বিশ্ব

করোনায় ফের স্থবির যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন

করোনায় ফের স্থবির

করোনায় ফের স্থবির যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন

শামীম আল আমিন, নিউ ইয়র্ক || করোনার সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকায় নিউ ইয়র্কজুড়ে মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। গত ৯ নভেম্বর নিউ ইয়র্কে মারা গেছেন বাংলাদেশ সোসাইটির সহসভাপতি আব্দুল খালেক খায়ের। এ নিয়ে শোকের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বেগ ও ভীতি দেখা যাচ্ছে প্রবাসীদের মধ্যে।

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চের পর থেকে কয়েক মাস নিউ ইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল দেখেছে, তা যেন আবারও ফিরে আসতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কভিড-১৯-এর আরেকটি ঢেউ আছড়ে পড়েছে এরই মধ্যে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এরই মধ্যে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক কোটি ১৬ লাখ। মৃত্যু পেরিয়েছে আড়াই লাখ। ফলে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই করোনা পরিস্থিতির কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি শেষ হওয়া নির্বাচন, দেশজুড়ে প্রতিবাদ-সমাবেশ, আবহাওয়া পরিবর্তন, মানুষের অসচেতনতাসহ নানা কারণে করোনার সংক্রমণ নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। নিউ ইয়র্কপ্রবাসী চিকিৎসক ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘দেখুন দেশ একটি গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এখন। করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় বর্তমান প্রশাসনের কোনো সদিচ্ছাও চোখে পড়ছে না। যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।’ এর ফলে অনেক বেশিসংখ্যক মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের গতকাল সন্ধ্যার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৫৮ হাজার ৩৬৩।  শনাক্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ৭৫ হাজার ২৪৩। সর্বশেষ হিসাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে ভর্তি ছিল প্রায় ৮০ হাজার মানুষ।

নিউ ইয়র্কপ্রবাসী ডা. মারুফ রেজা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, ‘ভয় আবারও ফিরে এসেছে। মাঝে পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো ছিল। যেহেতু এখনো ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি। কার্যকর ওষুধের কথাও আমরা জানি না। ফলে প্রতিরোধ ও সাবধানতাই এখন বেশি জরুরি।’

আশার কথা হচ্ছে, আমেরিকান ওষুধ কম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কম্পানি বায়োএনটেকের পর এবার আমেরিকান আরেকটি জৈবপ্রযুক্তি কম্পানি মডার্না কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে আনার খবর দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী চিকিৎসক ডা. আসিফ মাহমুদ মনে করেন, ‘খুব দ্রুতই ভ্যাকসিনের দেখা পাওয়া যাবে। এপ্রিল নাগাদ যদি সত্যিই সবার কাছে এই টিকা পৌঁছানো যায়, তাহলে হয়তো আগামী শীতে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’ তবে বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে নতুন প্রেসিডেন্টের টিমের সমন্বয় এ ক্ষেত্রে জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া এই ভয়াবহ ভাইরাস থেকে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে তাঁর মত।

আমেরিকার জনবহুল দুই রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসেই সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে নর্থ ডেকোটা, সাউথ ডেকোটা, উইসকনসিন, আইওয়া ও নেব্রাস্কায়। এই পাঁচটি স্টেটে মহামারি পরিস্থিতিই সবচেয়ে নাজুক হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিপজ্জনক হয়ে ওঠার কারণে নিউ ইয়র্ক নগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৯ নভেম্বর থেকে আবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মেয়র ডি ব্লাজিও জানিয়েছেন, নগরীতে করোনা সংক্রমণের হার ৩ শতাংশ অতিক্রম করার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভার্চুয়ালি এখন ক্লাস নেওয়া হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’র  পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নিউ ইয়র্কেই করোনায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা আড়াই শতাধিক। তাদেরই একজন বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা তাহেরা আক্তার জাহান। স্বামী রানা আহমেদ এবং তিনি প্রায় একসঙ্গে হাসপাতালে গেলেও ফেরা হয়নি তাঁর। শোকাতুর রানা আহমেদ বলেন, ‘এপ্রিল থেকে নভেম্বর। কয়েক মাসের ব্যবধান। আমার জীবন কোনো দিন স্বাভাবিক হবে না। ভেবেছিলাম, হয়তো মানুষের স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে আবারও ভীত হয়ে উঠছি আমি।’

-সূত্রঃ কালের কন্ঠ

এসএস/সিএ



সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন