ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৮ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৮ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

পূর্ব  প্রকাশের পর। পর্ব- ৮

ওদিকে গোবিন্দ দুপুরে খেয়েদেয়ে উঠে দেবতোষের সঙ্গে গল্প শুরু করল৷ গোবিন্দ বলল, জানো দাদা আজ আমার নাটক দেখতে যাওয়া হল না৷ প্রিয়তোষ বলল, গোবিন্দদা তোমার নাটকের নেশা এবার কি করবে ?

গোবিন্দ বলল, তাই তো ভাবছি৷

দেবতোষ বলল, আচ্ছা গোবিন্দদা আমার এক বন্ধুর দাদার নাটকের দল আছে শ্যামবাজারে৷ সপ্তাহে তিনদিন করে রিহার্সাল হয়৷ তুমি সেখানে যোগ দিতে পারো৷ আর ওদের রাত আটটা থেকে রিহার্সাল৷ কাজেই তোমার অসুবিধা হবে না৷

গোবিন্দ বলল, না না এখন কি আর ওসব হবে৷

ওদের কথার মাঝেই প্রাণতোষ ঘরে ঢুকল৷  ঘরে ঢুকে বলল, খুব গল্প হচ্ছে দুজনে৷ আচ্ছা গোবিন্দ তোমাকে একটা কথা আমার বলা হয় নি, সেটা হল বিয়ের পর কয়েকটা মাস তুমি এই বাড়ির একদম পেছন দিকে যে দুকামরার ঘর আছে, বাথরুম, রান্নাঘর সহ সেখানে থাকো৷ তারপর আমাদের মৌলালির ফ্ল্যাটটা এই ফাঁকা হয়ে গেলে ওখানে তুমি তোমার সংসারপত্তর নিয়ে বাসা বেঁধো৷

আসলে কি জানোতো আমার মনে হলো দমদমে কারখানার সঙ্গে যে স্টাফ কোয়াটার্স আছে সেখানে এতদিন তুমি একা ছিলে ঠিক ছিল, কিন্তু এখন ইরামাকে নিয়ে ওখানে থাকাটা আমার বা আমাদের বাড়ির কারুর পছন্দ নয়৷

দেবতোষও আনন্দে বলে উঠল, বাবা খুব ভাল প্রস্তাব দিয়েছে গোবিন্দদা রাজী হয়ে যাও৷

গোবিন্দ বলল, আমি আর কি বলব আপনারা যা বলবেন তাই৷

প্রাণতোষ বলল, নাও তোমরা গল্প করো আমি এবার আমার ঘরে যাই৷

বড় ড্রয়িঙরুমে বিকেলের চায়ের আসর বসেছে৷ গোবিন্দ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ইরাকে আড় চোখে দেখছে৷ বেশ লাগছে ইরাকে দেখতে৷

যখন ওকে প্রথম দেখেছিল ঝড়ে ডানা ভাঙা পাখির মতন লাগছিল৷ এখন সেখানে নিশ্চিন্ত লাগছে৷ ছোটবেলায় গোবিন্দর মা বলত, তোর জন্য লাল টুকটুকে বউ আনব৷

সেই হবু বউই এখন ইরা৷ সত্যি মায়েদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে৷

মায়ের কথা মনে পরে গোবিন্দর ৷ আজ মা থাকলে কত খুশী হতো৷

ইরার সঙ্গে গোবিন্দর চোখাচুখি হতেই ইরা চোখ নামিয়ে নিল৷ লজ্জার আভা ছড়িয়ে পরল মুখে৷

চায়ের পর্ব মিটতেই দেবতোষ উঠে দাঁড়াল, সবার দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে একটু বেরুতে হবে এবার৷

তারপর গোবিন্দর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি নটার আগেই ফিরব গোবিন্দদা৷ তারপর জমিয়ে আড্ডা হবে৷

দেবতোষ বেড়িয়ে যেতেই রমলা বলল, ইরামা ছাদে যে হাল্কা ভিজে কাপড়গুলো আছে সেগুলো ছাদের ঘরে মেলে দিয়ে আয়৷ আর খোপাটা শক্ত করে বাঁধা আছে তো ?

ইরা মাথা নেড়ে হ্যা বলল৷

ইরা উঠে দাঁড়াতেই রমলা গোবিন্দর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমিও ওর সঙ্গে ছাদে যাও বাবা৷ বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তো , একা একা ছাদে উঠতে নেই৷

গোবিন্দ আর ইরা ছাদের সিঁড়ির দিকে এগোয়৷

ওরা চলে যেতেই রমলা প্রাণতোষকে বলল , বুঝলে একটু ওদের একা ছেড়ে দিলাম৷ নিজেরা একটু কথা বলুক৷ এখন কি আর আমাদের যুগ আছে যে একেবারে ছাদনাতলায় মুখ দেখা৷

প্রাণতোষ হা হা করে হেসে ফেলল৷ তারপর বলল, আমি কি আর আমার গিন্নীকে চিনি না? আমি ঠিক বুঝেছি৷

রমলা বলল, সবাই বুঝল একমাত্র মনোকেই বোঝাতে পারলাম না৷

প্রাণতোষের বুকটা খা খা করে উঠল৷ নিজেকে সামলে বলে উঠল, গিন্নী তাড়াতাড়ি নিচের ঘরে চলো, একটু পরেই রান্নার ঠাকুর চলে আসবে৷

রমলা বলে উঠল, হ্যা তুমি যাও , আমি ঠাকুর ঘরে সন্ধেটা দিয়েই আসছি৷

ইরা ছাদে উঠে হাল্কা ভিজে কাপড়গুলো ছাদের ঘরের দড়িতে মেলে দিল৷ গোবিন্দ ইরার পেছনে দাঁড়িয়ে বলল, কেমন আছো ?

ইরা বলল, সবই আপনার জন্য৷

——— আমার জন্য নয় সবই এই বাড়ির মানুষগুলোর জন্য৷

ইরা বলল, এই বাড়ির মানুষগুলোকে চিনতাম কিভাবে আপনি না থাকলে৷ আজকে বাবাকে এখানে ওনারা এনে রেখেছেন বলে আরও নিশ্চিন্ত লাগছে৷

——— সবই ওপরয়ালার ইচ্ছে৷ তিনিই সব ব্যাবস্থা করে রেখেছেন৷ আমরা বুঝি না৷

কোনওদিনই ভাবিইনি আমার বিয়ে হবে৷ ভাবতাম এই চালচুলোহীন মানুষকে আর কে পছন্দ করবে? তাই কোনওদিনই মনে ওসব চিন্তা আসেনি৷ আর তখনই ধুমকেতুর মতন তুমি এসে উপস্থিত হলে৷

ইরা বলল, আমিও যখন চোখ বুঝি ভাবি এভাবেও হয় ? এখনকার যুগেও মানুষ এত ভালো হয়৷ আমার আত্মীয় পরিজনরা আমাকে আশ্রয় দিল না, অথচ এনারা তো আমার কেউই নয়৷ কিন্তু এনারাই আমাকে আশ্রয় দিলেন৷

———— এনারাই এখন তোমার আপন ৷ আর জেনে রাখবে বিপদের সময় আত্মীয় পরিজনরাই দূরে সরে যায়৷ আমার মাকেও দেখেছি বাবা চলে যাবার পর জেঠারা সামান্য কিছু টাকা মায়ের হাতে দিয়ে মাকে দিয়ে সমস্ত কিছু লিখিয়ে নিয়ে ঘরছাড়া করেছিল৷ এই মেসোমশাই তখন মাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন৷

আর এখন আমাকে ৷

কথা বলতে বলতে ওরা দুজনেই আনমনা হয়ে যায়৷ সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে গেছে অনেকক্ষণ৷ গোধূলীর আলো ওদের মননে স্বপ্নবেলার রঙীন নক্সী কাঁথা বুনে চলেছে তখন৷

নিচের ঘরে রান্নার ঠাকুর নিমাই এল৷ নিমাই এই বাড়ির বহু পুরনো লোক৷ ওর বাবা ঘনশ্যাম আগে এই বাড়িতে উৎসব অনুষ্ঠানে রান্নার দায়িত্বে থাকত৷ তখন নিমাই বাবার সঙ্গে থাকত৷ এখন ঘনশ্যাম বৃদ্ধ হয়েছে৷ নিমাই সব কাজ করে৷

বহু বছরের সম্পর্ক এই বাড়ির সঙ্গে৷ নিমাইয়ের মনে পরে, ছেলেবেলায় প্রায়ই উৎসব অনুষ্ঠান লেগে থাকত এই বাড়িতে৷ প্রাণতোষের বাবা আশুতোষ বাবু খুবই দিলখোলা স্বভাবের ছিলেন আর গিন্নীমা ননীবালা খুবই দয়ালু মনের ছিলেন৷

আজকে রাস পুজো, দোল পূর্ণিমার পুজো, পয়লা বৈশাখের পুজো, দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী কোনও পুজো বাদ পরত  না এই বাড়িতে৷ প্রতি পুজোয় হাজারের উপর লোকের পাত পরতো এখানে৷

রান্নার দায়িত্ব পরত নিমাইয়ের বাবা ঘনশ্যামের৷

আর ঠাকুরের ভোগের রান্না রাধত গোপাল চক্রবর্তী আর তার বউ আভা৷

সেই কোন সকালে মাটিতে পাতা উনুনে আগুন জ্বালিয়ে রান্না শুরু হত৷ একসঙ্গে ছয় খানা মাটির উনুন৷ দাউ দাউ করে জ্বলত৷ ঠাকুরের  ভোগের রান্নার জন্য জোগানদার তিনজন, আর ভোগের প্রসাদের সঙ্গে পাত পেতে খাবার জন্য যে রান্না হতো তার জোগানদার ছয় জন৷ শেষরাত্রির থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত এক্কেবারে ধুন্দুমার কান্ড৷

নিমাই তখন কতই আর আট, নয় বছর বয়স৷ কত উৎসাহ৷ দুপুরে সবাই খেতে বসলে মাটির গ্লাসে পিতলের জগ করে জল দেওয়া, সকলের পাতে নুন, লেবু দেওয়া এসব কাজ ও খুব খুশী মনে করত৷ ঘনশ্যামের কাজকর্ম শেষ হবার পর, নিজেরা তো প্রসাত খেতই, আবার গিন্নীমা বাড়ির জন্যও প্রসাদ দিয়ে দিতেন৷ রান্নার জন্য মজুরী তো দিতেনই আবার ঘনশ্যামকে আলাদা ডেকে বখশিশ হাতে গুজে দিয়ে বলতেন, ছেলে যা ভালবাসে তাই ওকে কিনে দিও৷

ঘনশ্যামও যে আজ্ঞে বলে গিন্নীমায়ের পা ছুঁয়ে ঝোলা ভর্তি খাবার নিয়ে  নিমাইকে নিয়ে বাড়ির পথে হাটা দিত৷

প্রাণতোষ এসে ঘরে বসল৷ মালতি এসে চা আর বিস্কুট ট্রেতে করে দিয়ে গেল৷

নিমাই বলল, কার বিয়ে দাদা?

প্রাণতোষ বলল, আমার মেয়ের৷

নিমাই অবাক হতেই প্রাণতোষ হেসে ফেলল। বলল, আমার মেয়েকে অনেকদিন বাদে খুঁজে পেয়েছি৷

ততক্ষণে রমলাও সন্ধের পুজো দিয়ে ঘরে এসেছে৷ রমলাকে দেখে নিমাই হাতজোড় করে নমস্কার করল৷  প্রাণতোষ বলল, আমার সম্পর্কে এক আত্মীয়র মেয়ে৷ মা নেই, বাবাও শয্যাশায়ী৷ পাড়ার কিছু গুন্ডা, বদমাশ বিরক্ত করছিল৷ আমাদের কানে খবরটা আসতেই  আমরা মেয়ে আর মেয়ের বাবাকে আমাদের এখানে নিয়ে এলাম৷ আর তুমি তো গোবিন্দকে সেই ছোটবেলা থেকেই চেনো, গোবিন্দর সঙ্গেই ওর বিয়ে ঠিক করলাম৷

নিমাই চাটুকু শেষ করে বলল, খুব ভাল দাদা৷

এখন বল আমাকে কি করতে হবে?

প্রাণতোষ বলল,  রবিবার বিয়ে৷ তুমি ভোরবেলা চলে আসবে৷ সকালের টিফিন, দুপুরের খাবার আর অতিথিদের জন্য রাতের রান্না করবে৷

রমলা বলল, নিমাইদা সকালের টিফিনে লুচি, তরকারি আর একটা মিষ্টি থাকবে৷ আর দুপুরে ভাত, মাছের মাথার ডাল, আলুভাজা, রুই মাছের কালিয়া, চাটনি, দই আর রসগোল্লা৷

প্রাণতোষ বলল,  রাতেও এই পদগুলো থাকবে, তুমি শুধু এর সঙ্গে পাবদা মাছের ঝাল, কচি পাঁঠার মাংস আর রসগোল্লার সঙ্গে  একটা কাচাগোল্লাও রেখো৷

নিমাই বলল, নিরামিষ কিছু রান্না রাখবেন না৷

প্রাণতোষ বলল, দশজনের মতন নিরামিষ খাবে, তাদের জন্য আমাদের রান্নার লোক মালতিই আছে৷

রমলা বলল, আমি আজ সকালে মালতিকে বলে দিয়েছি, লুচি, আলুরদম, মিষ্টি পোলাউ, পনিরের তরকারি রান্না করতে৷ তার সঙ্গে চাটনি আর পাঁপড়ও বানাবে আর মিষ্টিতো থাকছেই৷  নিমাই বলল, তাহলে দাদা লোক কজন হবে৷

প্রাণতোষ বলল, দেখো সকাল আর দুপুর মিলিয়ে বাড়ির লোক আর অতিথি মিলিয়ে পঞ্চাশ জন হবে৷ আর রাতে দুশো জনের মতন হবে৷

আমি তো সবাইকে বলতে পারিনি৷ কিছু আমি নিজে গিয়ে আর কিছু টেলিফোনে বলেছি৷ প্রত্যেকেই খুশী হয়েছে এবং আসবেও বলেছে৷

নিমাই বলল, তাহলে আমি লিস্ট করে কাল পরশু আসি৷

প্রাণতোষ বলল, তোমাকে আর লিস্ট করে আসতে হবে না৷ তুমি লিস্ট অনুযায়ী বাজার করে আগের দিন রাতেই সব গুছিয়ে রেখে যাবে৷ আর ডেকরেটার্সের জিনিস কি লাগবে তা সাহা ডেকরেটার্সকে আমার নাম করে বলে দেবে ওরা পাঠিয়ে দেবে৷

তারপর প্রাণতোষ পকেট থেকে এক হাজার টাকা ওর হাতে দিয়ে বলল, তুমি বাজারটা এই টাকায় করো৷

নিমাই টাকাটা নিয়ে চলে গেল৷

নিমাই চলে যেতেই রমলা বলল, এত বছর তোমার সঙ্গে ঘর করছি৷ সব সময়ই দেখেছি যতটুকু দরকার তুমি ঠিক ততটুকুই বলো৷

প্রাণতোষ হেসে ফেলল৷ তারপর বলল , শোনো গিন্নী আমি যদি ইরার পুরো ঘটনাটা খুলে বলতাম, তাহলে এই নিমাই আড়ালে বলতো, চেনে না জানে না, তার প্রতি দরদ ৷ আর ইরার সম্পর্কেও মন্দ কথা বলত৷ আবার নাও বলতে পারে৷ কিন্তু বেশি জানিয়ে কি হবে? বেশি জানা মানেই সমস্যা৷ সমস্যা যত কমানো যায়, তত কম কথাই বলা ভালো৷

সকাল থেকেই হৈ হৈ রব প্রাণতোষের বাড়িতে৷ আজ ইরা আর গোবিন্দর বিয়ে৷ গোবিন্দ আগের দিনই এই বাড়িতে চলে এসেছে৷ ওরও তিন কূলে কেউ নেই৷ তাই ঠাকুর মশাই দুজনের বিয়ের এক সঙ্গে নিয়ম সারবেন৷

বিয়ের আগের দিন রমলার তুতো দুই ভাইয়ের বউ আর দুই বোন , প্রাণতোষের এক জেঠতুতো বউদি আর দুই খুড়তুতো বোন এসেছে৷ ওরাই আগের দিন এসে বরণের কুলো সাজিয়েছে৷ একতলায় ইরা আর দোতলায় গোবিন্দ রয়েছে৷ কারণ ইরার বাবা যেহেতু একতলায় রয়েছেন তাই ইরার বিয়ের আয়োজন একতলাতেই করা হয়েছে৷ আর বাড়ির পেছনে বিশাল বাগানের পাশে খোলা জায়গায় প্যান্ডেল করে সন্ধেবেলা বিয়ের বাসর আর খাবার আয়োজন করা হয়েছে৷

কাকভোরে ইরাকে দই , চিঁড়ে খাইয়ে তারপর গোবিন্দর অধিবাস করানো হল৷ একই বাড়িতে দুজনের শাঁখের ফু আর উলুধ্বনি সহযোগে দুজনের অধিবাস হল৷

একটু বেলা গড়াতেই গোবিন্দকে ছাদে নিয়ে গিয়ে গায়ে হলুদ দিয়ে ওই হলুদের বাটি নিচে নিয়ে এসে ইরার গালে, কপালে ছোঁওয়ানো হল৷ তারপর যে যার মতন ওরা স্নানঘরে ঢুকল৷ স্নান সেরে ইরা বেড়োতেই শাখারু হারু আর নাপিত নন্দ আর তার বউ সুষমা এল৷

হারু ইরার দুহাতে শাখা , পলা পরিয়ে দিল৷ সুষমা ইরার দুই পা ঘষে মেজে পরিষ্কার করে আলতা আর নেল পালিশ পরালো৷

গোবিন্দর বিদ্ধি গোবিন্দ নিজেই করল৷ মায়ের কাছে পূর্ব পুরুষের নাম যেটুকু জানত সেই নামেই পূর্ব পুরুষের উদ্দেশ্যে জল দিল৷

ওদিকে গোবিন্দর বিদ্ধির পরে ইরার বাবার হাতটা ধরে প্রাণতোষবাবু বিদ্ধি করলেন৷ ইরা বিদ্ধি শেষ হবার পর তার দুই বাবাকেই প্রণাম করল৷

বিকেল হতেই রমলার বোন লিলি ইরাকে সাজানোর জন্য ঘর বন্ধ করে দিল৷ গোধূলি লগ্নে বিয়ে৷ সময় আর বেশি নেই৷ ইরাকে লাল বেনারসী , সোনার গয়না, আর চন্দনের গাঢ় কল্কা গালে এঁকে যখন কনের সাজে ঘরে বসানো হল, তখন রানীর মতন লাগছে৷ সব মেয়েদেরই মনে হয় বিয়ের দিনে রানী লাগে৷

ওদিকে দেবতোষের কিছু বন্ধুকে দেবতোষ এই বিয়েতে নিমন্ত্রন করেছিল, যাদের সঙ্গে গোবিন্দরও বেশ ভালই আলাপ আছে৷ তারাই গোবিন্দকে ধুতি পরিয়ে, বরের সাজে সাজিয়ে দিল৷

প্রাণতোষ আর রমলাই গোবিন্দকে সোনার বোতাম আর ইরাকে একজোড়া সোনার চূড় দিয়ে আশীর্বাদ করিয়ে মিষ্টিমুখ করালো৷

সন্ধের মুখে ইরার বাড়ির লোকেরা এল৷ জেঠতুতো দাদা, বৌদি, পিসির বাড়ির সবাই , সঙ্গে নিয়ে এল কাসা, পেতলের জিনিস৷

মানুষ কতটা র্নিলজ্জ হতে পারে ইরার বাড়ির লোকেদের দেখলে বোঝা যায় ৷ বাড়ির মেয়েকে গুন্ডা তুলে নিয়ে যেতে আসে, তাকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে তার বিয়েতে এসে কতটা আয়োজন হয়েছে তার পরখ করে৷

ইরার পিসি আর বৌদি ইরার গায়ের গয়নাগুলোকে হাতে ধরে লোভাতুর চোখে  চেয়ে থাকল৷

শাঁখে ফু আর উলু দিতে দিতে বাড়ির এঁয়োরা গোবিন্দকে দোতলা থেকে একতলায় বিয়ের আসরে নিয়ে গেল৷ রমলা বরণ কুলো গোবিন্দর কপালে ছুঁয়ে দিল৷ রঙীন কাগজে মোড়া দুটো পিঁড়ি আর আলপনা আঁকা বিয়ের আসর গোবিন্দর চোখে স্বপ্নের ফুলরেনু ছড়াল৷

একটু পরেই ইরাকে একটা পিঁড়িতে বসিয়ে পান দিয়ে মুখ ঢেকে ছাদনাতলায় নিয়ে আসা হল৷ নাপিতের ছড়া আর পুরোহিতের মন্ত্রে দুজনের শুভ দৃষ্টি, মালাবদল আর সাত পাকের বন্ধনে আবদ্ধ করা হল৷

 

 

চলবে…

কৃষ্ণা গুহ রয়- উপন্যাসিক, কবি। পশ্চিমবঙ্গ


অন্যান্য পর্বগুলো পড়তে হলে

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -১ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -২ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -৩ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব -৪ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৫ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৬ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য় 

ধা রা বা হি ক  উ প ন্যা স || পর্ব – ৭ ।। ভাল থাকার বাসা ||| কৃষ্ণা গুহ র‍য়

 

 





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

আপনার মতামত দিন
সংবাদটি শেয়ার করুন