ফিচার্ড লেখালেখি

SAD | নৈশব্দের পংক্তিমালা ।। ধারাবাহিক ।। সুশীল কুমার পোদ্দার

SAD নৈশব্দের পংক্তিমালা ।। ধারাবাহিক ।। সুশীল কুমার পোদ্দার

নর্থ আমেরিকার কর্পোরেট অফিস গুলোতে মাঝে মাঝেই উচ্চ নিনাদে পরীক্ষামূলক অ্যালার্ম বেজে ওঠে যা শুনে অন্তর আত্মা শুকিয়ে যায়। যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির মতো সবাই যে যে অবস্থানে আছে সেখান থেকেই সুশৃঙ্খল ভাবে সিঁড়ি বেয়ে নেমে মিলিত হয় একটা নির্দিষ্ট স্থানে। ওখানে ছোট বেলার স্কুলে রোল কলের মতো করে নাম ডাকা হয়। আমরা কেউ হাত তুলে, কেউ কৌতুকভরে উত্তর দেই। প্রথম প্রথম বিষয়টাকে ভীষণ সিরিয়াস ভাবে নিতাম, আমার মনে হত সত্যই আগুন লেগেছে, এ সুউচ্চ ভবন থেকে কেমন করে প্রান বাঁচাবো এক মুহূর্তে সেই দুশ্চিন্তা পেয়ে বসতো। আজ কেন যেন আত্মসচেতনহীন মানুষের মতো বিষয়টা খুব উপভোগ করি। কাজের মাঝে এ অনির্ধারিত কর্মবিরতি অতিরিক্ত প্রানশক্তি এনে দেয়। মনে মনে স্বার্থপরের মতো ভাবি এমন মহরা ঘন ঘন হোলে খারাপ হয় না তবে কক্ষনো যেন যে উদ্দেশে এই পরীক্ষা তা যেন না ঘটে।

আজও এমনি এক মহরার অবতারণা হলো। বাইরে গুমরো আকাশ, শীতের কনকনে বাতাস আর সেই সাথে শীতের হালকা শৈত্যপ্রবাহ। এ অনাকঙ্খীত শৈত্যপ্রবাহের মুখোমুখি হয়ে মনে হোল প্রকৃতি যেন শীত মহরার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এমনি ভাবে মহরা দিতে দিতে একদিন হয়তো দেখবো আকাশ ভেঙ্গে পেঁজা তুলোর মত বরফ ঝরে পড়ছে অবিরাম। রাস্তার ধারে বরফের প্রাচীর, গাছের ডালে ঝুলে রয়েছে স্ফটিক স্তম্ভ।

পরিবর্তনকে মেনে নিতে আমরা সবাই দ্বিধান্বিত; আর সে পরিবর্তন যদি না হয় সুখদায়ক। শীত এলেই একটা আতঙ্ক আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তা হলো অনিশ্চয়তার আতঙ্ক। জীবনে অনিশ্চয়তা থাকবেই। কিন্তু দিনের আলোয় অনিশ্চয়তার চেয়ে রাতের অন্ধকারের অনিশ্চয়তা অনেক বেশী প্রগাঢ়।
কর্মস্থল থেকে বেড়িয়ে যখন দেখি প্রায়অন্ধকার প্রকৃতি, বিষন্ন আকাশে দুএকটা দল ছুট পাখী কুলায় ফেরে, তখন একটা পাগলকরা নিঃসঙ্গতা জড়িয়ে ধরে। মনে হয় কেউ নেই, কিছু নেই। নাছোড়বান্দা দুঃশ্চিতা গুলো বার বার মনের কোনে উঁকিঝুঁকি মারে। না চাইলেও ঐ দুশ্চিন্তার কালো মেঘগুলো ধরে ঝুলে পরি। হ্যা আমি Seasonal depression or seasonal affective disorder (SAD) কথা বলছি যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে বিষন্নতার অভিশাপ।

মহাকাল এগিয়ে চলে, সময় এগিয়ে চলে তার আপন ধারাতে। আমরাই আমাদের প্রয়োজনে মহাকালকে সময়ের নিগরে বেঁধে ফেলেছি। একটু এনার্জি সাশ্রয় করতে যেয়ে গরম কালে এক ঘণ্টা সময় এগিয়ে আর শীতে এক ঘণ্টা সময় আমরাই আমাদের প্রয়োজনে পিছিয়ে দিয়েছি। এনার্জি কতটুকু সাশ্রয় হয়েছে আজ তা এক বিতর্কের বিষয় (কেউ কেউ বলেন ডে লাইট সেভিন্সের সাথে এনার্জি সেভিন্সের আজ কোন সম্পর্কই নেই)। হয়তো একসময় সাশ্রয় হতো যখন কয়লা ভিত্তিক জ্বালানী ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কয়লার গৃহস্থালী ব্যবহার একঘণ্টা সীমিত কোরে ঐ উদ্বৃত্ত কয়লা যুদ্ধ খাতে ব্যবহার করার জন্য আইন পাশ করা হয় আজ থেকে প্রায় একশো বছর আগে। আজও সেই পরম্পরা মেনে আমরা কানাডার প্রায় সর্বত্র (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) ঘড়ীর কাটা পরিবর্তন করি। সুইডিশ এক সমীক্ষায় দেখা গেছে গ্রীস্ম কালের এই এক ঘণ্টা সময় এগিয়ে যাওয়াতে যে ঘুমের স্বল্পতা সৃষ্টি হয় তাতে হার্ট এটাকের তীব্রতা বেড়ে যায়, সাথে যোগ হয় অবসাদ, গাড়ী দুর্ঘটনা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ইত্যাদি। আর শীতের সময় এক ঘণ্টা বর্ধিত সময়ে ঘুমের স্বল্পতা পূর্ণ হলেও জীবনে যোগ হয় SAD যা কিনা হার্ট এটাকের চাইতেও ভয়াবহ।

SAD এর কথা মন হতেই আমার এক বন্ধুর কথা মনে পরে। উচ্চ শিক্ষার উচ্চাশা নিয়ে ও পাড়ি জমিয়েছিল নিশিথ সূর্যের দেশে। প্রথম প্রথম দিনের বেলায় অন্ধকারে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ইউনিভার্সিটি যাওয়া আসা, রৌদ্রজ্বল রাতের বেলা পর্দা টেনে ঘুমানো কৌতুক ভরে উপভোগ করলেও ও ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয় বিষন্নতার মহা ব্যাধিতে। সে ব্যাধি ওকে প্রায়ই আত্মহননে প্ররোচনা দিত। পরিবার নিয়ে ও প্রায় পালিয়ে আসে কানাডাতে। ওকে এখোনো নিয়মিত ঔষধ খেতে হয় বিশেষ করে শীতের এ মৌসুমে।

জীবনে ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রচুর আলো। শীতকালের ছয় মাসের প্রলম্বিত অন্ধকারের অভিশাপ থেকে বাচতে নরওয়ের রিকানে পাহাড়ের উপর বসান হয়েছে বিশাল আকৃতির আয়না। সে আয়না থেকে যখন ঠিকরে আসে সোনালী আলো, বিশাল প্রাপ্তির আনন্দে যখন উচ্ছসিত হয় নগরবাসী তখন নিজকে সৌভাগ্যবান মনে হয়। প্রকৃতির অফুরন্ত সম্পদ নিয়ে জন্ম নিয়েছি এমন এক দেশে যে দেশে ভুবন ভরা আলো, যে দেশে আলোর স্রোতে পাল তোলে হাজার প্রজাপতি, পাতায় পাতায় হাসি ও ভাই পুলক রাশি রাশি..

SADনৈশব্দের পংক্তিমালা ।। ধারাবাহিক ।। সুশীল কুমার পোদ্দার , ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী ।  ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স,  মাস্টার্স,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,  ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন