দেশের সংবাদ

‘মা আমার হাতটা ধরে ছিল কেমনে খুলে গেল…’

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি : বুড়িগঙ্গা নদীতে গতকাল সকালে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় ছোট আকারের লঞ্চ মর্নিং বার্ড। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় অন্য অনেকের সঙ্গে প্রাণ হারান ব্যাংক কর্মকর্তা আবু তাহের। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের রেলিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছেন স্বজন। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

এস এম আজাদ || ‘মা আমার হাতটা ধরে ছিল কেমনে খুলে গেল…’ ‘আমরা লঞ্চের নিচতলায় ছিলাম। হঠাৎ শব্দ। দেখি বড় কিছু একটা সব উল্টে দিচ্ছে। মা আমার হাতটা ধরে ছিল। তারপর কেমনে খুলে গেল, জানি না। আমার বোনটা কই চলে গেল? আমি কিভাবে বেরিয়ে এলাম, জানি না। পরে পেলাম ওদের, এইখানে এসে…।’

নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা-বোনকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন রিফাত হোসেন (২২)। গতকাল সোমবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গের সামনে গিয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। সামনে দুটি মাইক্রোবাসে রাখা তাঁর মা ময়না বেগম (৪০) এবং ছোট বোন মুক্তার (১৪) মৃতদেহ। স্বজনরা জানাল, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম উপজেলার পানামগঞ্জ এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে রিফাত তাঁর দুই বোন আর মাকে নিয়ে কষ্টকর দিন পার করছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাবা তাঁদের খোঁজ রাখেন না। ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় থেকে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান রিফাত। করোনা মহামারির এই সময়ে তাঁরা গ্রামে চলে যান। কাজের সন্ধানে গতকাল পরিবার নিয়ে ফের ঢাকায় আসছিলেন তিনি।

রিফাতের মতো অনেক স্বজনের আহাজারিতে শোকাবহ এক পরিবেশ তৈরি হয় মর্গের সামনে। নিখোঁজ স্বজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে।

সাইদুল ইসলাম (৪৫) নামের এক নিহতের মুখে হাত বুলিয়ে কাঁদছিলেন তাঁর বোন নাসিমা বেগম। ‘ভাই, তুই ওঠ। ছয় মাস আগে মা আমাদের ছাইড়া চলে গেল। দুইটা বাচ্চা রাইখা, আমাগো রাইখা তুই ক্যামনে যাস?’ নাসিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল স্বজনরা। তারা জানায়, মীরকাদিমের সাইদুল সদরঘাটে হকারি করতেন। গ্রামের বাড়ি থেকে সদরঘাটে এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

মর্গ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলার সময় বিলাপ করছিলেন জাকির শেখ নামের আরেক ব্যক্তি। ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। চিকিৎসা করাইতে আইসা শেষবিদায় নিল? আমার সব শেষ করল।’ জাকির শেখ জানান, মুন্সীগঞ্জের সুজানগরে তাঁর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী সুমনা বেগম শিশুসন্তান তামিমকে (১৩) নিয়ে কাঠপট্টি থেকে ঢাকায় আসছিলেন। দুপুর থেকে খুঁজে সন্ধ্যায় তিনি দুজনের লাশ পেয়েছেন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে জানিয়েছেন, মা ও ছেলের লাশ একসঙ্গে পাওয়া যায়। মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। জাকির শেখের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান উজ্জলের (৪৮) লাশ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে এসে ব্যবসা করত উজ্জল।  দুটি মেয়ে আছে তার। এদের নিয়ে আমার মেয়েটা এখন কী করবে? কী বলব ওকে…?’

এদিকে দুপুর থেকেই মর্গে এসে স্বজনদের খোঁজে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিল কয়েক শ মানুষ। মর্গের এক পাশে আফরোজা আক্তার নামে এক নারী বিলাপ করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কান্না করে বললেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ভাই ওই লঞ্চে ছিল, গেল কই?’ পাশে থাকা এক স্বজন জানান, ভাই গোলাপ হোসেন ভূইয়া (৪৫) নিহত হওয়ার খবর শুনে আফরোজা পাগলের মতো ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জানানো হয়, লাশ পাঠানো হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে।

আফরোজা জানান, তাঁর ভাই গোলাপ মুন্সীগঞ্জের সিপাহীপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর তিনটি মেয়ে রয়েছে। ছোট মেয়েটির বয়স চার বছর। তাঁর এক আত্মীয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দিতে গোলাপ ঢাকা আসছিলেন। আরেকজনকে বাঁচানোর আগে গোলাপ নিজেই মারা গেলেন। সন্ধ্যায় আফরোজা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

‘আমরা লঞ্চের নিচতলায় ছিলাম। হঠাৎ শব্দ। দেখি বড় কিছু একটা সব উল্টে দিচ্ছে। মা আমার হাতটা ধরে ছিল। তারপর কেমনে খুলে গেল, জানি না। আমার বোনটা কই চলে গেল? আমি কিভাবে বেরিয়ে এলাম, জানি না। পরে পেলাম ওদের, এইখানে এসে…।’

নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা-বোনকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন রিফাত হোসেন (২২)। গতকাল সোমবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গের সামনে গিয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। সামনে দুটি মাইক্রোবাসে রাখা তাঁর মা ময়না বেগম (৪০) এবং ছোট বোন মুক্তার (১৪) মৃতদেহ। স্বজনরা জানাল, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম উপজেলার পানামগঞ্জ এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে রিফাত তাঁর দুই বোন আর মাকে নিয়ে কষ্টকর দিন পার করছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাবা তাঁদের খোঁজ রাখেন না। ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় থেকে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান রিফাত। করোনা মহামারির এই সময়ে তাঁরা গ্রামে চলে যান। কাজের সন্ধানে গতকাল পরিবার নিয়ে ফের ঢাকায় আসছিলেন তিনি।

রিফাতের মতো অনেক স্বজনের আহাজারিতে শোকাবহ এক পরিবেশ তৈরি হয় মর্গের সামনে। নিখোঁজ স্বজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে।

সাইদুল ইসলাম (৪৫) নামের এক নিহতের মুখে হাত বুলিয়ে কাঁদছিলেন তাঁর বোন নাসিমা বেগম। ‘ভাই, তুই ওঠ। ছয় মাস আগে মা আমাদের ছাইড়া চলে গেল। দুইটা বাচ্চা রাইখা, আমাগো রাইখা তুই ক্যামনে যাস?’ নাসিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল স্বজনরা। তারা জানায়, মীরকাদিমের সাইদুল সদরঘাটে হকারি করতেন। গ্রামের বাড়ি থেকে সদরঘাটে এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

মর্গ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলার সময় বিলাপ করছিলেন জাকির শেখ নামের আরেক ব্যক্তি। ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। চিকিৎসা করাইতে আইসা শেষবিদায় নিল? আমার সব শেষ করল।’ জাকির শেখ জানান, মুন্সীগঞ্জের সুজানগরে তাঁর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী সুমনা বেগম শিশুসন্তান তামিমকে (১৩) নিয়ে কাঠপট্টি থেকে ঢাকায় আসছিলেন। দুপুর থেকে খুঁজে সন্ধ্যায় তিনি দুজনের লাশ পেয়েছেন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে জানিয়েছেন, মা ও ছেলের লাশ একসঙ্গে পাওয়া যায়। মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। জাকির শেখের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান উজ্জলের (৪৮) লাশ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে এসে ব্যবসা করত উজ্জল।  দুটি মেয়ে আছে তার। এদের নিয়ে আমার মেয়েটা এখন কী করবে? কী বলব ওকে…?’

এদিকে দুপুর থেকেই মর্গে এসে স্বজনদের খোঁজে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিল কয়েক শ মানুষ। মর্গের এক পাশে আফরোজা আক্তার নামে এক নারী বিলাপ করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কান্না করে বললেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ভাই ওই লঞ্চে ছিল, গেল কই?’ পাশে থাকা এক স্বজন জানান, ভাই গোলাপ হোসেন ভূইয়া (৪৫) নিহত হওয়ার খবর শুনে আফরোজা পাগলের মতো ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জানানো হয়, লাশ পাঠানো হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে।

আফরোজা জানান, তাঁর ভাই গোলাপ মুন্সীগঞ্জের সিপাহীপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর তিনটি মেয়ে রয়েছে। ছোট মেয়েটির বয়স চার বছর। তাঁর এক আত্মীয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দিতে গোলাপ ঢাকা আসছিলেন। আরেকজনকে বাঁচানোর আগে গোলাপ নিজেই মারা গেলেন। সন্ধ্যায় আফরোজা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

‘আমরা লঞ্চের নিচতলায় ছিলাম। হঠাৎ শব্দ। দেখি বড় কিছু একটা সব উল্টে দিচ্ছে। মা আমার হাতটা ধরে ছিল। তারপর কেমনে খুলে গেল, জানি না। আমার বোনটা কই চলে গেল? আমি কিভাবে বেরিয়ে এলাম, জানি না। পরে পেলাম ওদের, এইখানে এসে…।’

নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা-বোনকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন রিফাত হোসেন (২২)। গতকাল সোমবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গের সামনে গিয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। সামনে দুটি মাইক্রোবাসে রাখা তাঁর মা ময়না বেগম (৪০) এবং ছোট বোন মুক্তার (১৪) মৃতদেহ। স্বজনরা জানাল, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম উপজেলার পানামগঞ্জ এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে রিফাত তাঁর দুই বোন আর মাকে নিয়ে কষ্টকর দিন পার করছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাবা তাঁদের খোঁজ রাখেন না। ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় থেকে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান রিফাত। করোনা মহামারির এই সময়ে তাঁরা গ্রামে চলে যান। কাজের সন্ধানে গতকাল পরিবার নিয়ে ফের ঢাকায় আসছিলেন তিনি।

রিফাতের মতো অনেক স্বজনের আহাজারিতে শোকাবহ এক পরিবেশ তৈরি হয় মর্গের সামনে। নিখোঁজ স্বজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে।

সাইদুল ইসলাম (৪৫) নামের এক নিহতের মুখে হাত বুলিয়ে কাঁদছিলেন তাঁর বোন নাসিমা বেগম। ‘ভাই, তুই ওঠ। ছয় মাস আগে মা আমাদের ছাইড়া চলে গেল। দুইটা বাচ্চা রাইখা, আমাগো রাইখা তুই ক্যামনে যাস?’ নাসিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল স্বজনরা। তারা জানায়, মীরকাদিমের সাইদুল সদরঘাটে হকারি করতেন। গ্রামের বাড়ি থেকে সদরঘাটে এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

মর্গ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলার সময় বিলাপ করছিলেন জাকির শেখ নামের আরেক ব্যক্তি। ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। চিকিৎসা করাইতে আইসা শেষবিদায় নিল? আমার সব শেষ করল।’ জাকির শেখ জানান, মুন্সীগঞ্জের সুজানগরে তাঁর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী সুমনা বেগম শিশুসন্তান তামিমকে (১৩) নিয়ে কাঠপট্টি থেকে ঢাকায় আসছিলেন। দুপুর থেকে খুঁজে সন্ধ্যায় তিনি দুজনের লাশ পেয়েছেন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে জানিয়েছেন, মা ও ছেলের লাশ একসঙ্গে পাওয়া যায়। মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। জাকির শেখের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান উজ্জলের (৪৮) লাশ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে এসে ব্যবসা করত উজ্জল।  দুটি মেয়ে আছে তার। এদের নিয়ে আমার মেয়েটা এখন কী করবে? কী বলব ওকে…?’

এদিকে দুপুর থেকেই মর্গে এসে স্বজনদের খোঁজে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিল কয়েক শ মানুষ। মর্গের এক পাশে আফরোজা আক্তার নামে এক নারী বিলাপ করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কান্না করে বললেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ভাই ওই লঞ্চে ছিল, গেল কই?’ পাশে থাকা এক স্বজন জানান, ভাই গোলাপ হোসেন ভূইয়া (৪৫) নিহত হওয়ার খবর শুনে আফরোজা পাগলের মতো ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জানানো হয়, লাশ পাঠানো হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে।

আফরোজা জানান, তাঁর ভাই গোলাপ মুন্সীগঞ্জের সিপাহীপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর তিনটি মেয়ে রয়েছে। ছোট মেয়েটির বয়স চার বছর। তাঁর এক আত্মীয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দিতে গোলাপ ঢাকা আসছিলেন। আরেকজনকে বাঁচানোর আগে গোলাপ নিজেই মারা গেলেন। সন্ধ্যায় আফরোজা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

‘আমরা লঞ্চের নিচতলায় ছিলাম। হঠাৎ শব্দ। দেখি বড় কিছু একটা সব উল্টে দিচ্ছে। মা আমার হাতটা ধরে ছিল। তারপর কেমনে খুলে গেল, জানি না। আমার বোনটা কই চলে গেল? আমি কিভাবে বেরিয়ে এলাম, জানি না। পরে পেলাম ওদের, এইখানে এসে…।’

নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা-বোনকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন রিফাত হোসেন (২২)। গতকাল সোমবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গের সামনে গিয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। সামনে দুটি মাইক্রোবাসে রাখা তাঁর মা ময়না বেগম (৪০) এবং ছোট বোন মুক্তার (১৪) মৃতদেহ। স্বজনরা জানাল, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম উপজেলার পানামগঞ্জ এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে রিফাত তাঁর দুই বোন আর মাকে নিয়ে কষ্টকর দিন পার করছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাবা তাঁদের খোঁজ রাখেন না। ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় থেকে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান রিফাত। করোনা মহামারির এই সময়ে তাঁরা গ্রামে চলে যান। কাজের সন্ধানে গতকাল পরিবার নিয়ে ফের ঢাকায় আসছিলেন তিনি।

রিফাতের মতো অনেক স্বজনের আহাজারিতে শোকাবহ এক পরিবেশ তৈরি হয় মর্গের সামনে। নিখোঁজ স্বজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে।

সাইদুল ইসলাম (৪৫) নামের এক নিহতের মুখে হাত বুলিয়ে কাঁদছিলেন তাঁর বোন নাসিমা বেগম। ‘ভাই, তুই ওঠ। ছয় মাস আগে মা আমাদের ছাইড়া চলে গেল। দুইটা বাচ্চা রাইখা, আমাগো রাইখা তুই ক্যামনে যাস?’ নাসিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল স্বজনরা। তারা জানায়, মীরকাদিমের সাইদুল সদরঘাটে হকারি করতেন। গ্রামের বাড়ি থেকে সদরঘাটে এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

মর্গ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলার সময় বিলাপ করছিলেন জাকির শেখ নামের আরেক ব্যক্তি। ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। চিকিৎসা করাইতে আইসা শেষবিদায় নিল? আমার সব শেষ করল।’ জাকির শেখ জানান, মুন্সীগঞ্জের সুজানগরে তাঁর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী সুমনা বেগম শিশুসন্তান তামিমকে (১৩) নিয়ে কাঠপট্টি থেকে ঢাকায় আসছিলেন। দুপুর থেকে খুঁজে সন্ধ্যায় তিনি দুজনের লাশ পেয়েছেন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে জানিয়েছেন, মা ও ছেলের লাশ একসঙ্গে পাওয়া যায়। মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। জাকির শেখের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান উজ্জলের (৪৮) লাশ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে এসে ব্যবসা করত উজ্জল।  দুটি মেয়ে আছে তার। এদের নিয়ে আমার মেয়েটা এখন কী করবে? কী বলব ওকে…?’

এদিকে দুপুর থেকেই মর্গে এসে স্বজনদের খোঁজে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিল কয়েক শ মানুষ। মর্গের এক পাশে আফরোজা আক্তার নামে এক নারী বিলাপ করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কান্না করে বললেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ভাই ওই লঞ্চে ছিল, গেল কই?’ পাশে থাকা এক স্বজন জানান, ভাই গোলাপ হোসেন ভূইয়া (৪৫) নিহত হওয়ার খবর শুনে আফরোজা পাগলের মতো ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জানানো হয়, লাশ পাঠানো হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে।

আফরোজা জানান, তাঁর ভাই গোলাপ মুন্সীগঞ্জের সিপাহীপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর তিনটি মেয়ে রয়েছে। ছোট মেয়েটির বয়স চার বছর। তাঁর এক আত্মীয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দিতে গোলাপ ঢাকা আসছিলেন। আরেকজনকে বাঁচানোর আগে গোলাপ নিজেই মারা গেলেন। সন্ধ্যায় আফরোজা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

‘আমরা লঞ্চের নিচতলায় ছিলাম। হঠাৎ শব্দ। দেখি বড় কিছু একটা সব উল্টে দিচ্ছে। মা আমার হাতটা ধরে ছিল। তারপর কেমনে খুলে গেল, জানি না। আমার বোনটা কই চলে গেল? আমি কিভাবে বেরিয়ে এলাম, জানি না। পরে পেলাম ওদের, এইখানে এসে…।’

নিজে প্রাণে বেঁচে গেলেও মা-বোনকে হারিয়ে বিলাপ করছিলেন রিফাত হোসেন (২২)। গতকাল সোমবার বিকেলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গের সামনে গিয়ে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেল। সামনে দুটি মাইক্রোবাসে রাখা তাঁর মা ময়না বেগম (৪০) এবং ছোট বোন মুক্তার (১৪) মৃতদেহ। স্বজনরা জানাল, মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিম উপজেলার পানামগঞ্জ এলাকার মাসুম মিয়ার ছেলে রিফাত তাঁর দুই বোন আর মাকে নিয়ে কষ্টকর দিন পার করছিলেন। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাবা তাঁদের খোঁজ রাখেন না। ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকায় থেকে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান রিফাত। করোনা মহামারির এই সময়ে তাঁরা গ্রামে চলে যান। কাজের সন্ধানে গতকাল পরিবার নিয়ে ফের ঢাকায় আসছিলেন তিনি।

রিফাতের মতো অনেক স্বজনের আহাজারিতে শোকাবহ এক পরিবেশ তৈরি হয় মর্গের সামনে। নিখোঁজ স্বজনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে অনেকে।

সাইদুল ইসলাম (৪৫) নামের এক নিহতের মুখে হাত বুলিয়ে কাঁদছিলেন তাঁর বোন নাসিমা বেগম। ‘ভাই, তুই ওঠ। ছয় মাস আগে মা আমাদের ছাইড়া চলে গেল। দুইটা বাচ্চা রাইখা, আমাগো রাইখা তুই ক্যামনে যাস?’ নাসিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল স্বজনরা। তারা জানায়, মীরকাদিমের সাইদুল সদরঘাটে হকারি করতেন। গ্রামের বাড়ি থেকে সদরঘাটে এসে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

মর্গ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলার সময় বিলাপ করছিলেন জাকির শেখ নামের আরেক ব্যক্তি। ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। চিকিৎসা করাইতে আইসা শেষবিদায় নিল? আমার সব শেষ করল।’ জাকির শেখ জানান, মুন্সীগঞ্জের সুজানগরে তাঁর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী সুমনা বেগম শিশুসন্তান তামিমকে (১৩) নিয়ে কাঠপট্টি থেকে ঢাকায় আসছিলেন। দুপুর থেকে খুঁজে সন্ধ্যায় তিনি দুজনের লাশ পেয়েছেন। উদ্ধারকারীরা তাঁকে জানিয়েছেন, মা ও ছেলের লাশ একসঙ্গে পাওয়া যায়। মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন। জাকির শেখের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান উজ্জলের (৪৮) লাশ নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে করে এসে ব্যবসা করত উজ্জল।  দুটি মেয়ে আছে তার। এদের নিয়ে আমার মেয়েটা এখন কী করবে? কী বলব ওকে…?’

এদিকে দুপুর থেকেই মর্গে এসে স্বজনদের খোঁজে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিল কয়েক শ মানুষ। মর্গের এক পাশে আফরোজা আক্তার নামে এক নারী বিলাপ করছিলেন। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কান্না করে বললেন, ‘আমার ভাইকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার ভাই ওই লঞ্চে ছিল, গেল কই?’ পাশে থাকা এক স্বজন জানান, ভাই গোলাপ হোসেন ভূইয়া (৪৫) নিহত হওয়ার খবর শুনে আফরোজা পাগলের মতো ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জানানো হয়, লাশ পাঠানো হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে।

আফরোজা জানান, তাঁর ভাই গোলাপ মুন্সীগঞ্জের সিপাহীপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁর তিনটি মেয়ে রয়েছে। ছোট মেয়েটির বয়স চার বছর। তাঁর এক আত্মীয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। রক্তের প্রয়োজন। রক্ত দিতে গোলাপ ঢাকা আসছিলেন। আরেকজনকে বাঁচানোর আগে গোলাপ নিজেই মারা গেলেন। সন্ধ্যায় আফরোজা ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

২১ সেকেন্ডেই ৩২ লাশ

►বুড়িগঙ্গায় বড় লঞ্চের চাপায় ডুবল মর্নিং বার্ড
► ১৩ ঘণ্টা পর একজনকে জীবিত উদ্ধার
► কয়েকজন নিখোঁজ

মাত্র ২১ সেকেন্ডেই বড় একটি লঞ্চ রীতিমতো চাপা দিয়ে ছোট একটি লঞ্চকে ডুবিয়ে দিয়েছে। মর্নিং বার্ড নামের ছোট লঞ্চটিতে যাত্রী ছিল ৮০ জনের মতো। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩২ জনই লাশ হয়ে গেছে। শত শত লঞ্চ-নৌকা যেখানে ভিড় জমিয়ে থাকে, রাজধানীর সদরঘাটের কাছে শ্যামবাজারসংলগ্ন বুড়িগঙ্গায় ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে অনেকের চোখের সামনে ময়ূর-২ নামের বড় লঞ্চটির ধাক্কায় মর্নিং বার্ড তলিয়ে গেলে নৌকায় ছুটে যায় দুই পারের মানুষ। এরপর এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন উদ্ধারকর্মীরা। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে সদরঘাটে এসে নোঙর করতে যাচ্ছিল মর্নিং বার্ড। ময়ূর-২ লঞ্চটিও চাঁদপুর থেকে সদরঘাটে এসে যাত্রী নামিয়ে ভিন্ন স্থানে নোঙর করতে যাচ্ছিল। নিহতদের সবাই মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। তাদের বাড়ি বাড়ি এখন মাতম। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০-১২ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে স্বজনরা। উদ্ধারকর্মীরা ২৫ জনকে জীবিত উদ্ধারের দাবি করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী, উদ্ধারকারী ও লঞ্চের জীবিত যাত্রীরা জানান, ময়ূর-২ লঞ্চটি ঘাটের দিকে আসা মর্নিং বার্ডকে দেখেও গতি কমায়নি। মর্নিং বার্ডও গতিপথ থেকে ঘুরে যেতে পারেনি। দুই লঞ্চের অসাবধানতা থাকলেও ময়ূর-২ লঞ্চটি বেপরোয়া চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা যেমন বলছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেও অনেকেরই তাই ধারণা। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ), ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ডুবুরিদল নিয়ে দিনভর অভিযান চালিয়ে মর্নিং বার্ডের ৩২ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে তিনটি শিশু, আটজন নারী এবং ২১ জন পুরুষ। তাদের সবার বাড়িই মুন্সীগঞ্জে। গত রাত ১০টা পর্যন্ত ৩২ জনের লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৩২ লাশের মধ্যে একটি ঢাকার দোহারের, মুন্সীগঞ্জ সদরের ১৯টি, টঙ্গিবাড়ীর ৯টি, সিরাজদিখানের একটি এবং শ্রীনগরের একটি।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডুবে থাকা লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা গেছে। উদ্ধারের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামের উদ্ধারকারী জাহাজ নিয়ে আসার চেষ্টা করা হলেও উচ্চতার কারণে সেটি বুড়িগঙ্গা সেতুর কাছে আটকে যায়। বিকেল থেকে মর্নিং বার্ডের ভেতরে বেলুনে গ্যাস দিয়ে ভাসানোর চেষ্টা শুরু করেন উদ্ধারকারীরা। লঞ্চের ভেতরে এখনো দু-একটি মৃতদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাতভর অভিযান অব্যাহত ছিল। ঘটনার তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

নিহত-নিখোঁজদের স্বজনদের বিলাপে বুড়িগঙ্গা তীর ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গ এলাকার আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহতদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় আসছিল। কেউ আসছিল চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় কাজে। করোনার দুর্যোগের মধ্যে এই মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিটি পরিবারে মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে। গতকাল জেলা প্রশাসন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের লাশ দাফনের জন্য পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ঘটনার পরই ময়ূর-২ লঞ্চটি জব্দ করা হয়েছে। তবে এই লঞ্চের মাস্টার বাশার মোল্লা, সহকারী জাকির হোসেন খলিফা ও শিপন হাওলাদার পলাতক রয়েছেন। আশিক (১৮) নামের এক ইঞ্জিন বয় নিখোঁজ আছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর মা পপি বেগম।

দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি কোনো দূর্ঘটনা নয়, বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে দেওয়ার পাশাপাশি লাশ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ জানা গেছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) রফিকুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক এবং বিআইডাব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা) রফিকুল ইসলামকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশের প্রতিনিধিও আছেন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আমাদের ১৪ জন ডুবুরি কাজ করছেন। আর তেমন নিখোঁজ বা ডুবে বেশি মানুষ নেই বলে মনে হচ্ছে। এর পরও লঞ্চটির ভেতরে মৃতদেহ থাকলে তা বের করার চেষ্টা করা হবে। যদি লঞ্চটিকে একটু ভাসানো যায়, তাহলে কাজটি সহজ হবে।’

বিআইডাব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক মো. সেলিম জানান, এমভি মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের দিকে আসছিল। সকাল সোয়া ৯টার দিকে শ্যামবাজারের কাছে চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় সেটি ডুবে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ময়ূর-২ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে লালকুঠি ঘাটে যাত্রী নামিয়ে সদরঘাটের চাঁদপুর ঘাটে গিয়ে নোঙর করার জন্য ব্যাগার (ব্যাক গিয়ারে) ঘুরছিল। ওই সময় পেছনে থাকা এমভি মর্নিং বার্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে ঘোরানোর জন্য যাওয়ার সময় মাত্র ২১ সেকেন্ডে ময়ূর-২-এর সামনের অংশের নিচে চাপা পড়ে মর্নিং বার্ড।

লঞ্চ থেকে সাঁতরে তীরে ওঠা বাবুল মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি লঞ্চের ওপরে ছিলাম। প্রশ্রাব করার জন্য বাথরুমে যাই। হঠাৎ একটি শব্দ শুনতে পাই। বাথরুম থেকে বের হয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চ ডুবতে শুরু করলে আমি পানিতে ঝাঁপ দিয়ে কোনো রকমে প্রাণ বাঁচাই।’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন বাবুল। তাঁর ভাষ্য মতে, লঞ্চে যাত্রী ছিল ৮০ জনের মতো। ওপরে থাকা ২০-৩০ জন তীরে উঠতে পেরেছে। বাকিরা তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যে স্থানে লঞ্চটি ডুবে যায় তার পাশে লঞ্চ দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে ফায়ার সার্ভিস, বিআইডাব্লিউটিএ, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ করেন। ডুবুরিদলের সহায়তায় পানির নিচ থেকে ৩২টি মৃতদেহ উদ্ধারের পর বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তিন দফায় পাঠানো লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দাফনের জন্য দেওয়া হয়। নদীর তীর ও হাসপাতালের মর্গের সামনে স্বজনরা ভিড় করে বিলাপ করতে থাকে।

ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা যাদের লাশ উদ্ধার করেছেন, তাদের মধ্যে যমুনা ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার কর্মচারী সুমন তালুকদারকে শনাক্ত করেন তাঁর বড় ভাই নয়ন তালুকদার। তিনি জানান, তাঁদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে এসে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে অফিস করতেন সুমন। প্রতিদিনের মতো সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লঞ্চে উঠে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন এক সন্তানের বাবা সুমন। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এবং তাঁর ফোন বন্ধ পেয়ে সদরঘাটে ছুটে আসেন তাঁর ভাই।

লঞ্চযাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, ময়ূর-২ লঞ্চটি নতুন স্থানে নোঙর করার সময় এর মাস্টার ও সহকারীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। এই লঞ্চের মাস্টার আবুল বাশার, তাঁর সহকারী জাকির হোসেন খলিফা ও শিপন হাওলাদারের হদিস মেলেনি। আবুল বাশার লঞ্চ থেকে লাফিয়ে তীরে উঠে গেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ‘আমরা এখনো কাজ শেষ করতে পারি নাই। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে দুর্ঘটনাকারী জাহাজ ময়ূরী-২ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। কোনো গ্রেপ্তার নাই।’

নিহত যারা : গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত যে ৩০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয় তাঁরা হলেন সত্যরঞ্জন (৬৫), মিজানুর (৩২), সাইদুল (৬২), সুফিয়া বেগম (৫০), মনিরুজ্জামান (৪২), সুবর্ণা আক্তার (২৮), মুক্তা (১২), গোলাম হোসেন ভূইয়া (৫০), আবজাল শেখ (৪৮), বিউটি (৩৮), ময়না (৩৫), আমির হোসেন (৫৫), মো. নাইম (১৭), শাহাদাৎ (৪৪), শামীম বেপারী (৪৭), মিল্লাত (৩৫), আবু তাহের (৫৮), দিদার হোসেন (৪৫), হাফেজা খাতুন (৩৮), সুমন তালুকদার (৩৫), আয়শা বেগম (৩৫), হাসিনা রহমান (৪০), আলম বেপারী (৩৮), মোসা. মারুফা (২৮), শহিদুল হোসেন (৪১), তালহা (২), ইসমাইল শরীফ (৩৫), তামিম ও সাইদুল ইসলাম (৪২)।

১৩ ঘণ্টা পর একজনকে জীবিত উদ্ধার : লঞ্চডুবির প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। নদীতে ভেসে ওঠার পর কোস্ট গার্ডের কর্মীরা তাঁকে তুলে নেন। উদ্ধার করার পর তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির নাম সুমন বেপারী (৩৫)। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানার আব্দুল্লাহপুরের সজল বেপারীর ছেলে সুমন বাদামতলী এলাকার ফল ব্যবসায়ী বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর দেবাশিষ বর্ধন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, উদ্ধার হওয়া এই ব্যক্তি সম্ভবত ইঞ্জিনরুমে ছিলেন। সাধারণত ইঞ্জিনরুম এয়ারটাইট হওয়ার কারণে সেখানে পানি প্রবেশ করে না। ১০টা ১০ মিনিটের দিকে কুশন পদ্ধতি ব্যবহার করে জাহাজ ভাসানোর চেষ্টা করা হলে সম্ভবত ইঞ্জিনরুম খুলে যায়। সে সময় তিনি বের হয়ে আসেন।’

স্বজনদের বুকফাটা কান্না

মা-বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রিফাত

মা-বোনের সঙ্গে রিফাত

রিফাত (২৬) পুরান ঢাকার কামালবাগের একটি জুতার দোকানে কাজ করেন। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ মীরকাদিমের কাঠপট্টি এলাকায়। বাড়িতে মা আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া বোন মুক্তা থাকেন। জমি বিক্রি করে বাবা মালেক শেখ মাস ছয়েক আগে মালয়েশিয়া গেছেন। এখনও সংসারের জন্য টাকা পাঠাতে পারেননি।

মা-বোনের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রিফাত প্রতিদিন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। কাজ শেষে আবার বাড়ি ফিরে যান। সম্প্রতি তিনি পুরান ঢাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। মা আর বোনকে নিয়ে সেই বাসার উদ্দেশেই রওনা দিয়েছিলেন রিফাত। কিন্তু সেই বাসায় আর ওঠা হল না। একটি দুর্ঘটনা তার স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিতে তার মা ও বোনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অবস্থায় বেঁচে গেলেও রিফাতের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘মা-বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে বড় করেছেন। মা-বোনকে একটু ভালো রাখার মাধ্যমে সেই ঋণ শোধ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা আর পারলাম না। এখন বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না।’

পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে (মিটফোর্ড) মা আর বোনের লাশ দেখে মূর্ছা যাচ্ছিলেন রিফাত। কেবল রিফাত নন, স্বজনদের লাশ নিয়ে বিলাপ করছিলেন অনেকেই। তাদের আহাজারি আর বুকফাটা কান্নায় শ্যামবাজার-সদরঘাট-মিটফোর্ড এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। পাগলপ্রায় স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা ছিল না অনেকের। এখনও স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। দিনব্যাপী শোকের মাতম চলে গোটা এলাকায়।

লঞ্চডুবিতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২ জনের লাশ উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। সুরতহাল শেষে তাদের লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়। যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে নারী, শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক রয়েছেন। সবার বাড়িই মুন্সীগঞ্জে। একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। স্বামীকে ডাক্তার দেখাতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন স্ত্রী। ডাক্তার দেখাতে এসে প্রাণ গেছে দুই বছরের শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনের। স্বামীর চোখের অপারেশন করাতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন স্ত্রী। ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন স্বামী। ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করাতে এসে প্রাণ গেছে শিশুসহ তিনজনের।

মা ও বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রিফাত : মা ময়না বেগম এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া বোন মুক্তা বেগমকে হারিয়ে মীরকাদিম কাঠপট্টি এলাকার রিফাতের অবস্থা পাগলপ্রায়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রিফাত বলেন, লঞ্চের ভেতর আমি এবং মা দুই পাশে বসেছিলাম। বোন ছিল মাঝখানে। হঠাৎ লঞ্চ কাত হয়ে দ্রুত ডুবতে থাকে।

এ সময় আমি লাফ দিয়ে লঞ্চ থেকে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু মা-বোন লাফ দিতে পারেননি। তারা ডুবে যায়। লাফ দেয়ার কারণে আমি পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হই। পরে আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ন্যাশনাল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে আমি হাসপাতালে এসে মা-বোনের নিথর দেহ দেখতে পাই।

স্ত্রী-ছেলে-খালুশ্বশুরকে হারিয়ে জাকিরের আর্তনাদ : গ্রামের বাড়িতে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন জাকির হোসেন শেখ। তিনি হারিয়েছেন স্ত্রী সুমনা আক্তার (৩৩), ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত ১২ বছরের শিশু মাদ্রাসাছাত্র তামিম এবং তার খালুশ্বশুর গোলাপ হোসেন ভূঁইয়াকে। আর্তনাদ করতে করতে জাকির বলেন, আমি গরিব মানুষ।

ফেরি করে কাপর বিক্রি করে সংসার চলে। সম্প্রতি আমার ছেলে তামিমের ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। ওর চিকিৎসার জন্য আমার স্ত্রী ও খালুশ্বশুর সকালে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। টেলিভিশনে লঞ্চডুবির খবর পেয়ে স্ত্রী ও খালুশ্বশুরের মোবাইলে বারবার ফোন দিই। কিন্তু কেউ ফোন ধরছিল না। তাই দ্রুত সদরঘাটে আসি। সেখান থেকে হাসপাতাল মর্গে এসে তাদের লাশ শনাক্ত করি। তিনি বলেন, আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?

স্বামীকে ডাক্তার দেখাতে এসে প্রাণ দিলেন বিউটি : স্ত্রী বিউটি বেগমকে (৩৮) হারিয়ে মিটফোর্ট মর্গের সামনে বিলাপ করছিলেন স্বামী লিটন খান। তিনি বলেন, আমার চোখে সমস্যা ছিল। ডাক্তার অপারেশন করাতে বললেও আমি তা করাতে চাচ্ছিলাম না। অনেক বুঝিয়ে বিউটি আমাকে রাজি করিয়েছে। বলেছে, তোমার সুস্থতার ওপর পুরো পরিবার নির্ভর করে। তোমার নিজের জন্য না হলেও আমাদের জন্য হলেও চোখের অপারেশনটা করাও। শেষ পর্যন্ত তার কথায় রাজি হয়ে তার সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিই। লঞ্চডুবির ঘটনায় আমি আহত হয়ে বেঁচে গেলেও স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না।

বোন-ভাগ্নে-দুলাভাইয়ের লাশের অপেক্ষায় সুমন : মর্গের সামনে লাশের জন্য অপেক্ষায় থাকা মো. সুমন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বোন মারুফা (২৫) অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য তিনি দুই বছরের ছেলে তালহা এবং দুলাভাই (অন্য বোনের জামাই) মো. আলম ঢাকায় লঞ্চযোগে আসছিলেন। কিন্তু তাদের লঞ্চটি লালকুঠি ঘাটে ভিড়ার আগেই অপর একটি বড় লঞ্চের ধাক্কায় পানিতে ডুবে যায়। এতে তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে।

স্ত্রী-ছেলের লাশ মিললেও পাওয়া যাচ্ছে না রহমানকে : ঢাকা জজকোর্টের মোহরি আবদুর রহমান, ছেলে রিফাত এবং স্ত্রী হাসিনা রহমান মুন্সীগঞ্জ থেকে একসঙ্গে ঢাকায় আসছিলেন। তাদের মধ্যে মা-ছেলের লাশ পাওয়া গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আবদুর রহমানের লাশ পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নেই সুমনের : সুমন ব্যাপারী সদরঘাটে ফলের ব্যবসা করতেন। ঢাকায় মেসে থাকতেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি যেতেন। দু’দিন আগে গ্রামে যান। সোমবার লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এখনও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে লাশের অপেক্ষায় ছিলেন তার বড় ভাই শাহীন এবং চাচাতো ভাই হাবিবসহ বেশ কয়েকজন। সুমনের ভাই শাহীন জানান, সকালে লঞ্চডুবির খবর পাওয়ার পরই লঞ্চ ভাড়া করে ঘটনাস্থলে ভাইয়ের লাশ খুঁজেছি। হাসপাতাল মর্গে এসে খুঁজেছি। কিন্তু সুমনের লাশ পাচ্ছি না।

দুই মামার খোঁজে মাসুদ : জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রী মো. মাসুদ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ঘাটে ভেড়ার জন্য লঞ্চটি সোজা আসছিল। এ সময় অন্য একটা লঞ্চ বাঁকা হয়ে ঘাট থেকে রওনা দিচ্ছিল। আর ওই লঞ্চটা আমাদের লঞ্চের মাঝে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের লঞ্চটা ডুবে যায়। আমি কেবিনে ছিলাম। গ্লাস খুলে আমি বের হই। ভেতরে আমার আপন দুই মামা ছিলেন।

তারা বের হতে পারেননি। মামার খোঁজে সদরঘাটের জেটিতে অবস্থান করা মাসুদ আরও জানান, ইসলামপুরের গুলশানআরা সিটিতে কাপড়ের ব্যবসা করেন তিনি। প্রতিদিন সকালে মুন্সীগঞ্জ থেকে এসে কাপড়ের দোকান করেন। রোববার ময়মনসিংহ থেকে তার দুই মামা তাদের মুন্সীগঞ্জের বাসায় বেড়াতে যান। তাদের নিয়ে লঞ্চের একটি কেবিনে করে ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু মামাদের আর বাড়ি ফেরা হল না। -সূত্রঃ বিডিপ্রতিদিন ও যুগান্তর থেকে

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন