ফিচার্ড মুক্তিযুদ্ধ

স্বাধীনতা কি? স্বাধীনতার মূল বিষয়বস্তু ও স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি

স্বাধীনতার-মূল-বিষয়বস্তু-ও-স্বাধীনতার-রক্ষাকবচ-গুলো-কি-কি

স্বাধীনতা কি? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি? স্বাধীনতার মূল বিষয়বস্তু আলোচনা ও রক্ষাকবচ সমূহ আলোচনা…

অপরের কাজে কোনরূপ হস্তক্ষেপ না করে  নিজের কাজ সম্পাদন করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে। স্বাধীনতা হলাে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে নিজের অধিকার পরিপূর্ণভাবে ভােগ করা । সুতরাং বলা যায়, অপরের অধিকার বা কার্যাবলির ওপর হস্তক্ষেপ না করে স্ব-ইচ্ছানুসারে কার্য করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে।

হার্বারট স্পেনসার (Herbert Spencer) বলেন, “স্বাধীনতা বলতে ইচ্ছেমত কাজ করাকে বোঝায়, যদি উক্ত কাজ দ্বারা অন্যের অনুরুপ স্বাধীনতা উপভোগ করায় বাধা সৃষ্টি না হয়”।

অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে স্বাধীনতা কি, স্বাধীনতা বলতে এমন এক পরিবেশের সযত্ন সংরক্ষণকে বোঝায় যে পরিবেশে মানুষ তার ব্যাক্তিসত্তাকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করতে পারে। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে এই পরিবেশকে সংরক্ষণ করে।

স্বাধীনতা কি তা বোঝাতে টি এইচ গ্রিন (T. H. Green) বলেন, কোন কিছু উপভােগ ও সম্পাদন করার ক্ষমতাকে স্বাধীনতা বলে।

শেলী (Shelly) বলেন, “অতি শাসনের বীপরিত ব্যবস্থায় হলো স্বাধীনতা”।



সুতরাং স্বাধীনতা অর্থ যা ইচ্ছা তাই করার ক্ষমতা নয় বরং ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী অনুকূল পরিবেশই স্বাধীনতা।

 

একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি?

স্বাধীনতার রক্ষাকবচ সমূহ আলোচনা করা হলঃ

সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ঘােষণাঃ শাসনতন্ত্র জনগণের আশা-ভরসার মূর্ত প্রতীক। এতে জনগণের মৌলিক অধিকারের তালিকা স্পষ্টরূপে লিপিবদ্ধ হয় ও এদের সংরক্ষণ বা প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করা হয়। এগুলাের একটি বিশেষ মর্যাদাও থাকে। জনসাধারণ জানতে পারে তাদের অধিকার কি কি। নির্দিষ্ট অধিকার ভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিকার বিধানের প্রচেষ্টা অনির্দিষ্ট স্বাধীনতার ব্যাঘাতের অভিযােগে আন্দোলন অপেক্ষা অনেক বেশি কার্যকর।

আইনঃ আইন হচ্ছে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত ও রক্ষক। আইন আছে বলেই স্বাধীনতা ভােগ করা সম্ভব হয়। আইনবিহীন সমাজে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় রূপ নেয়। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লকের মতে, “যেখানে আইন নেই, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।”

আইনের অনুশাসনঃ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে আইনের অনুশাসন। আইনের চোখে সবাই সমান ও কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। ধনী-দরিদ্র, উচু-নিচু সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমান। আর এই আইনের অনুশাসন, স্বাধীনতাকে সংরক্ষিত রাখতে পারে। তাই লাস্কি বলেন, বিশেষ সুযােগের ব্যবস্থা থাকলে অধিকারের অস্তিত্ব থাকে না।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণঃ অধিকার রক্ষা করার জন্য আইন, শাসন ও বিচার বিভাগকে পরস্পর পৃথক করা আবশ্যক। এতে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। মার্কিন লেখক ব্লাকস্টোনের মতে, ক্ষমতা একত্রীকরণ স্বৈরাচারেরই নামান্তর। এতে অধিকার ক্ষুন্ন হয়।

দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থাঃ স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হলাে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগ তার কার্যাবলির জন্য আইন সভার নিকট দায়ী থাকে। এছাড়া বিরােধী দলের অস্তিত্বের জন্য সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষিত হয়। Ivor Jennings বলেন, দায়িত্বশীল সরকার ব্যবস্থা, যেখানে বিরােধী দল সরকারকে সমালােচনা করতে পারে, সেখানে স্বাধীনতা অব্যাহত থাকে।



বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও নিরপেক্ষতাঃ এটা স্বাধীনতা সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান রক্ষাকবচ। স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত রাখতে হবে।বিচার বিভাগ স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকলে কোন নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন হলে আদালত তার প্রতিকারের ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে।

নাগরিকদের সতর্কতাঃ নাগরিকদের চেতনাবােধ ও সতর্কতা অধিকারের শ্রেষ্ঠতম রক্ষাকবচ। নিজেদের স্বাধীনতা ও অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য নাগরিকদের সংগ্রাম করতে হবে। স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকা প্রয়ােজন । লর্ড ব্রাইমের ভাষায়, সদা সতর্ক থাকাই হচ্ছে স্বাধীনতার মূল্য।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণঃ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক সংস্থাগুলােকে আঞ্চলিক বিষয়ে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে ও এদেরকে কেন্দ্রের দৌরাত্ম্য হতে মুক্ত রেখে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে কেন্দ্রের ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে নাগরিকদের স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করতে হবে।

গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাঃ এ ব্যবস্থায় জনগণের স্বাধীনতা সংরক্ষিত হয়। গণ উদ্যোগ, গণভােট, পদচ্যুতি প্রভৃতি প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রয়ােগ করে শাসকচক্রের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে স্বাধীনতা রক্ষা পায়। যেহেতু সাম্য ও স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি সেহেতু গণতন্ত্রকে স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ করা যায়।

সুসংগঠিত দলীয় ব্যবস্থাঃ সুসংগঠিত দলীয় ব্যবস্থা স্বাধীনতার অন্যতম একটি রক্ষাকবচ। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলগুলাে সরকারের কার্যাবলীর প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রাখে ও জনস্বার্থ বিরােধী কাজের তীব্র সমালােচনা করে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষা করে।

স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলোর সকল উপাদানই স্বাধীনতা সংরক্ষণে বিরাট ভূমিকা রাখে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হল স্বাধীনতা সংরক্ষণ করতে হলে নিজেদের স্বাধীনতা সম্পর্কে নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। লাস্কি, ঠিকই বলেছেন, সদা সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য এবং জনগণের সাহসিকতার মধ্যেই ইহার সাফল্য নিহিত। লাস্কি আরও বলেন, “In democratic state liberty is the most essential thing for human rights.”

সংবাদটি শেয়ার করুন