ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

বারান্দা ।।। কৃষ্ণা গুহ রায়

বারান্দা ।।। কৃষ্ণা গুহ রায়

নীলার সঙ্গে সুজিতের সম্পর্কটা নয় নয় করে ছয় মাস হয়ে গেল। ওদের আলাপটা হয়েছিল ফাগুন রাঙানো বসন্তে কবিতা গানের আড্ডায়।  সেদিনই মোবাইল নাম্বার দেওয়া নেওয়া শুরু। আর হোয়াটসঅ্যাপে  ছবিতে  গুড মর্নিং আর গুড নাইট।

প্রথম প্রথম এটা দিয়ে শুরু হলেও পরের সম্পর্কটা একটু অন্য দিকে মোড় নিল। সুজিত একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের টপ মোস্ট এডমিনদের একজন। সাজানো বাড়ি ঘর। এসি গাড়ি, ঘরে সুন্দরী উচ্চশিক্ষিতা বউ। একমাত্র কন্যা সন্তান। ওদিকে নীলা বিবাহবিচ্ছেদ করা মহিলা।  একটা ছেলে আছে। নীলা, সুজিত দুজনেই সংস্কৃতিমনস্ক বলে ওদের বন্ধুত্ব হতে খুব একটা বেশি সময় লাগল না।

সুজিতের বিজি সিডিউল, তার মধ্যেও যতটা পারে সে নীলার সঙ্গে কমিউনিকেশন রেখেই চলে। প্রতিমুহূর্তে আশ্বাস দেয়, আমি তোর সঙ্গে আছি ,তোর পাশে আছি ,কোনও প্রবলেম হলে বলবি। কিন্তু নীলা ঘরপোড়া গরু, তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। সে সিঙ্গেল লেডি। পুরুষদের সেই অর্থে সে কোনও বিশ্বাস করে না। বিশেষ করে বিবাহিত পুরুষদের। কারণ সে জানে, বিবাহিত পুরুষরা যতই বাইরের নারীর প্রতি আকৃষ্ট হোক না কেন? পরিস্থিতি যদি পারমিট না করে তাহলে তখন তারা ঘর সামলাতে অর্থাৎ নিজের বউকে সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে যায়। এরকম বেশ কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন যে নীলা হয়নি তা নয়, নিজের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও, বন্ধু-বান্ধবের ক্ষেত্রেও দেখেছে। তাই প্রথম প্রথম সুজিতকে অতটা পাত্তা না দিলেও সুজিতের ব্যবহার পরের দিকে  নীলাকে অনেকটাই প্রভাবিত করেছিল। বিশেষ করে সুজিত যেদিন কফি হাউসে নীলাকে বলেছিল  যে ওর মায়ের সঙ্গে ওর বউয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েনের জন্য, সুজিতের সঙ্গে ওর বউয়ের সাংসারিক প্রয়োজনের সম্পর্কটা শুধু বাঁচিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছু নয়। নীলা কথাগুলো শুনে ছিল কিন্তু কোনও উত্তর দেয়নি। কারণ ও জানে সময় সব কথা বলে। রোজই  ফোনে বাক্যালাপ, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ, মাঝেমধ্যে দেখা করা নিয়ে দুজনের সম্পর্কটা বেশ ভালই চলছিল।

কিন্তু নীলা ক্রমশঃ বুঝতে পারছিল সুজিতের আচরণের মধ্যে কোথায় যেন একটা ফাঁকা ফাঁকা বিষয়৷ আর মুখে ও যতটা নীলার প্রতি ডেডিকেশন দেখায় কাজের ক্ষেত্রে ততটা নয়৷

এর মধ্যে একদিন নীলা ওর এলআইসির কাজে ডালহৌসি গেল৷ আগে থেকেই কথা ছিল সুজিতও ওর সঙ্গে যাবে৷ অসহ্য গরমে গলদঘর্ম হয়ে পাবলিক বাসে নীলাকে নিয়ে সুজিত গিয়েছিল ডালহৌসিতে৷ সুজিত প্রায়ই গল্প করে ওর ক্লায়েন্টরা ওকে অনেক কিছুই গিফ্ট দেয়৷ গিফ্টের পরিমান এতই যে এখন আর ওর ঘরে রাখার জায়গা নেই৷ সেদিনও বাসে সুজিত বলল, জানিস নীলা গতকাল আমার এক ক্লায়েন্ট আমাকে একটা টোস্টার গিফ্ট করল৷ আমার বউতো দেখে বলে আর এসব আনবে না৷ নীলা চুপ করে সব শুনল৷

সেদিনের গরমে আর বাসের ঝাকুনিতে নীলার সারা শরীরে অসহ্য ব্যাথা শুরু হল, তার সঙ্গে জ্বর জ্বর ভাব৷ রাতে শুয়ে নীলা চিন্তা করল, এই যে সুজিত ওকে পাবলিক বাসে করে নিয়ে গেল, ওর বউ হলে কি সেটা পারত? তখন ঠিক এসি গাড়ি চড়েই ওর বউ যেত৷ ড্রাইভার জানবে বলে না হয় বাড়ির গাড়ি নিতে পারে নি, কমপক্ষে ওলা বা উবের করে তো ওরা যেতেই পারতো?

তাহলে তো আর এতটা কষ্ট হত না৷ আর এই যে কথায় কথায় সুজিত বলে ও এত গিফ্ট পায়, ওর ঘরে রাখার জায়গা নেই৷ কই কোনওদিন সুজিত তো বলেনি আমি এই জিনিসটা পেয়েছি, তোর আছে কি না? তোর যদি না থাকে তুই নিয়ে নে৷

নীলা মনে মনে হাসল৷ ও বেশ বুঝল এই ধরনের সম্পর্কগুলো আসলে বারান্দার মতন৷ বারান্দায় কিছুক্ষনের জন্য দাড়িয়ে বা বসে খোলা আকাশ বা সবুজ মাঠ উপভোগ করতেই ভালো লাগে৷ সবশেষে মনের আরামটা কিন্তু ঘরেই থাকে৷ তাই ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বারান্দা যেমন বাইরেই থাকে, এই সম্পর্কগুলোও বারান্দার মতন নির্জন একলা হয়ে বাইরেই থেকে যায়৷

কৃষ্ণা গুহ রায় একজন সাহিত্যকর্মী৷ নিবাস -পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ৷

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন