প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

প্রবাসী সমালোচকদের পাসপোর্ট বাতিল করা প্রচলিত আইনে সম্ভব নয়

প্রবাসী সমালোচকদের পাসপোর্ট বাতিল করা প্রচলিত আইনে সম্ভব নয়

সরকারবিরোধী প্রচারণার সঙ্গে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সম্পর্ক কি? কেউ কেউ মনে করেন, বিদেশে বসে যেসব প্রবাসী সরকারের সমালোচনা করছেন, কুৎসা রটাচ্ছেন তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিও এই মত দিয়েছে। বলেছে, বিদেশে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রদ্রোহী প্রচারণার সঙ্গে জড়িত তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হবে। গত ১২ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক। এতে ১৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তাগণও উপস্থিত ছিলেন।

এই সভায় যেসব প্রবাসী বিদেশে বসে সরকারের সমালোচনা করছেন তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিদেশে থেকে অনেকেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। তাই এটা রাষ্ট্রদ্রোহ।

তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের পাসপোর্ট বাতিলের কথাও বলেন মন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছে, আইনগতভাবে এই সুপারিশ কি করতে পারে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি?

বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, এটা আইনসিদ্ধ হবে না। কারণ বাংলাদেশের পাসপোর্ট আইনে সরকারকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। যে কারণে সরকার যাদের পাসপোর্ট বাতিল করতে চায় সেসব কারণ সংযোজন করে নতুন করে আইন তৈরি করতে হবে। তারপরও প্রশ্ন থাকবে। ধরা যাক, একজন ব্যক্তি আমেরিকায় রয়েছেন। তার পাসপোর্ট বাতিল করা হলো। তখন সে কোথায় যাবে? সে তো তখন রাষ্ট্রহীন হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক আইনে কাউকেই রাষ্ট্রহীন করা যায় না। এটা যদি করা হয় তখন সেটা হবে আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমরা কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার কথা শুনছি। সাধারণভাবে যেটা বলা যায়, কেউ যদি বৈধভাবে ক্ষমতাসীন একটি সরকারকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করতে চায়, সেটা হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। বিদেশে বসে কথা বলছে, তাদেরকে কীভাবে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা যায়। কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হলে তো বিচারের প্রয়োজনই নেই। এটা তো তখন বিচারবহির্ভূত বিচার হয়ে গেল।

তিনি বলেন, পাসপোর্ট আর নাগরিকত্বের মধ্যে যে বিস্তর  ফারাক রয়েছে তা না বুঝার তো কারণ নেই। ১৭ কোটি মানুষের দেশে হয়তো ৫ কোটি মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে। বাকিরা কি তাহলে নাগরিকত্ব হারাবে? এটা কখনো হতে পারে না, হয় না। কারণ পাসপোর্ট হচ্ছে একটি ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট। কোনো কারণে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সে কি নাগরিকত্ব হারাবে? তার ভাষায়- যুক্তিহীন অনেক কিছু নিয়েই আমরা সময় নষ্ট করছি। সব কথার শেষ কথা, কাউকে রাষ্ট্রহীন করা যাবে না। তবে এটাও ঠিক, কোনো ব্যক্তি মৌলিক অধিকারের নামে যা কিছু যেমন বলতে পারেন না তেমনি অপছন্দ হলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার আওতায় এনে বিচারও করা যাবে না।

-মতিউর রহমান চৌধুরী,  মানবজমিন

 




সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন