ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৯ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৯ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

পূর্ব  প্রকাশের পর। পর্ব- ৯

প্রাণতোষই ইরাকে সম্প্রদান করল৷ যজ্ঞের আগুনে খই দিয়ে অগ্নিসাক্ষী করে দর্পণে সিদুর লাগিয়ে ইরার সিঁথি রাঙিয়ে দিল গোবিন্দ৷

নাকের উপর সিদূরের গুঁড়ো ইরাকে মোহময়ী করে তুলল৷ মুগ্ধ চোখে ইরার দিকে তাকিয়ে থাকল গোবিন্দ৷

বিয়ে বাড়ির নেমন্তন্ন খেয়ে যে যার বাড়ি চলে গেল৷ বাসর রাতে গোবিন্দ ইরার হাত ধরে চুপ করে বসে থাকল৷ গোবিন্দ অনুভব করল  এই হাতের উপর হাত রেখেই তার এই জীবনটা থাকবে, একটা মানুষের সুখ দুঃখের দায়িত্ব তারই একান্ত৷ ইরার মুখে হাসি ফোটাবার জন্য তাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে৷

ইরাও অনুভব করল যে তার সমস্ত কিছু জেনে ওই বুকের মধ্যে  তাকে আশ্রয় দিয়েছে সেই মানুষটা যাতে সব সময়ে খুশীতে থাকে, সেই দায়িত্ব তার৷

রাত ক্রমশঃ গভীর হতে থাকল৷ দূরে রাত জাগা পাখি ডেকে উঠল৷ দুজন দুজনকে ছুঁয়ে ঘুমিয়ে পরল৷

সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই রমলা এগিয়ে এল। বলল — তোমরা দুজনেই তৈরি হয়ে নাও, টিফিন খেয়ে একটু সাজিয়ে গুজিয়ে তোমাদের থাকার জন্য পেছন বাড়িতে চলে যাবে৷

ছবি মাসিও এসে দাড়াল৷ ছবি মাসি ইরার গাল টিপে হেসে বলল, এবার তো আমাদের মেয়ে বিদায় করতে হবে৷

কিছুক্ষণ পরে ইরা আর গোবিন্দকে সাজিয়ে মাথায় ধান, দুর্বা দিয়ে সবাই আশীর্বাদ করল৷ ইরা ওর বাবার ঘরে গেল৷ বাবাও মেয়ে, জামাইয়ের মাথায় হাত রাখলেন৷

তারপর ওদের পেছনের বাড়িতে দিয়ে আসা হল৷ সবাই সঙ্গে গেল৷ দুকামরার ঘর, সামনে বারান্দা, একপাশে রান্নাঘর, অন্যপাশে বাথরুম৷ দুটি ঘরেই প্রাণতোষবাবু আসবাবপত্র দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন৷

ভালবাসার ছোঁয়ায় ওদের সংসার রঙীন হয়ে উঠুক৷ মনে মনে এই প্রার্থনাই করেন রমলা৷ আজকে মনোতোষ যদি ঠিক থাকত তাহলেতো মনোতোষেরও এরকম সংসার তিনি সাজিয়ে দিতেন৷ বুকের চোরা কুঠুরি চিন চিন করে ওঠে৷

ইরার বিয়ের জন্য মনোতোষকে মনেও পরে নি৷

ড্রাইভার রতন বলছিল, বৌদি বড়দাকে সেদিন বাজে পাড়ায় দেখা গিয়েছে৷ ওখানে মারামারিও হয়েছে৷ ইরার বিয়ের রাতে বেহদ মাতাল হয়ে পেছন বাড়ির বড় গেটটা দিয়ে যখন ওর ঘরে ঢুকেছিল৷ কপাল ফেটে রক্ত ঝরছিল৷ রতনই ডাক্তার ডেকে আনে৷ ছবিমাসি সারা রাত মনোতোষের পাশে বসেছিল৷

কেউই এসব কথা জানে না৷ কারণ ছবি মাসি রতনকে বলতে বারন করেছিল৷

আজকে সকালে রতন সব কথা রমলাকে জানাল।তারপর থেকেই রমলার মনটা বিষন্ন হয়ে আছে৷ প্রাণতোষ এখনও জানেন না৷ জানলে পরে আর রক্ষা থাকবে না৷

পরদিন বউভাত৷ দুপুরে কাসার থালার পঞ্চ ব্যাঞ্জন রানা করে সাজিয়ে তার উপর শাড়ি সাজিয়ে রমলা গোবিম্দর হাতে দিল৷ গোবিন্দ সেই থালা ইরার হাতে দিয়ে বলল, আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিলাম৷

ইরা গভীরভাবে গোবিন্দর দিকে তাকাল৷ আজকে যেটুকু নিয়ম কাজ বাড়িতেই সারা হবে৷ তাতেও কমতি নেই ৷ পোলাউ, মাছ, মাংস, দই ,

মিষ্টি রাতের জন্য, আর দুপুরে মাছে ভাতে বাঙালী৷

আজ সন্ধেবেলা একটা আকাশী রঙের বেনারসী পরেছে ইরা৷ গোবিন্দ ধুতি, পাঞ্জাবী৷ রমলা গোবিন্দকে কাছে ডেকে, একটা আঙটি দিয়ে বলল, আজ রাতে এই আঙটিটা বউকে দিস৷

গোবিন্দ আঙটিটা নিয়ে রমলার পা ছুঁয়ে প্রনাম করল৷ রমলা কেঁদে ফেলল৷

গোবিন্দ সবই বোঝে৷ মনোতোষের বিষয়টা যে রমলাকে কতটা কষ্ট দেয় অনুভব করে গোবিন্দ৷ কতগুলো বছর এই বাড়িতে কাটালো৷ মনোতোষ আর সে প্রায় সম বয়সী৷ কলেজে পড়তে গিয়েই মনোতোষ কেমন হয়ে গেল৷ রেসের মাঠ, মদ, জুয়া, মেয়েদের সঙ্গে নোঙরামি কোনওটাই বাদ নেই৷

গোবিন্দ আর ইরার ঘরটা ফুলের গন্ধে ম ম করছে৷ পুরো খাটটা রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে৷ গোলাপী বেড কভারে গোলাপের লাল পাপড়ি ছড়িয়ে আছে৷

খাটের উপর চুপ করে বসে আছে ইরা৷ গোবিন্দ দরজাটা বন্ধ করে দিল। তারপর ইরার কাছে গিয়ে বসল৷ ইরার বা হাতের অনামিকায় পরিয়ে দিল আঙটিটা৷ ইরা পা ছুঁয়ে প্রনাম করল গোবিন্দকে৷

ইরাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরল গোবিন্দ৷ সোহাগী চাঁদের আলোয় জোছনা বৃষ্টি ঝরে ওদের ভালবাসার শীৎকারে৷

পরদিন একটু বেলা করেই ঘুম ভাঙল ওদের৷ দরজা খুলতেই কল্পনা এসে বলল, দাদা আপনাদের স্নান সেরে বৌদি ওই বাড়িতে যেতে বলেছে৷

গোবিন্দ স্নানে গেল৷ ইরা ঝট করে ঘর দোর পরিস্কার করে নিল৷ গোবিন্দ বাথরুম থেকে বেড়োতেই ইরা কাপড় গুছিয়ে স্নানঘরে ঢুকল৷

ইরা স্নান সেরে বেড়োলে ভেজা খোলা চুলে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চওড়া করে সিদূর পরে সিঁথিতে৷ কপালে গোল করে আঁকে সিদূরের টিপ৷ সিদূরের গুঁড়ো নাকের উপর পরে৷ গোবিন্দ এসে পেছনে দাড়াল৷ ইরা গোবিন্দকে দেখে লজ্জা পেল৷ তাড়াতাড়ি মাথায় ঘোমটা টানল৷

গোবিন্দর সোহাগ ইরার কান, গাল , ঠোঁট ছুল৷

ওদের দেরী হচ্ছে দেখে কল্পনা আবার আসল৷ পর্দার আড়ালে উঁকি মেরে মুখ সরিয়ে গলায় আওয়াজ দিল৷

ইরা তাড়াতাড়ি গোবিন্দর শক্ত বাঁধন ছাড়িয়ে দরজা দিয়ে বাইরে আসল৷ কল্পনা ইরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, দিদি সিদূরটা লেপ্টে গেছে ঠিক করে দিই৷

ইরার আঁচল দিয়ে ল্যাপ্টানো সিদূরটাকে ঠিক করে কল্পনা বলে, নাকের উপর সিদূর পরা মানে বর খুব ভালবাসে৷

ইরা ধ্যাৎ বলে ছুট্টে পালাল৷ এই বাড়িতে ওরা এসে দেখল, ছবি মাসির ঘরে সবাই অপেক্ষা করছে৷ সবার মুখ ভার৷ ওদেরকে ছবি মাসি খাটে বসিয়ে কল্পনাকে বলে, ওদের জলখাবার দে৷

কল্পনা বলল, আমি গুছিয়ে রেখেছি নিয়ে আসছি৷

ইরা ছবি মাসিকে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে ?

ছবি মাসি মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কেঁদে উঠল৷

রমলারও চোখ ফোলা৷

গোবিন্দ জিজ্ঞাসা করল, মেসোমশাই কোথায় মাসীমা ?

রমলা চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলল, বাবা এই গর্ভে যে একটা অমানুষ জন্ম দিয়েছি৷ তার খেসারত দিয়ে চলেছি৷ রেসের মাঠে ওর ঘোড়া জিততে পারে নি বলে৷ যে ঘোড়া জিতেছে তার বুকিকে ও আর ওর দলের সাঙ্গ পাঙ্গরা এমন মেরেছে , যে তারা এখন হাসপাতালে৷ আজকে সকালে মনোতোষকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে৷

কথাগুলো বলেই হাউহাউ করে কেঁদে উঠল রমলা৷

কল্পনা দু প্লেটে লুচি তরকারি নিয়ে ঘরে ঢুকল৷ গোবিন্দ কল্পনাকে বলে, তুমি খাবারটা ঢেকে রাখো আমি আসছি৷

ইরার হাতে খাবারের প্লেটটা দিতে এলে ইরা কল্পনাকে জিজ্ঞাসা করল, বাড়ির সবাই খেয়েছে?

কল্পনা চুপ করে থাকল৷

ইরা যা বোঝার বুঝে গেল৷ কল্পনাকে বলল, তুমি এগুলো এখন নিয়ে যাও৷

গোবিন্দ দোতলায় উঠে দেখল প্রাণতোষ বারান্দায় পায়চারি করছে৷ গোবিন্দকে দেখে প্রাণতোষ বুকে যেন বল পেল৷

গোবিন্দ বলল, মেসোমশাই উকিলবাবুকে ফোন করেছেন ?

প্রাণতোষ বলল, কিসের জন্য?

— মনোতোষদাকে ছাড়াতে হবে৷

— কোনও প্রশ্নই নেই৷ ওই কুলাঙ্গারকে আমি আর বাড়ি ঢুকতে দেব না৷

গোবিন্দ বলল— তা বললে কি হয় ? মাসীমার কথা ভাবুন৷ মায়ের মন৷ ছবি ঠাকুমার কথা ভাবুন, ছেলেবেলা থেকে কোলেপিঠে মানুষ করেছেন৷ আর আপনি কঠিন হয়ে আছেন৷ কিন্তু আপনার বুক ফেটে যাচ্ছে আমি জানি৷

প্রাণতোষের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল৷

গোবিন্দকে বুকে চেপে বলল, তুই আমার ঘরে জন্মালি না কেন ?

গোবিন্দ প্রাণতোষকে বলল, কে বলল আমি আপনার ঘরে জন্মাইনি৷ রক্ত দিয়েই কি সব সম্পর্ক হয় ? আমার মনের বাঁধনে শুধু আপনি আর মাসীমা ছাড়া কেউ নেই৷

প্রাণতোষ টেবিলে রাখা ফোনটার দিকে এগিয়ে গেল৷ ফোনের পাশে রাখা ডায়েরি থেকে উকিলের ফোন নাম্বার নিয়ে মনোতোষের জামিনের জন্য  বলেন৷

সন্ধের আগেই মনোতোষ বাড়ি ঢুকল৷ উসকো খুসকো চুল, চেহারা বিধ্বস্ত৷ ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল৷ ছবি মাসি ধাক্কা দিল দরজা খোলার জন্য৷ মনোতোষ দরজা খুলল না৷

আজকে সারাদিনই কারুর কিছু মুখে ওঠে নি৷ সবাই ক্লান্ত৷ সন্ধেবেলা সবাই হাল্কা খাবার খেল৷ কারুরই আর কথা বলতে ভালো লাগছে না৷

বিয়ে বাড়ির আনন্দ নিমেষে উধাও হয়ে গেল৷

দেবতোষ রাতে খাবার টেবিলে বলল, বাবা এই বাড়িতে থাকা আমার অসহ্য হয়ে উঠছে৷ আমি গ্রাজুয়েশন করে মাস্টার্স করতে বিদেশে যাব৷

প্রাণতোষ কোনও উত্তর দিল না৷ চুপ করে থাকল৷ রাতে যে যার মতন খেয়ে শুয়ে পরল৷

রাত একটু গভীর হলে ছবি মাসি মনোতোষের দরজায় টোকা মারল৷ মনোতোষ দরজা খুলল৷

ছবি মাসি বলল, কেউ নেই দাদুভাই আমার ঘরে আয়৷

মনোতোষ বলল, তুমি যাও আমি স্নান করে যাচ্ছি৷

কিছুক্ষণ পরে মনোতোষ স্নান সেরে পরিস্কার জামাকাপড় পরে এল৷ ছবি মাসি ওকে থালায় রান্না করা খাবার বেড়ে দিল৷ মনোতোষ আস্তে আস্তে খেতে থাকল৷

মনোতোষের খাওয়া শেষ হলে, ছবিমাসি মনোতোষের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, বাবা আমি সবই বুঝি, কিন্তু তুই ফিরে আয়৷

মনোতোষ বলল, না দিদু আমি কিছুতেই ফিরব না৷ আমি ফিরলে ওরা যে শাস্তি পাবে না৷ আমার কি দোষ ছিল বলো৷ আমার না ফেরাটাই ওদের শাস্তি৷

ফুঁপিয়ে উঠল মনোতোষ৷ ছবি মাসি চুপ করে থাকল৷ মনোতোষ ঘরে চলে গেল। দূরে রাতজাগা পাখিটা জেগে উঠল।

মনোতোষ চলে যেতেই ছবি মাসি মনোতোষের এঁঠো থালা রান্নাঘরে রেখে, খাবার জায়গাটা মুছে ফেলল। তারপর হাত, মুখ ধুয়ে শাড়ি ছেড়ে ফেলল৷ ধোওয়া কাপড় পরে ঠাকুরের নাম নিয়ে দরজা ভেজিয়ে বিছানায় শুতে গেল৷

সারা দিনের মানসিক উত্তেজনায় ঘুম কিছুতেই আসল না৷ মনে পরে সেই কবে থেকে সে  এই বাড়িতে আছে৷ প্রাণতোষের মা নীলিমা তার হাতেই সংসারের সব কিছু ছেড়ে দিয়েছিলেন৷ সারা দিন পুজো পাঠ, গোপাল সেবা এই করেই নীলিমার দিন কাটত৷

প্রাণতোষ আর প্রাণতোষের এক জেঠতুতো দাদা ব্রজেস্বর এই বাড়িতে থাকত৷ ব্রজেস্বরের বাবা, মা ছোটবেলায়ই মারা যান৷ তারপর থেকে ব্রজেস্বর কাকা, কাকীমার কাছেই মানুষ৷

ব্রজেস্বর ছেলেবেলা থেকেই একটু অন্য ধরনের ছিল৷ বৈষয়িক তো ছিলই না৷ সারাদিন একতারা হাতে গান গাইতো৷ একতারার তারেই ওর জীবনের তার বাঁধা৷

প্রাণতোষ আবার ভীষণ বৈষয়িক৷ তার প্রতিটা কাজ গুছানো৷ কোনও কাজে কেউ কোনও ত্রুটি খুঁজে পাবে না৷ প্রাণতোষ স্কুল পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হল৷ আর ব্রজেস্বর স্কুলের গন্ডী কোনওরকমে পেরোলেও আর পড়া লেখার ইচ্ছে তার নেই৷

প্রাণতোষের বাবা আশুতোষবাবুও আর কি করবেন৷ বাপ, মা মরা ছেলেকে তিনি আর কি জোর খাটাবেন৷

তিনি  একদিন ব্রজেস্বরকে ডেকে বললেন, তোমার এখন কি ইচ্ছে ব্রজ?

ব্রজেস্বর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, কাকাবাবু যদি কোথাও গানের তালিম পেতুম৷

আশুতোষবাবু আর দ্বিধা করেননি৷ বিনা বাক্য ব্যায়েই তখনকার বিখ্যাত বাউল সাধক হরি দাস বাউলের কাছে তালিম নেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।৷ ব্রজেস্বরও খুব অল্প দিনের মধ্যেই হরি দাসের প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিল৷

একাধারে গান লেখা আবার তাতে সুর দেওয়া দুটোতেই সমান পারদর্শী ছিল ব্রজেশ্বর।

সারা দিন স্নান খাওয়া ভুলে সুরের সাধনায় মগ্ন থাকত ব্রজেস্বর৷ পাতার পর পাতা ভরে উঠত শব্দকলিতে৷ বাড়ির পেছনে একটা ঝাঁকড়া রাঁধাচূড়া গাছ ছিল৷ সন্ধে  হলেই ব্রজেস্বর গাছতলায় বসে সুরের সাধনায় মগ্ন হতো৷

একবার হরি দাস বাউল আমেরিকায় যাবেন অনুষ্ঠান করতে৷ ওনার খুব ইচ্ছে ব্রজেস্বরকে সঙ্গে নিয়ে যান৷ ব্রজেস্বরকে বলতেই ব্রজেস্বর বলল, গুরুজি আমি আমার নিজের জন্য গান গাই৷ নিজেকে ভালো রাখার জন্য গান গাই৷

আমি সবার সামনে গান গাইতে পারবো না৷

কিছুতেই ব্রজেস্বরকে রাজী করানো গেল না৷ গুরুজি আর কি করেন৷ নিজের অন্য ছাত্রদের নিয়ে তিনি গেলেন৷

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার এই আক্ষেপ ছিল যে তার সাহচর্যে কত ছেলে গানের জগতে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলল আর ব্রজকে তিনি কিছুতেই সর্ব সমক্ষে আনতে পারলেন না৷

ব্রজেশ্বর একতারা হাতে যখন সুর সাধনায় মগ্ন হত তখন তাকে প্রকৃত বাউল সাধক বলেই মনে হতো।  তার দেহ মন পার্থিব জগতের বাইরে মহাশূন্যের পথে হারিয়ে যেত। একবার প্রাণতোষের এক বন্ধু অখিল সেন লন্ডন থেকে প্রাণতোষ এর বাড়িতে ঘুরতে এলেন। তিনি সুরবিলাসী মানুষ। যে কোনও  গানেরই  তিনি ভীষণ ভক্ত।  তিন দিন তিনি প্রাণতোষ এর বাড়িতে থাকবেন। আর অন্যান্য দিন অন্য সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকবেন। প্রথমদিন প্রাণতোষ এর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। পরদিন বিকেলে  চায়ের পর্ব সবে শেষ হয়েছে। গোধূলির রাঙ্গা আলো চারিদিকের পরিবেশকে মোহময় করে তুলেছে এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন কে যেন একতারা হাতে গাইছে খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়।  তিনি মুগ্ধ হয়ে গানটা  শুনলেন। গানটা শেষ হতেই তিনি প্রাণতোষ কে জিজ্ঞাসা করলেন, কে গাইল রে কি সুন্দর ভরাট গলা ,প্রকৃত সুরসাধক। প্রাণতোষ বললেন, আমার জেঠতুতো দাদা ব্রজেশ্বর। বাউল ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। অখিল সেন বললেন, ওনার গান শুনলেই বোঝা যায় উনি প্রকৃত বাউল সাধক। আমি ওনার সঙ্গে একটু আলাপ করতে চাই।  প্রাণতোষ বললেন, উনি বাড়ির পেছন দিকটায় থাকেন এদিকটায় আসেন না। অখিল বললেন, আমি ওখানে গিয়ে আলাপ করব। প্রাণতোষ আর কথা বাড়ালেন না। বাড়ির কাজের লোক মুকুন্দ কে ডেকে বললেন ,দাদা বাবুকে একটু ব্রজ দাদার ওখানে নিয়ে যাও।  মুকুন্দর সঙ্গে অখিল যখন ব্রজেশ্বর এর কাছে গেল ব্রজেশ্বর তখন একতারার  তারে  আঙ্গুলগুলো  নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল।  মুকুন্দ কে দেখে মুখ তুলে তাকাতেই মুকুন্দ বলল, বড় দাদাবাবু ইনি অখিল দাদাবাবু ছোট দাদাবাবুর বন্ধু ৷আপনার গান শুনে আলাপ করতে  এয়েছেন৷  ব্রজেশ্বর হাতের ইশারায় অখিল কে একটা চেয়ারে বসতে বললেন। মুকুন্দ বলল, বড়দা বাবু আমি এবার যাই। ব্রজেশ্বর ঘাড় নাড়লেন। মুকুন্দ চলে যেতেই অখিল বললেন, আপনার গান শুনে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না ছুটে এলাম আপনার সঙ্গে আলাপ করতে। ব্রজেশ্বর স্মিত হাসলেন। অখিল বললেন, আমি সুরের ভক্ত। আপনার গান শুনে বুঝেছি আপনি প্রকৃত বাউল সুর সাধক।  আপনার যদি কোনও আপত্তি না থাকে তাহলে আমি বাউলতত্ত্ব বিষয়ে আপনার কাছে কিছু শুনতে চাই।  ব্রজেশ্বর বললেন , আপত্তির কিছু নেই। প্রকৃত বাউল সবাই হতে পারে না।

 

চলবে…

কৃষ্ণা গুহ রয়- উপন্যাসিক, কবি। পশ্চিমবঙ্গ


অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে হলে

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -১ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -২ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -৩ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -৪ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৫ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৬ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৭ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য়

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৮ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

 

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন