দেশের সংবাদ

পর্যটক শূণ্য লাউয়াছড়ায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্যপ্রাণীরা

পর্যটক শূণ্য লাউয়াছড়ায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্যপ্রাণীরা

 

পর্যটক শূণ্য লাউয়াছড়ায় মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্যপ্রাণীরা

অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পর্যটন ক্ষেত্রে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এই বনের পরিচিতি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়ার অবস্থান। এটি কেবল পর্যটন কেন্দ্রই নয়, এ উদ্যান এক জীবন্ত প্রাকৃতিক গবেষণাগার।
গেল কয়েকদিন আগেও হাজারো পর্যটকের আগমণে, তাদের ব্যবহৃত যানবাহন ও কম বয়সী পর্যটকদলের হৈ হুল্লোড়ে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হারিয়ে ফেলেছিলো তার শান্ত নিবিড় পরিবেশ। পর্যটক দের অবাদ বিচরণে এ বনের বন্যপ্রাণীরা অনেকটাই গা ঢাকা দিয়েছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় সারাদেশের মত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পর্যটক শূণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন তার আগের শান্ত নিবিড় পরিবেশে ফিরে পেয়েছে। ফলে মনের আনন্দে বন্যপ্রাণীরা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্যানের ভিতরের সমতলে ও গাছ থেকে গাছের ডালে।

বাংলাদেশের সাতটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও দশটি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। চিরহরিৎ এ বনাঞ্চল বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের নিরাপদ আবাসস্থল। এছাড়াও নানা ধরণের দুর্লভ প্রাণী, কীটপতঙ্গ আর গাছপালার জন্য এ অরণ্য বিখ্যাত। লাউয়াছড়া উদ্যানের পুরনো নাম ছিলো পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। মৌলভীবাজার রেঞ্জের আওতাধীন কমলগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২,৭৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত এই বনের প্রায় ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ, সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই বনে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ বন্যপ্রাণী ও গাছপালা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরিসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি।

এ উদ্যানকে দেখাশুনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। আর জাতীয় উদ্যান ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে প্রথমে ছিল নিসর্গ, দ্বিতীয় পর্যায়ে আইপ্যাক এখন রয়েছে ইউএসএআইডি। মূলত এসব সংস্থা লাউয়াছড়ায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে চাওয়ায় পরবর্তীতে এ উদ্যান থেকে বাণিজ্যিক আয়ের চিন্তায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারপরও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আগমণ বেড়ে যায়। পর্যটকদের সাথে এ উদ্যান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরের ও বনভোজনকারীদের পছন্দের একটি স্থান। স্বাভাবিকভাবে এ উদ্যানে মানুষজনের উপস্থিতিতে তাদের সাথে নিয়ে আসা সাউন্ড সিস্টেম-এর কারণে বনের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। কোন ভাবেই তা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল না। দূর দূরান্ত থেকে আসা প্রকৃতি প্রেমীরা একটু শান্ত নিবিড় বনের মাঝে বন্যপ্রাণী দেখার জন্য লাউয়াছড়া উদ্যানে আসতেন। তবে অস্বাভাবিকভাবে পর্যটকদের আগমণে ও হাল্লা চিৎকারে বন্যপ্রাণী পর্যটকদের নাগালের বাইরে অবস্থান করত।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন পর্যটকশূণ্য। বুধবার সকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গেলে এ বনের বন্যপ্রাণীদের দেখা যায় মনের আনন্দে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। বানরগুলো এক গাছ থেকে আর এক গাছে লাফিয়ে বেড়ায়। চশমা পরা বানর বসে আছে একটি বাঁশ গাছে। আগে যেখানে মানুষজনের উপস্থিতিতে বন মোরগ দেখাই মিলত না। এখন সারাদিন বনের ভিতরে ঘুরে বেড়ায় বন মোরগ। বনের মধ্যে থাকা মায়া হরিণের দর্শন পাওয়া যেখানে বিষণ দায় ছিলো, সেখানে স্থানীয়রা এখন প্রায়ই মায়া হরিণের দেখা পান। সকাল থেকে দুপুর অব্দি শুনা যাচ্ছে মহাবিপন্ন উল্লুকের আওয়াজ। তার সাথে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচির মিচির শব্দ।

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মনজুর আহমদ আজাদ মান্না বলেন, ” পর্যটকের হৈ-হুল্লোড়, গাড়ির হর্ণ ইত্যাদির কারণে লাউয়াছড়ার বণ্যপ্রাণীগুলো হাঁপিয়ে উঠেছিল। মানুষের উপস্থিতি, তাদের সাথে নিয়ে আসা সাউন্ড সিস্টেম, গাড়ির হর্ণ এর কারণে বনের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল, যার ফলে বন্যপ্রাণী পর্যটকদের নাগালের বাইরে অবস্থান করত। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটকশূণ্য হয়ে পড়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। পর্যটকশূন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এখন তার হারানো পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। মনের আনন্দে উদ্যানের ভিতরে বন্যপ্রাণীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি শেষ হবার পর প্রতিবছর নির্দিষ্ট কোনো মাসে এই উদ্যান বন্ধ রাখলে বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে বলে মনে করেন তিনি।’

লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারছিয়াং বলেন, ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম এ উদ্যানে বনের পরিবেশ ফিরে পাওয়া গেছে। নেই মানুষজনের হাল্লা চিৎকার। বন যেন তার হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ ফিরে পেয়েছে। আগের পরিবেশ পেয়ে এ বনের বন্যপ্রাণীরাও মহাখুশি। আনন্দে দিগবিদিক ছুটাছুটি করছে বনের বন্যপ্রাণীরা।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজারের সহকারি বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, এ উদ্যানের জীব বৈচিত্র্য সঠিক অবস্থানে আছে এখন। বনের প্রাণীগুলো এখন মহা আনন্দে বেড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যানবাহন চলাচল ও রেল চলাচল বন্ধ থাকায় অবাদে বন্যপ্রানী বিচরণ করছে বনে। নেই যানবাহনের আওয়াজ, কিংবা কোন গাড়ি চাপা ও ট্রেনে কাটা পরে প্রাণী মরার খবর। করোনাভাইরাস প্রতিরোধ শেষে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরলে এ উদ্যানে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রবেশ করলে বন ও পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর জন্য ভাল হবে বলে তিনি মনে করেন।

লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কারণে গত ১৯ মার্চ থেকে এ উদ্যানে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। এখন আসলেই বন বনের মতই আছে। তিনি বলেন, একটি প্রবাদ আছে বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। তেমনি পর্যটক শূণ্য অবস্থায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রানীরা মাতৃক্রোড়ে আছে।

 

কমলগঞ্জে ৩ সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর ইউনিয়নে রাবার বাগানের গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় ৩ সন্তানের জননীর লাশ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় মাধবপুর চা বাগানের ফাঁড়ি পদ্মছড়া চা বাগানের রাবার বাগানে লাশটি পাওয়া যায়। নিহত বিধবা ৩ সন্তানের জননী সেলিনা আক্তার মাধবপুর নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত মনু মিয়ার স্ত্রী।

জানাযায়, বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাবার শ্রমিকরা গাছ থেকে তরল রাবার সংগ্রহ করতে এসে একটি গাছের ডালে এ বিধবার ঝুলন্ত লাশ দেখে ইউপি সদস্য ও চা বাগান কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। পরে কমলগঞ্জ থানাকে বিষয়টি অবহিত করলে পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে লাশটি গাছ থেকে নামিয়ে সুরতহাল তৈরী করেন।
মাধবপুর ইউপি সদস্য আব্দুল আহাদ বলেন, কয়েক বছর আগে মহিলার স্বামী মারা গেছেন। তার ৩টি ছেলে সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র। কি কারণে বা কিভাবে গাছের ডালে ঝুলে তার মৃত্যু হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। নিহতের বড় ছেলে বলেছে সকাল ৭টায় তাদের মা ৩ ছেলে (তাদেরকে) নাস্তা খাইয়ে বাহির থেকে আসছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। বাড়ি ও ঘটনাস্থলের দূরেত্ব আধা ঘন্টার মধ্যে কিভাবে এ ঘটনাটি ঘটে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি মনে করেন ,লাশের ময়না তদন্ত শেষে বোঝা যাবে প্রকৃত ঘটনা।

কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ বলেন, লাশের সুরতহাল তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। আপাতত থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হবে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী তদন্ত চলবে। তিনি বিধবার মৃত্যুকে কিছুটা রহস্যজনক বলে ধারণা করছেন।

অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থকে আর্থিক অনুদান দিলো কমলগঞ্জ পৌরসভা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পৌরসভার পক্ষ থেকে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ তুলা কারখানার মালিক মোতাহের মিয়াকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। বুধবার(১৫ এপ্রিল) দুপুর ১টায় কমলগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে এ আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো: জুয়েল আহমেদ, কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, গোলাম মুগ্নি মুহিত, রাসেল মতলিব তরফদার, রফিকুল ইসলাম রুহেল প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ভানুগাছ বাজারস্থ জবা মিয়ার কলোনিতে মোতাহের মিয়ার তুলার গুদামে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও স্থানীয়রা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় কারখানা ও গুদামে থাকা মেশিনারিজ ও তুলা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানা মালিক মোতাহের মিয়া ও কমলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

 

-সূত্রঃ প্রথম আলো

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 + 2 =