ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস-এর দু’টি অণুগল্প

আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস-এর দু’টি অণুগল্প


প্রিয় বান্দা

দুপুরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বাড়ি ফিরল রহমত।যেই বাড়ি ফিরল অমনি তার ছাগ গুলো তাকে দেখে ভ‍্যা ভ‍্যা চিৎকার শুরু করে দিল।রহমত তার গা থেকে তখন তাড়াতাড়ি করে পাঞ্জাবিটা খুলে দেওয়ালের হুকে ঝুলিয়ে রাখল ও মাথার টুপিটা খুলে পাঞ্জাবির পকেটে ভরে রাখল।একটু পরেই তো আসরের নামাজ হবে তখন আবার দরকার হবে।টুপিটা রেখে ছাগ গুলোকে নিয়ে সে এবার চরাতে চলে গেল।খুঁটি থেকে প্রত‍্যেকটার গলা খুলে দিয়ে।কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখল,মাঠে ছাগ চরানোর মতো কোন জায়গা নেই,একটাও জমি ফাঁকা পড়ে নেই, সব জমিতেই ফসল।ফসল আর ফসল,শুধু ফসল।রহমত তখন মাঠের এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল,মাঠে একটাও লোক নেই। অমনি সে তার ছাগ গুলোকে একটা সর্ষেক্ষেতের ভিতর ভরে দিল,”টপাটপ কইর‍্যা খাইয়‍্যু প‍্যাট ভইর‍্যা লে,না হলে কোন লোক আইস‍্যাখ দেখ‍্যাট ফেললে সব্বনাশ হইয়‍্যাঁ যাবে।আমি আলে দাঁড়ানু।”বলে সে আলে দাঁড়িয়ে লোক দেখতে লাগল।কোন লোক আসতে দেখলেই ছাগ গুলোকে সে ক্ষেতের ভিতর থেকে তাড়াতাড়ি করে খেদিয়ে বের করে আনবে,যাতে তার কোন দোষ না হয় বা তাকে কোন দোষ দিতে না পারে।

অত:পর কোন লোক আসার আগেই রহমত তার ছাগ গুলোকে সর্ষেক্ষেতের ভিতর থেকে বের করে নিল।তার চারটে ছাগের চারটেরই পেট ভরেছে,খুব পেট ভরেছে।ও ছাগ গুলো নিয়ে সে বাড়ি চলে এল।এসে পাঞ্জাবিটা গায়ে গলিয়ে নিয়ে টুপিটা মাথায় পরে নিয়ে মসজিদ সোজা হাঁটতে লাগল।এক্ষুনি আসরের নামাজের আজান হবে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্ত নামাজও সে কোনদিন কামাই করে নি।এরাই হল,প্রিয় বান্দা,সত‍্যিকারের ইমানদার,ভালো মানুষ।
————-

উপকার


অনুরাধার স্বামী দেবব্রত ইহলোক ত‍্যাগ করে চলে যাওয়ার পর স্বামীর চায়ের দোকানটা অনুরাধা এখন নিজেই চালায়। কিন্তু দোকানের ছাউনি আর বেড়ার যা হাল তাতে জোরে একটু বাতাস বইলেই সব শুদ্ধ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।তখন সে চা বানাবে কোথায় বসে?তাই,চিন্তা হল অনুরাধার।অথচ নতুন ছাউনি দেওয়ার মতো ক্ষমতাও তার নেই।দিতে গেলেই তো বাঁশ কিনতে হবে।একখানা করে বাঁশের দাম দুশো করে টাকা।কম করে দশ-বারো খানা বাঁশ তো লাগবেই।তারমানে বাঁশেই লেগে যাবে পুরো দু’হাজার টাকা ও তারও বেশি।আরও অন‍্যান‍্য খরচ তো আছেই।সব মিলিয়ে তাও তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো ব‍্যাপার। গরিব অনুরাধা অত টাকা পাবে কোথায়? দোকান চালিয়ে যা রোজগার হয় কিনে খেতেই সব ফুরিয়ে যায়।জল বাদে সব কেনা না!তাছাড়া আজকাল প্রতিটা জিনিসের যা দাম!যে কারণে কিছু কিছু করে জমানোর ইচ্ছা থাকলেও অনুরাধা পারেনা।তাহলে সে কি নতুন ছাউনি দিতে পারবে না?দোকান কি শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়বে?
দোকানে চা খেতে আসা গোবিন্দ,নিতাই এদের বিরাট বিরাট বাঁশের ঝাড় রয়েছে। প্রতি বছর এরা অনেক অনেক টাকার বাঁশ বেচে।সে না হয় এদের কাছেই বাঁশ চাইবে। অতএব অনুরাধা প্রথমে গোবিন্দকে বলল—-গোবিন্দদা!
—–বলো।
—–তোমার কাছে আমি একটা জিনিস চাইব,দেবে?
—–কী জিনিস?
—–আগে দেবে কি বলো?যদি দিতে রাজি হও তবেই বলব,না হলে বলব না।
—–আমার সামর্থ্যের মধ্যে হলে অবশ্যই দেবো।বলো,কী জিনিস।
—–আমাকে তোমার ঝাড়ের কয়েক খানা বাঁশ দিতে হবে।দোকানটা ঠিক করব তো পয়সার অভাবে বাঁশ কিনতে পারছি না।
—–ক’খানা বাঁশ লাগবে?
—–খান দশেক তো লাগবেই।
—–ঠিক আছে,দেব।কবে লাগবে?
—–দু-তিন দিনের মধ্যে।
—–যেদিন লাগবে ঝাড় থেকে বেছে বেছে পাকা বাঁশ কেটে নিও।
গোবিন্দর এতখানি উপকার অনুরাধা জীবনে কখনও ভুলবে না।

 


 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

সংবাদটি শেয়ার করুন