজন বড় মাপের সমাজ সংস্কারকও । বিধবা বিবাহ ও নারী শিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তার ত্যাগ ও অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরিত হয় বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে । বাংলায় নারীশিক্ষার প্রসারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষার বিস্তারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথিকৃৎ। তিনি উপলব্ধি করেন যে, নারিজাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ড্রিংকওয়াটার বিটন উদ্যোগী হয়ে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ভারতের প্রথম ভারতীয় বালিকা বিদ্যালয় । বাংলার নবজাগরণে এই মহান ব্যক্তি দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ বা ’করুণাসগর নামে । দরিদ্র, আর্ত মানবতার সেবায়  বিদ্যাসাগর মহাশয়  যেন ছিলেন সর্বদাই  প্রস্তুত । দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িতরা কখনই তার দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেত না । এমনকি নিজের চরম অর্থসংকটের সময়ও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার করেছেন । পিতামাতার প্রতি তার ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় প্রবাদপ্রতিম । মাতৃআজ্ঞা পালণের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর  একবার  সাঁতার দিয়ে দামোদর নদী পার হয়ে কথামত মায়ের কাছে হাজির হয়েছিলেন । মহাকবি মাইকেল  মধুসুধন দও তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।

বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও শ্রদ্ধার আসনে একজন অতি স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব । পশ্চিমবঙ্গের  মেেদনীপুরে ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণে তার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় । রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তারই নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিরক্ষার্থে বিদ্যাসাগর মেলাও অনুষ্ঠিত হয় । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ২৯ জুলাই ১৮৯১ সালে ৭১ বছর বয়সে  কোলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ।

সূত্র : উইকিপিডিয়া

লেখকঃ  কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা

মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ২৯ জুলাই ২০২০

 

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন